সব্যসাচী দাস
সোমবার দুপুরের পরে কেটে গিয়েছে আরও দু’টি দিন। কিন্তু কান্দিতে এখনও মুখে মুখে ঘুরছে তৃণমূলের মিছিলে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে জনাকয়েক যুবকের সেই ‘আস্ফালন’ এর কথাই!
ওই ঘটনার পরে রাজ্য জুড়ে যেমন বিতর্কের ঝড় বইছে, তেমনি অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যদের অনেকে আবার বাড়ির বাইরে বেরোতেও ‘লজ্জিত’ হচ্ছেন। কারও পরিবারের লোকজন আবার দাবি করছেন, তাঁদের বাড়ির ছেলেরা এমন কাজ করতেই পারে না। তাঁদের চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে। অভিযুক্ত মাধব দাসের পরিবারের কথাই ধরা যাক। মাধবকে এলাকার সকলে গাড়ির চালক হিসাবেই চেনেন। আগে কংগ্রেস করলেও পুরভোটের পর থেকে তিনি সক্রিয় ভাবে তৃণমূল করেন বলেই দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বর্তমানে তিনি কান্দির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আর এক অভিযুক্ত সব্যসাচী দাসদের গাড়ি চালান।
মাধবের স্ত্রী অন্বেষা দাস বলেন, “পাঁচ বছর ওর সঙ্গে ঘর করছি। কই, এমন আচরণ তো এর আগে কখনও দেখনি। কী এমন হল যে ওই কাজ করতে গেল! প্রতিবেশীদের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।’’ তিনি জানান, কোনও প্রলোভনে পা দিয়েই মাধব হয়তো এমনটা করে ফেলেছেন।
একই কথা বলছেন মাধবের ভাইপো কৌশিক দাস। কৌশিকবাবু বলেন, “সোমবারের ওই ঘটনার পর থেকে আত্মীয়েরা থেকে শুরু করে বন্ধু বান্ধব সকলেই ফোন করে কাকার কথা জানতে চাইছেন। বাজারে যাচ্ছি। সেখানেও ওই একই কথা। আমাদের পরিবারের মানসম্মান সব মাটিতে মিশে গেল।”
মাধবের পরিবারের লোকজন অস্বস্তিতে পড়লেও অভিযুক্ত সব্যসাচী দাস ও তাঁর ভাই পার্থসারথি দাসের মা নীলিমাদেবী কিন্তু বিচলিত নন। তিনি কখনও বলছেন, ‘‘আমার ছেলেরা এমন কাজ করতেই পারে না।’’ আবার কখনও তাঁর মন্তব্য, ‘‘টিভিতে যা দেখাচ্ছে সে তো খেলনা বন্দুক।’’ কখনও আবার তিনি এই ঘটনা বিরোধীদের চক্রান্ত বলেও দাবি করেছেন। অভিযুক্ত দুঃশাসন ঘোষের পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য কেউ কোনও কথা বলতে চাননি।
কান্দিতে এমন ঘটনা ঘটায় ক্ষুব্ধ এলাকার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। কান্দি মহকুমা সংস্কৃতি সমন্বয় কমিটির সদস্য অপরেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কান্দিতে নাটক দেখতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এসেছিলেন। এই শহরে সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস বহু পুরনো। সেই শহরে আজ পিস্তল নিয়ে রাস্তায় কিছু লোকজন নেচে নেচে মিছিল করছে— এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’ তাঁর দাবি, অভিযুক্তরা যে রাজনৈতিক দলেরই হোক না কেন তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
তবে এমন ঘটনায় কান্দির ব্যবসায় তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের। কান্দি মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারকেশ্বর প্রামাণিক বলেন, “এমন ঘটনা কোথাও না কোথাও হচ্ছে। ও সব দেখতে দেখতে মানুষ এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। ঘটনার দিন একটু লোকজন কম বেরিয়েছিলেন।’’ তবে এমন ঘটনাকে যে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না সেটাও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছিল গয়ানাথ কৈবর্ত্য ও ইমরান শেখকে। বুধবার তাঁদের আদালতে তোলা হয়। গয়ানাথের ভাই বৃন্দাবন কৈবর্ত্যকে আদালত চত্বরে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেলেও ইমরানের বাড়ির লোকজনকে আদালত চত্বরে দেখা যায়নি। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ইমরানের মা মানেহার বিবি বলেন, “আমার তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে ইমরানই ছোট। অল্পবয়স থেকেই নেশা করতে শুরু করে। কিছু দিন আগে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তবে পিস্তল নিয়ে নাচানাচি করার মতো ছেলে ও নয়।” বরং তাঁর দাবি, ইমরান ওই দিন তৃণমূলের সভাস্থলে মিছিলের কর্মীদের টিফিন দিচ্ছিল। পুলিশ মিথ্যা মামলায় ইমরানকে ফাঁসাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মানেহার বিবি।
বুধবার কংগ্রেস কান্দি ও বড়ঞায় ওই ঘটনার প্রতিবাদে ধিক্কার মিছিল করে। বামেদের পক্ষ থেকেও লিচুতলায় পথসভাও করা হয়। আজ, বৃহস্পতিবার কান্দি থানার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ হওয়ার কথা বামেদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy