কাজের ‘চাপে’র অভিযোগে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের সামনে সোমবারের পরে মঙ্গলবারও অবস্থান-বিক্ষোভ চলল বুথ লেভল অফিসারদের (বিএলও) একটি সংগঠনের। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) জেরে ‘আতঙ্কে’ মৃত্যু, বিএলও-দের অসুস্থ হওয়ার অভিযোগও অব্যাহত। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা দাবি, চাপ নেই বিএলও-দের।
‘বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটি’র তরফে সিইও দফতরের সামনে মঞ্চ বেঁধে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। আন্দোলনকারীরা সিইও মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা করার দাবিতে অনড় ছিলেন। সিইও দফতর পরিস্থিতির কথা জাতীয় নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছে। সূত্রের দাবি, এ-ও বলা হয়েছে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরাতে পদক্ষেপ করেনি। ফলে সিইও দফতরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে। অবশেষে সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার তিন বিএলও-র সঙ্গে দেখা করেছেন সিইও। বাকি আন্দোলনকারীরা অতিরিক্ত সিইও-র কাছে দাবিপত্র দিয়ে অবস্থান তুলে নিয়েছেন।
কাজের ‘চাপে’ এ দিন বীরভূমের দুবরাজপুরে জগন্নাথ গড়াই এবং বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে সবিতা সর্দার নামে দুই বিএলও-র অসুস্থ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সবিতা আদতে নদিয়ার বাসিন্দা, কর্মসূত্রে পাত্রসায়রে থাকেন। ‘বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটি’র সদস্য অনিত ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “বিএলও হিসাবে ওঁর নিয়োগ অপরিকল্পিত। এলাকা চেনেন না। তবুও প্রায় ৯০% তথ্য আপলোড করেছেন।” পাত্রসায়রের বিডিও সুভাষ বিশ্বাস বলেছেন, “বিএলও স্থিতিশীল রয়েছেন।” এসআইআর-এর কাজ চলাকালীন ফোন ধরতে না-পারায় বীরভূমের দুবরাজপুরের কেশব ঘোষ নামে এক বিএলও-কে মারধরের অভিযোগে রফিক ওরফে কালা খান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এ দিন বর্ধমানে পাল্টা দাবি করেছেন, “এক লক্ষ টাকা করে নেওয়ার ইচ্ছা থাকলে বিএলও হয়ে অসুস্থ হয়ে শুয়ে পড়ুন! কোনও বিএলও চাপে নেই।” আন্দোলন প্রসঙ্গে বিরোধী নেতার সংযোজন, “ওই ক’জন যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা বিএলও না কি? ভাইপোর সঙ্গে ছবি দেখাব? চাপ, অসহযোগিতা থাকলে সেটা মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আছে।” পরে বীরভূমের সাঁইথিয়ায় নাম না-করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেছেন, “সিইও-কে ভয় দেখাচ্ছেন! কিছু করতে পারবেন না।”
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাসিন্দা তথা দু’বারের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য সুষমা মণ্ডল (৬১) নামে এক জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ‘এসআইআর-আতঙ্কে’র অভিযোগ উঠেছে। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার ওই মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের যদিও দাবি, মৃত্যুর কারণ এসআইআর-আতঙ্ক। তৃণমূল সাংসদ জুন মালিয়ারও দাবি, “এসআইআর সংক্রান্ত কাজ করতে অন্তত আড়াই বছর লাগার কথা। কিন্তু যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি শক্তিশালী নয়, সেখানে ভোটের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি তা করা হচ্ছে। মানুষ আতঙ্কিত। বিএলও-রা অমানুষিক পরিশ্রমে বিপর্যস্ত।” তবে উত্তরপাড়ায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “এসআইআর ধারাবাহিক প্রশাসনিক কাজ। কমিশন সময় মতো তা করেনি। ন্যূনতম সময়ও দেয়নি। তাঁরা তৃণমূল না বিজেপি, কার সুবিধা করতে চাইছেন, সেটাই বড় প্রশ্ন।”
স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটি’র সদস্যদের বাদ দিয়ে ভোট সংক্রান্ত কাজ পরিচালনার দাবিতে দেশের নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি দিয়েছেন বিরোধী নেতা শুভেন্দু। সংগঠনের তিন সদস্যের বক্তৃতার অংশ শুনিয়ে বিরোধী নেতা জানিয়েছেন, তা সিইসি-র কাছে পাঠানো হয়েছে। শুভেন্দুর দাবি, “সংগঠনটির নিয়মে রয়েছে, এর মধ্যে থেকে রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করা যাবে না। কিন্তু দিঘায় সংগঠনের মহিলা পুলিশদের উদ্যোগে দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলনে ওই তিন সদস্য চতুর্থ বারের জন্য মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চান বলেছেন।”
এসআইআর-আবহে রাজ্যে অনুপ্রবেশকারী, বাংলাদেশি ‘থাকা’র যে প্রশ্নটি বার বার উঠছে, লালগোলায় গিয়ে তা নিয়ে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেছেন, “বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রকের অধীনে রয়েছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)