তাপস পাল
বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার মামলায় ধৃত প্রভাবশালীদের প্রায় সকলেই এখন জামিনে মুক্ত। ব্যতিক্রম শুধু তিনি। আজ, শনিবার বন্দিজীবনের এক বছর পূর্ণ করলেন তিনি।
তিনি রুপোলি পর্দার নায়ক ও তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। খাতায়-কলমে জেলে থাকলেও আপাতত তিনি ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে ভর্তি। পাশে শুধু স্ত্রী নন্দিনী।
ভুবনেশ্বর থেকে তাপসবাবুর আইনজীবী মিলন কানুনগো শুক্রবার জানান, কটক হাইকোর্টে জামিনের আবেদন নিয়ে দীর্ঘ শুনানি হয়েছে। শীতের ছুটির পরে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রায় দেবেন বিচারপতি। ‘‘জানি না কবে ও ছাড়া পাবে। ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাই। নইলে ওকে বাঁচাতে পারব না,’’ বেশ উদ্বিগ্ন শোনাল তাপস-ঘরনি নন্দিনীর স্বর।
২০১৬-র ৩০ ডিসেম্বর সল্টলেকে সিবিআইয়ের দফতরে চার ঘণ্টা জেরার পরে গ্রেফতার করা হয় ৫৮ বছরের তাপসকে। সেই রাতেই তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ভুবনেশ্বরে। তখনও সঙ্গে ছিলেন নন্দিনী। এই এক বছরে খুব জরুরি কারণে দু’-এক বার স্বামীকে ছেড়ে কলকাতায় এসেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ১০ দিন হবে।
আইনজীবী কানুনগো জানান, গত এপ্রিলে নায়কের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিবিআই। তার আগে তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ হয়েছে দু’বার। তার পরেই জুলাইয়ে কটক হাইকোর্টে আবেদন। কানুনগোর কথায়, ‘‘তাপসবাবু অসুস্থ। জামিনের আবেদনে বলা হয়েছে, তিনি নামী অভিনেতা। জামিন পেলে তো পালিয়ে যাবেন না। সিবিআই কোনও কারণে ডাকলে আসবেন। ওই আইনজীবীর প্রশ্ন, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই তাঁর মক্কেলকে এক বছর ধরে জেলে থাকতে হবে কেন?
অন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জামিন পেলেও তাপসের ক্ষেত্রে অন্যথা হচ্ছে কেন? সিবিআইয়ের যুক্তি, অন্যদের কেউ অবৈধ লগ্নি সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন না। তাপস সাংসদ হয়েও রোজ ভ্যালির ডিরেক্টর হিসেবে নিয়মিত বেতন পেতেন। অভিযোগ, সাংসদ প্যাডে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে রাজ্যের অন্যান্য লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও রোজ ভ্যালির নাম করেননি। উল্টে সাংসদ-পদ ব্যবহার করে রোজ ভ্যালিকে নানান সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। সিবিআইয়ের দাবি, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে রোজ ভ্যালির যোগাযোগের মাধ্যম ছিলেন তাপস। এমন এক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে মুক্তি দিলে তিনি বাইরে বেরিয়ে সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। সেই কারণেই বারবার তাঁর জামিনের বিরোধিতা করা হচ্ছে।
নন্দিনী জানান, ১৯৯৫-এ পাণ্ডুয়া থেকে ফেরার পথে গাড়ি-দুর্ঘটনায় আহত তাপস কোমায় ছিলেন ২১ দিন। বিগড়ে যায় শরীরে কলকব্জা। তারও পরে পড়ে গিয়ে কলার বোন ভেঙেছে। ডায়াবিটিস, রক্তচাপ, কিডনি, লিভারের সমস্যা আছে। নিজের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে, নিয়ম মেনে, ফিজিওথেরাপি নিয়ে চলতে হচ্ছে ওকে। ‘‘২০১৪ সালে নাকাশিপাড়ায় সেই বেফাঁস মন্তব্যের পরে অনুতপ্ত ছিল ও। আমরা সমর্থন করিনি। ৪ জুলাইয়ের সেই ঘটনার পরে ১৮ অগস্ট মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। এখনও সেই মানসিক ধাক্কা বয়ে বেড়ায় ও,’’ বললেন নন্দিনী।
গ্রেফতারের পরে প্রথম কয়েক মাস জেলে ছিলেন তাপস। মার্চ থেকে আছেন হাসপাতালে। ৩১ ডিসেম্বর একমাত্র মেয়ে সোহিনীর জন্মদিন। তিনি মুম্বইয়ে অভিনয় করছেন। আসতে চেয়েছিলেন বাবার কাছে। তাপসই বারণ করেছেন। তৃণমূলের তরফে অনেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তুলনায় অভিনয়জগতের সঙ্গে যোগাযোগ কম। দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহকর্মী অভিনেত্রী শতাব্দী রায় বলেন, ‘‘যোগাযোগ আছে তাপসের স্ত্রীর সঙ্গে। কথা হয়েছে। আমরা চাই, ও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসুক।’’
‘‘যাঁকে কখনও বন্ধু বলে মনে করিনি, এই এক বছরে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন। কাছের মানুষ বলে যাঁদের ভেবেছি, তাঁদের অনেকে দূরে সরে গিয়েছেন। শক্ত সময়ে মানুষ চেনা যায়,’’ উপলব্ধি নন্দিনীর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy