Advertisement
E-Paper

গোমাংস-মন্তব্য নিয়ে ‘বিতর্কিত’ অভিনেত্রী সঙ্ঘের মঞ্চে, ক্ষোভের আঁচ সঙ্ঘ পরিবারে, ‘গোসেবা’র ছবি দিলেন নিরামিষাশী দেবলীনা

অভিনেত্রী নিজে বলছেন, ‘‘আরএসএস সম্পর্কে আমার কোনও ছুতমার্গ নেই। কোনও সংগঠন বা কোনও ধর্ম গোটাটাই খারাপ হয় না। ব্যক্তি খারাপ হন, ব্যক্তি ভাল হন।’’ বস্তুত, ২০২১ সালের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে দেবলীনার তেমন অনুতাপও নেই।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৪০
RSS platform welcomes actor Debleena Dutta, who was in controversy due to her beef cooking remark, Controversy erupts in Sangha Family

মঙ্গলবার সংস্কার ভারতীর অনুষ্ঠান মঞ্চে উত্তরীয় পরিয়ে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। ছবি: ফেসবুক।

আরএসএসের সহযোগী সংগঠনের মঞ্চে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত। সেই দেবলীনা, যিনি বছর চারেক আগে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মহাষ্টমীর দিনে গোমাংস রান্না করার কথা বলে। মঙ্গলবার জাতীয় গ্রন্থাগারে আরএসএসের সাংস্কৃতিক শাখা ‘সংস্কার ভারতীর’ নববর্ষ আবাহন কর্মসূচি ছিল। গৌড়াধিপতি শশাঙ্কের প্রথম পূর্ণাবয়ব মূর্তির আবরণ উন্মোচনের কথাও ছিল। সব কিছু পরিকল্পনামতোই হয়েছে। কিন্তু ওই মঞ্চে দেবলীনাকে ডাকা উচিত ছিল কি না, তা নিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের অন্দরে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

কেউ সমাজমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘দেবলীনা কি সংস্কারিত হয়ে সংস্কার ভারতীর মঞ্চে এলেন? না কি সংস্কার ভারতী নিজের সংস্কার পরিত্যাগ করল?’ কেউ লিখেছেন, ‘অনুগ্রহ করে পশ্চিমবঙ্গে সংস্কার ভারতী বন্ধ করে দিন। এটা ভাইরাসে পরিপূর্ণ।’ কেউ সরাসরি সংগঠনের এক শীর্ষ পদাধিকারীকে আক্রমণ করে লিখেছেন, ‘নীলাঞ্জনা রায়, আপনি পুরো সংস্কার ভারতী নিয়ে তৃণমূলে কেন যাচ্ছেন না? আশা করব দেবলীনাকে নিয়ে মহাষ্টমীর দিন গোমাংস দিয়ে স্বল্পাহার করবেন।’

২০২১ সালে টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠানে এক বক্তা মহাষ্টমীর দিন গোমাংস খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। দেবলীনা তাঁর মন্তব্যকে সমর্থন করে বলেছিলেন, তিনি নিজে নিরামিষাশী হলেও ওই বক্তা চাইলে তিনি তাঁকে মহাষ্টমীর দিন গোমাংস রেঁধে দিতে পারেন। দেবলীনার সেই মন্তব্য রাজ্য জুড়ে বিতর্ক তৈরি করেছিল। এ হেন দেবলীনা সঙ্ঘ পরিবারের অনুষ্ঠানে ডাক পাওয়ায় অনেকেই বিস্মিত।

RSS platform welcomes actor Debleena Dutta, who was in controversy due to her beef cooking remark, Controversy erupts in Sangha Family

দেবলীনার ‘গোসেবার’ ছবি, যা আনন্দবাজার ডট কমকে পাঠিয়েছেন অভিনেত্রী নিজেই।

দেবলীনা বলছেন, ‘‘আরএসএস সম্পর্কে আমার কোনও ছুতমার্গ নেই। কোনও সংগঠন বা কোনও ধর্ম গোটাটাই খারাপ হয় না। ব্যক্তি খারাপ হন, ব্যক্তি ভাল হন।’’ বস্তুত, ২০২১ সালের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে দেবলীনার তেমন অনুতাপও নেই। তবে দেবলীনার ছুতমার্গ না থাকলেও ওই মন্তব্য নিয়ে আরএসএসের ছুতমার্গ এখনও রয়েছে। দেবলীনা বলছেন, ‘‘আমার অবস্থান বদলের প্রয়োজন নেই। আমি বলতে চেয়েছিলাম যে, আমি কারও খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করাকে সমর্থন করি না। কিন্তু আমি নিজে কোনও মাংসই খাই না। মাছও খাই না। আমি সম্পূর্ণ নিরামিষাশী।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘ঈশ্বর মৎস্যরূপেও এসেছিলেন। সুতরাং প্রকৃত হিন্দুর মাছও খাওয়ার কথা নয়। আমি খাই না।’’ উল্টে দেবলীনার প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা আমার ওই একটা মন্তব্যের সমালোচনা করছেন, তাঁরা কি আমার মতো নিরামিষাশী? না কি তাঁরা মাছ-মাংস খান? যদি তাঁদের মাছ-মাংস খাওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে, তা হলে কি আমাকে নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তোলার জায়গায় রয়েছেন?’’ দেবলীনার দাবি, তাঁর পশুপ্রেমের বন্ধনীতে গরুও রয়েছে। দেবলীনার কথায়, ‘‘আমি গোসেবাও করেছি। তার ছবিও আমার ফেসবুকে রয়েছে। যাঁরা আমাকে নিয়ে প্রশ্ন করছেন, তাঁরা জীবনে কখনও গোসেবা করেছেন কি?’’

দেবলীনার চেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখে অবশ্য পড়তে হচ্ছে ওই সংগঠনকে। দেবলীনাকে কে আমন্ত্রণ জানালেন, কেন জানালেন, সঙ্ঘ পরিবারের অন্দরে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তা নিয়েই। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা দক্ষিণবঙ্গের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যা নীলাঞ্জনা বলছেন, ‘‘দেবলীনাকে আমরা আমন্ত্রণ করিনি। সম্ভবত আরএসএসের সম্পর্ক বিভাগের তরফে তাঁকে কেউ আমন্ত্রণ করেছিলেন। কারণ সম্পর্ক বিভাগ সারা বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতী মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। তার অঙ্গ হিসেবে কেউ দেবলীনাকে আমন্ত্রণ করে থাকতে পারেন।’’ নীলাঞ্জনার কথায়, ‘‘আমরা যখন দেখলাম একজন অভিনেত্রী তথা খ্যাতনামী সভাগৃহে এসেছেন, তখন আমরা তাঁকে তাঁর যথাযোগ্য সম্মান দেওয়ার জন্য মঞ্চে ডেকে উত্তরীয় পরিয়ে দিয়েছি। তার পরে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে গিয়েছেন।’’

দেবলীনাকে দেখে অনুষ্ঠানস্থলে কেউ যে ক্ষুণ্ণ হননি, নীলাঞ্জনার কথায় তারই আভাস। কিন্তু সংস্থার সদস্যদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন ক্ষুণ্ণ না-হওয়া নিয়েই। দেবলীনার চার বছর আগের মন্তব্যের কথা কারও কেন মনে পড়ল না, সংগঠনের একাংশ থেকে সেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। সে প্রসঙ্গে নীলাঞ্জনা বললেন, ‘‘অনুষ্ঠানের শুরুতে আমরা ‘বন্দেমাতরম’ গাইলাম। দেবলীনাও আমাদের সঙ্গে গাইলেন। মহারাজ শশাঙ্কের মূর্তি যখন মঞ্চে আনা হচ্ছে, তখন আমরা জয়ধ্বনি দিচ্ছিলাম। দেবলীনাও দিচ্ছিলেন। শশাঙ্ক শৈব ছিলেন বলে আমরা ‘হর হর মহাদেব’ ধ্বনি দিচ্ছিলাম। দেবলীনাও ‘হর হর মহাদেব’ বলছিলেন। তাঁকে নিয়ে সেই মুহূর্তে আমাদের কোনও সঙ্কোচ হয়নি।’’

দেবলীনার চার বছর আগের মন্তব্যকে কি তাঁরা এখন ভুলে যেতে চাইছেন? নীলাঞ্জনার বক্তব্য, ‘‘কখনওই নয়। আমরা তো ওঁকে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করিনি। তবে উনি ওই মন্তব্য সম্পর্কে নিজের ভুল উপলব্ধি করে যদি কখনও আমাদের মতো করেই কথা বলেন, তা হলে সংগঠনেও স্বাগত।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy