গোষ্ঠীকোন্দল পিছু ছাড়ছে না কলকাতা জেলার সিপিএমের! রবিবার নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠন ঘিরে নতুন বিতর্ক তৈরি হল। সম্পাদকমণ্ডলীর দীর্ঘদিনের সদস্য তথা মহিলানেত্রী রূপা বাগচীকে সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ দিয়ে দিল সিপিএম। যা নিয়ে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য, যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে তপ্ত হল জেলা কমিটির সভা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম স্বয়ং।
রূপা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য। এই ধরনের ঘটনায় নতুন কাউকে আনা হলে আগে তাঁর সঙ্গে নেতৃত্বের কথা বলে নেওয়াটাই সিপিএমে রীতি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি বলেই অভিযোগ উঠছে দলের মধ্যে। রূপার বদলে সম্পাদকমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বেহালা পূর্বের নেত্রী শমিতা হর চৌধুরীকে। রূপার সংসদীয় রাজনীতিতে, বিশেষত পুরসভার রাজনীতিতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। দীর্ঘদিন মানিকতলা এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন। অধুনাপ্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় যখন কলকাতার মেয়র তখন পুরসভায় বামেদের তরফে বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন রূপা। ২০০৬ সালে মানিকতলা (পুনর্বিন্যাসের আগের) কেন্দ্র থেকে জিতেই বিধায়ক হয়েছিলেন।
কেন বাদ? সূত্রের খবর, জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার বৈঠকে যুক্তি দেন, রূপা ‘অসুস্থ’। পাল্টা প্রশ্ন ওঠে, যাঁকে চার মাস আগে রাজ্য কমিটি রাখল, তাঁকে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে ছেঁটে ফেলা কি যুক্তিযুক্ত হচ্ছে? সূত্রের এ-ও খবর, রূপা সম্প্রতি কয়েক দিন অসুস্থ হয়েছিলেন। সেই সময় দল থেকে ছুটিও নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ছুটির কারণে যে তাঁকে ছেঁটে ফেলা হবে তা বোধহয় কলকাতার অনেক তাবড় নেতার ধারণার মধ্যেও ছিল না। যা নিয়ে টিপ্পনী করে বৈঠকেই এক প্রবীণ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বলেছেন, অসুস্থ হবেন না। হলেই কিন্তু বাদ!
কলকাতা জেলা সিপিএমে যুযুধান দু’পক্ষের কথা গোটা দল জানে। দলীয় সূত্রে খবর, কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ক্ষেত্রে রূপা হয় কোনও পক্ষ নেননি অথবা সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলার পক্ষে হেঁটেছেন। এক প্রাক্তন যুব নেতা ও এক সদ্য দায়িত্ব পাওয়া যুব নেতার বিরুদ্ধে নারীনিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে দলের মধ্যে সরব হয়েছিলেন রূপা। যা নানা সমীকরণকে ঘেঁটে দিয়েছিল। অনেকের ব্যাখ্যা, রূপাকে ছেঁটে ফেলে ক্যাল ডিসি দেখাল বাঁশ না-থাকলে বাঁশিও বাজবে না।
এক অবসরপ্রাপ্ত নেতার সম্পাদকমণ্ডলীতে সরাসরি অন্তর্ভুক্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বলে খবর। পেনশনভোগী হয়ে তাঁরা কেন দলের গাড়ি ব্যবহার করবেন এমন কড়া প্রশ্নও উঠে গিয়েছে। আরও একবার প্রশ্ন উঠল, অল্পবয়সি যাঁরা পেশা ছেড়ে হোলটাইমার হয়েছেন, তাঁরা কি কেবল দেওয়ালে পোস্টার লাগাবেন?
কলকাতা সিপিএম সূত্রে খবর, রূপাকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি ভাল ভাবে নেননি রাজ্য সম্পাদক সেলিম। জবাবি ভাষণে তিনি নাকি এক প্রকার ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছেন, জেলার সমীকরণে রূপাকে বাদ দেওয়া হল ঠিকই। কিন্তু তিনি যাতে রাজ্য কমিটির সদস্য হিসাবে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে থাকতে পারেন তার ব্যবস্থা করবে আলিমুদ্দিন।