Advertisement
E-Paper

কোনও ভয় নেই, আমরা তো আছি, আশ্বাস দিচ্ছেন কানাই-মসিউররা

২০১০ সালে দোকান পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল কানাই গুপ্তের। বহু টাকার লোকসান হয়। অনেক দিন পর্যন্ত দোকান খুলতে পারেননি। এ বার এলাকার অনেকে মিলে তাঁকে ভরসা দিচ্ছেন, ‘‘দোকান খোলা রাখুন! ভয় নেই, আমরা তো আছি।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ০৩:১০
স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। দেগঙ্গায় বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। দেগঙ্গায় বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

সিঁদুরে মেঘ দেখে আগাম ভয় পাওয়া নয়। বাস্তবিকই অশান্তির ভরকেন্দ্রের খুব কাছাকাছি তাঁরা। কিন্তু কানাই গুপ্ত, মসিউর রহমান বিশ্বাসরা ঠিক করে নিয়েছেন, এ বারে শুরু থেকেই প্রতিরোধ গড়তে হবে।

২০১০ সালে শ’য়ে শ’য়ে দোকান পুড়েছিল। দেগঙ্গা বাজার সে বার কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এখন বসিরহাট-বাদুড়িয়া-স্বরূপনগরে যখন অশান্তি শুরু হয়েছে, তখন দেগঙ্গার বহু মানুষই শপথ নিচ্ছেন, তাঁদের এলাকায় এই আগুন ছড়াতে দেওয়া যাবে না। মসিউর বলেন, ‘‘সে বার বাইরে থেকে প্রচুর লোক ঢুকে সব তছনছ করে গিয়েছিল। এ বার আমরা সকলে মিলে বাজার পাহারা দিচ্ছি। দেগঙ্গায় ঢোকার পথগুলিতেও নজর রাখা হচ্ছে, যাতে হামলাকারীরা ধারেকাছে ঘেঁষতে না পারে।’’

২০১০ সালে দোকান পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল কানাই গুপ্তের। বহু টাকার লোকসান হয়। অনেক দিন পর্যন্ত দোকান খুলতে পারেননি। এ বার এলাকার অনেকে মিলে তাঁকে ভরসা দিচ্ছেন, ‘‘দোকান খোলা রাখুন! ভয় নেই, আমরা তো আছি।’’ কানাইবাবুর কথায়, ‘‘প্রথমে যখন শুনলাম, বসিরহাট-বাদুড়িয়ায় গোলমাল পাকিয়েছে, ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু সকলে মিলে সজাগ থাকায় গোলমাল ছড়ায়নি।’’

গোপাল কাপুড়িয়া, আকবর আলিদেরও তো দোকান আছে দেগঙ্গা বাজারে। তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন আগের বার। এ বার তাঁরাও দোকানপাট খোলা রেখেছেন। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের বোঝাচ্ছেন, অশান্তি ছড়াতে দেওয়া যাবে না। তাতে সকলের ক্ষতি।

অশান্তি রুখতে এককাট্টা কদম্বগাছিও। শ’দুয়েক যুবক হাতে লাঠি, টর্চ নিয়ে ঘুরছেন এলাকায়। মাথায় হেলমেট। আসাদুজ্জামান, নিজামুল কবির, গৌতম পাল, সুদর্শন দেব-রা জানালেন, এলাকায় অনেক মন্দির-মসজিদ আছে। সকলে মিলে পাহারা দিচ্ছেন। এলাকায় রগচটা বলে পরিচিত লোকজনকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানো হচ্ছে, বেগড়বাই করলে পুলিশকে খবর দেওয়া হবে। কদম্বগাছি হাইস্কুলের যে সব শিক্ষক-শিক্ষিকা, পড়ুয়া স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছিলেন, তাঁদের সাহস জুগিয়েছেন ওঁরাই। শিক্ষিকা রমা মণ্ডল জানান, আসাদুজ্জামানরাই অটো জোগাড় করে তাঁকে স্কুলে আনার ব্যবস্থা করেছেন। নবম শ্রেণির ছাত্র তথাগত পালকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছিলেন বাবা-মা। তাকে বাড়ি থেকে ডেকে এনেছে যুবকের দল। ব্যাঙ্ক-সরকারি অফিস-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে বলে এসেছে, নির্ভয়ে কাজ করুন। অফিসের সামনে লাঠি হাতে নজরদারি চালাচ্ছেন আরিফ মোল্লা, নিজামুদ্দিনরা।

কদম্বগাছির আসাদুজ্জামান আর গৌতম হোন বা দেগঙ্গার গোপাল আর মসিউর। ওঁদের সকলের একটাই কথা, ‘‘এত বছর পাশাপাশি আছি। কেউ জোর করে বিভেদ তৈরি করবে, সেটা হতে দেব না।’’

Deganga Baduria Clash Communal Clash Baduria বসিরহাট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy