Advertisement
E-Paper

নির্যাতিতার জন্মদিনে তপ্ত আরজি কর! সন্তানহারা দম্পতিও পথে নামলেন মহানগরের মৌনী মিছিলে

আরজি কর কাণ্ডের ছ’মাস পূর্তি হল রবিবার। ঘটনাচক্রে রবিবারই নির্যাতিতার জন্মদিন। এই দিনে একগুচ্ছ কর্মসূচির কথা আগেই ঘোষিত হয়েছিল।

কলেজ স্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে বিধান সরণি ধরে এই মৌনী মিছিল পৌঁছয় আরজি কর হাসপাতালের গেটে।

কলেজ স্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে বিধান সরণি ধরে এই মৌনী মিছিল পৌঁছয় আরজি কর হাসপাতালের গেটে। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৬
Share
Save

নির্যাতিতাকে স্মরণ করার সবচেয়ে বড় আয়োজনটা হয়েছিল মধ্য কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার থেকে মৌনী মিছিলে। কিন্তু আরজি কর হাসপাতালের গেটে পৌঁছে আর মৌনী রইল না সেই মিছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যারিকেডে বাধা পেয়ে বচসায় জড়ালেন মিছিলের উদ্যোক্তারা। পুলিশের সঙ্গেও বাদানুবাদ চলল। নির্যাতিতার স্মৃতিতে নিখরচায় স্বাস্থ্য পরিষেবা শিবির আয়োজিত হয়েছে পানিহাটিতে তাঁর নিজের পাড়ায়। প্রতীকী অনশন পালিত হয়েছে মেদিনীপুরে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আরজি করের নির্যাতিতার জন্মদিনে তাঁর জন্য ‘তর্পণ’ করলেন মহাকুম্ভে। সন্তানহারা দম্পতি তাঁদের খুন হওয়া কন্যার জন্মদিনে আবারও বললেন, ‘‘বিচারের অপেক্ষায় রয়েছি এখনও। সব দোষীর শাস্তি হোক।’’

পানিহাটিতে নির্যাতিতা স্মরণে স্বাস্থ্য শিবির

আরজি কর কাণ্ডের ছ’মাস পূর্ণ হল রবিবার। ঘটনাচক্রে রবিবারই নির্যাতিতার জন্মদিন। এই দিনে একগুচ্ছ কর্মসূচির কথা আগেই ঘোষিত হয়েছিল। নির্যাতিতা পানিহাটিতে যে পাড়ায় থাকতেন, সেখানে সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা শিবির। পরিষেবা দিতে হাজির ছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা কিঞ্জল নন্দ, দেবাশিস হালদার, স্নিগ্ধা হাজরারা। আরজি কর চত্বরেও সেখানকার চিকিৎসক ও পড়ুয়ারা নির্যাতিতাকে স্মরণ করেন। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতার মা-বাবাও।

পানিহাটিতে নির্যাতিতা স্মরণে স্বাস্থ্য শিবির।

পানিহাটিতে নির্যাতিতা স্মরণে স্বাস্থ্য শিবির। — নিজস্ব চিত্র।

কলকাতায় মিছিল

কলকাতায় সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ছিল মৌনী মিছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের মেন গেট থেকে বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ মিছিল যাত্রা শুরু করে আরজি করের পথে। মিছিলে কোনও স্লোগান ছিল না। ছিল নির্যাতিতার জন্য ‘ন্যায়বিচার’ চেয়ে ব্যানার। চিকিৎসক, শিক্ষক-অধ্যাপক, সাধারণ জনতা তো বটেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকেও মিছিলে দেখা গিয়েছে। রাজনীতিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় উপস্থিতি ছিল কংগ্রেস নেতাদের। মায়া ঘোষ, অমিতাভ চক্রবর্তী, সৌম্য আইচ রায়, সুমন রায়চৌধুরীদের মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছে রবিবার। সিপিএম নেত্রী মধুজা সেনরায় বা আরএসপির প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ মনোজ ভট্টাচার্যও মিছিলে পা মেলান।

মিছিল শ্যামবাজারে পৌঁছনোর একটু আগে তাতে যোগ দেয় নির্যাতিতার পরিবার। সেখানেই নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘তদন্তে সব সত্যি উঠে আসেনি আমরা জানি। যত দিন না আমাদের মেয়ে প্রকৃত বিচার পাচ্ছে, তত দিন আমাদের লড়াই চলবে।’’ নির্যাতিতার মা-বাবা আরজি করের পথে আর যাননি। শ্যামবাজারের কাছ থেকেই তাঁরা ফিরে যান।

মিছিল বিধান সরণি ধরে শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় ঘুরে পৌঁছয় আরজি কর হাসপাতালের গেটে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আরজি কর চত্বরের নিরাপত্তা এখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে। ১৪ অগাস্ট রাতে আচমকা হামলায় যে ভাবে আরজি কর তছনছ করা হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই বাহিনী এ দিন কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। গোটা মিছিল আরজি কর চত্বরে ঢুকতে চেয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালের নিরাপত্তার স্বার্থে বাহিনী এত বহিরাগতকে একসঙ্গে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতে দিতে রাজি হয়নি। আগে থেকেই ব্যারিকেড করে আটকে দেওয়া হয়েছিল প্রবেশ পথ। মিছিল আরজি কর চত্বরে ঢুকতে বাধা পাওয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে উত্তপ্ত বাদানুবাদে জড়ান মিছিলের উদ্যোক্তাদের একাংশ। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি বদলায়নি। মিছিল নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে ঢোকার অনুমতি কেন্দ্রীয় বাহিনী দেয়নি। শেষ পর্যন্ত মিছিলের দুই প্রতিনিধি গিয়ে নির্যাতিতার প্রতীকী মূর্তিতে মাল্যদান করেন।

সপরিবার কুম্ভস্নান সেরে রবিবার মহাকুম্ভস্থলেই নির্যাতিতার স্মৃতিতে আমগাছ রোপণ করেছেন সুকান্ত মজুমদার।

সপরিবার কুম্ভস্নান সেরে রবিবার মহাকুম্ভস্থলেই নির্যাতিতার স্মৃতিতে আমগাছ রোপণ করেছেন সুকান্ত মজুমদার। — নিজস্ব চিত্র।

মহাকুম্ভ

প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে রবিবার নির্যাতিতাকে স্মরণ করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত। সপরিবার গিয়েছিলেন কুম্ভস্নানে। স্ত্রী এবং দুই কন্যাকে নিয়ে সঙ্গমে স্নান করার সময়ে অভয়ার উদ্দেশে তর্পণ করেন তিনি। স্নান সেরে সঙ্গমতটে সুকান্ত বৃক্ষরোপণ করেন নির্যাতিতার স্মৃতিতে। সুকান্ত বলেন, ‘‘আরজি করের নির্যাতিতাও তো আমাদেরই মেয়ে। সঙ্গমে দাঁড়িয়েই তার জন্য আজ আমি তর্পণ করেছি। আর স্নান শেষে তাঁর স্মৃতিতে আমরা একটা আমগাছ লাগিয়েছি।’’

মেদিনীপুরে অভয়া মঞ্চের তরফে প্রতীকী অনশন কর্মসূচির দৃশ্য।

মেদিনীপুরে অভয়া মঞ্চের তরফে প্রতীকী অনশন কর্মসূচির দৃশ্য। — নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুর

মেদিনীপুর শহরে রবিবার নির্যাতিতার জন্য ‘ন্যায়’ চেয়ে প্রতীকী অনশন করে অভয়া মঞ্চ নামে একটি সংগঠন। ৩৩ জন পড়ুয়ার প্রতীকী অনশনের পাশাপাশি ছ’হাজার ফুলের চারাও বিতরণ করা হয়। মঞ্চের তরফে সুদীপকুমার খাঁড়া বলেন, ‘‘আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মা জানিয়েছেন যে, তিনি ফুল ভালবাসতেন, ফুলগাছের পরিচর্যা করতেও ভালবাসতেন। তাই ওঁর জন্মদিনে ফুলের চারা বিতরণ করা হচ্ছে।’’ প্রতীকী অনশন ও ফুলের চারা বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য শিবিরেরও আয়োজন হয় মেদিনীপুরে।

RG Kar Rape and Murder Case West Bengal Politics Silent Protest Kolkata Sukanta Majumdar Tree Plantation Mahakumbh 2025

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}