Advertisement
২৪ মে ২০২৪

সবংয়ের মানসীর চোখে মানস ‘খুনি’ই

মামলা থেকে রেহাই পেতেই শাসক দলের আশ্রয়ে গেলেন মানস ভুঁইয়া— এতদিন এই অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার দলবদলের দিন একই সুর সবংয়ের নিহত তৃণমূল কর্মী জয়দেব জানার স্ত্রীর গলাতেও।

নিহত জয়দেব জানা (ইনসেটে)-র স্ত্রী মানসী জানা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিহত জয়দেব জানা (ইনসেটে)-র স্ত্রী মানসী জানা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

বরুণ দে
সবং শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫০
Share: Save:

মামলা থেকে রেহাই পেতেই শাসক দলের আশ্রয়ে গেলেন মানস ভুঁইয়া— এতদিন এই অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার দলবদলের দিন একই সুর সবংয়ের নিহত তৃণমূল কর্মী জয়দেব জানার স্ত্রীর গলাতেও। জয়দেব খুনের মামলাতেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে মানসবাবুর নামে।

সোমবার বিকেল। সবংয়ের মোহাড় পঞ্চায়েতের দুবরাজপুর গ্রামে টালির ছাদের এক কামরার মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসেছিলেন মানসী জানা, নিহত জয়দেবের স্ত্রী। মানসবাবুর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গ পাড়তেই চোয়াল শক্ত হল। তারপর বললেন, ‘‘বাঁচার তাগিদেই মানস ভুঁইয়া তৃণমূলে এলেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে উনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। কিন্তু আইনের দিক থেকে তো ওঁর শাস্তি হওয়া উচিত। আমি চাই আমার স্বামীকে যারা মেরেছে, তাদের সাজা হোক। আইন আইনের মতো চলুক আর রাজনীতি থাকুক রাজনীতির জায়গায়।’’

মানসীর ঘরের মাটির দেওয়ালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। ইতিউতি গোঁজা তৃণমূলের পতাকা। বছর চল্লিশের স্বামীহারা বধূ জানালেন, স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সম্বল বলতে চার কাঠা জমি। কিন্তু জয়দেবের মৃত্যুর পরে তা চাষ করার লোকও নেই। তবে চলছে কী করে? মানসীর জবাব, ‘‘ব্যাঙ্কে কিছু গচ্ছিত টাকা ছিল। তা দিয়েই চলছে। কিন্তু আর কত দিন টানতে পারব জানি না।’’

পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক, লড়াই ছাড়তে নারাজ মানসী। এ দিনও বললেন, ‘‘আমার চোখে মানস ভুঁইয়া খুনি। খুনির সঙ্গে কখনও আপস করব না।’’ পড়শিদের একাংশেরও ধারণা, মানসীর লড়াই আরও কঠিন হয়ে গেল। কারণ, এ বার নির্ঘাত মামলা থেকে রেহাই পাবেন মানসবাবু।

মামলা থেকে রেহাইয়ের প্রতিশ্রুতি কি তবে পেয়ে গিয়েছেন সবংয়ের বিধায়ক? এ দিন দলবদলের পর সাংবাদিকদের মুখে প্রশ্নটা শুনে জবাব এড়ালেন মানসবাবু। বললেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয়ে আপনারা যেমন কিছু প্রশ্ন করতে পারেন না, আমিও আগাম কোনও জবাব দিচ্ছি না। শুধু বলতে পারি আইন আইনের পথেই চলবে।’’ গত এপ্রিলে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে ভোটের দু’দিন আগে পিটিয়ে খুন করা হয় জয়দেবকে। অভিযোগ হয় মানস ভুঁইয়া, বিকাশ ভুঁইয়া-সহ ২৩ জন কংগ্রেস নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। প্রথমে মেদিনীপুর আদালতে ও পরে কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিন নাকচ হয়ে যাওয়ায় মানসবাবু-সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। ওই পর্বে আরও একটি মামলায় নাম জড়ায় মানসবাবুর। মানসীর অভিযোগ ছিল, মানসবাবু লোক পাঠিয়ে খুনের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দিচ্ছেন। সেই মামলাও বিচারাধীন।

আরও পড়ুন: দুর্গোৎসব এর নতুন ঠিকানা: আনন্দ উৎসব

উৎসবের হাত

কংগ্রেস নেতৃত্ব গোড়া থেকেই বলছেন, এ সব মিথ্যে মামলা। এ দিনও সবংয়ের কংগ্রেস নেতা চিরঞ্জীব ভৌমিক বলেন, ‘‘ওই মামলা তো অবশ্যই মিথ্যে ছিল। তবে এটাও ঠিক যে তা থেকে বাঁচতে এবং আরও বড় কিছু পাওয়ার আশায় মানসবাবু তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন।’’

কিন্তু এক দলের টিকিটে জিতে অন্য দলে চলে যাওয়াটা কতটা নীতিসঙ্গত, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আশির দশক থেকেই হাত চিহ্নে সবং থেকে জিতে বিধানসভায় গিয়েছেন মানসবাবু। গোটা জেলা যখন লাল-দুর্গ, তখনও সবং থেকেছে কংগ্রেসের গড়। সেই মানসবাবুর দলত্যাগে তাই একাংশ সবংবাসী ক্ষুব্ধ। মানস দাস, অক্ষয় দাস অধিকারীর মতো স্থানীয় চাষিরা বললেন, ‘‘মানুষ তো শুধু ব্যক্তি মানস ভুঁইয়াকে নয়, ভোটে জিতিয়েছে কংগ্রেসকেও। দল ছাড়ার আগে ওঁর ভাবা উচিত ছিল।’’ কংগ্রেস নেতা চিরঞ্জীববাবুরও মত, ‘‘মানসবাবু দল ছেড়ে সবংবাসীকেই অপমান করলেন।’’

মানসবাবুর মতো নেতা দলে আসায় সংশয়ে সবংয়ের তৃণমূল নেতৃত্ব। অনেকের আশঙ্কা, গোটা জেলাতেই দলের রাশ চলে যাবে মানসবাবুর হাতে। সবংয়ের তৃণমূল নেতা, জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির বক্তব্য, ‘‘সম্প্রতি দলের নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, দলের পুরনো কর্মীদের মর্যাদা দিতে হবে। আশা করি নতুনরা আসার পরেও পুরনো কর্মীরা অসম্মানিত হবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manasi Jana Sabang Murder case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE