E-Paper

প্রসূতি-মৃত্যুতে কাঠগড়ায় সাগর দত্ত, অভিযোগ ওড়ালেন সুপার

অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের পরে ব্যাক্টিরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধী ইনজেকশন দেওয়ার পর থেকেই অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে বছর পঁয়ত্রিশের তরুণী পম্পা সরকারের। পরে তাঁর মৃত্যু হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৫ ০৯:১৮
দিদিমা শিবানী সরকারের কোলে পম্পার শিশুকন্যা।

দিদিমা শিবানী সরকারের কোলে পম্পার শিশুকন্যা। —নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরে এ বার এক প্রসূতির মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের পরে ব্যাক্টিরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধী ইনজেকশন দেওয়ার পর থেকেই অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে বছর পঁয়ত্রিশের তরুণী পম্পা সরকারের। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। একই ইনজেকশন দেওয়ার পরে আরও কয়েক জন প্রসূতিও অসুস্থ হন বলে অভিযোগ। তবে, তাঁদের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। আরও অভিযোগ, প্রসবের পরে সংক্রমণ ও বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে পম্পা মারা গিয়েছেন বলে মৃত্যুর শংসাপত্রে উল্লেখ করা হলেও ময়না তদন্ত করা হয়নি।

যদিও গোটা ঘটনাই স্রেফ ‘বাজে কথা’ বলে দাবি করেছেন সাগর দত্ত মেডিক্যালের সুপার সুজয় মিস্ত্রি। সূত্রের খবর, গত ২৯ এপ্রিল, মঙ্গলবারের ওই ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইনজেকশন দেওয়ার পরে প্রসূতিদের অবস্থার অবনতি হওয়া, এমনকি, তদন্ত কমিটি গঠনের কথাও অস্বীকার করেছেন সুজয়। তাঁর কথায়, ‘‘ইনজেকশন দেওয়ার পরে প্রসূতিদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কোনও খবর নেই। যে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে, তাঁর পরিবার কোনও অভিযোগ করেনি। তাই ময়না তদন্ত এবং কমিটি গঠনেরও কোনও বিষয় নেই।’’ যদিও এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন।

সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য ভবনের তরফে অন্য মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ-সহ বিভিন্ন বিভাগের চার-পাঁচ জনকে নিয়ে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। শুক্রবার স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘অন্য প্রসূতিরা এখন ভাল আছেন। কিন্তু এক জন প্রসূতি কেন মারা গেলেন, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’’ স্বাস্থ্যসচিবের বক্তব্যের সঙ্গে সুপারের মন্তব্যের পার্থক্যের জেরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, হাসপাতাল কি তা হলে বিষয়টি আড়াল করতে চাইছে?

গত জানুয়ারিতে ‘বিতর্কিত’ রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন দেওয়ার পরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঁচ জন প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক জনের মৃত্যু হয়। তিন জনকে গুরুতর অবস্থায় পরে এসএসকেএমে পাঠানো হয়। ওই ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সিআইডি তদন্তভার নেয়। ওই ঘটনায় সিনিয়র ও জুনিয়র মিলিয়ে ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। কিন্তু কামারহাটির ঘটনায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় সংশয় প্রকাশ করছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। তাদের দাবি, ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

চিকিৎসকদের একাংশের এটাও দাবি, সিজ়ারের পরে সংক্রমণ ও বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় ময়না তদন্ত করা জরুরি। যেমন, মেদিনীপুরের মৃত প্রসূতি মামণি রুইদাসের ক্ষেত্রে হয়েছিল। তা হলে পম্পার তা করা হল না কেন? পম্পার স্বামী গৌর ভদ্র বলেন, ‘‘আমরা এত বুঝি না। ময়না তদন্তের কথা বলা হয়নি। মারা যাওয়ার দু’ঘণ্টা পরেই দেহ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’

নিমতার মিলনগড়ের বাসিন্দা, একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের কাজে যুক্ত পম্পার সঙ্গে বছর চারেক আগে বিয়ে হয় গৌরের। পেশায় বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী ওই যুবক এ দিন জানান, একই কলেজ থেকে তাঁরা কলা বিভাগে স্নাতক হয়েছিলেন। গৌর বলেন, ‘‘পম্পা খুব লাজুক ছিল। ও যে হাসপাতালে যুক্ত ছিল, সেখানে অস্ত্রোপচার করাতে চায়নি। তাই সাগর দত্তে ভর্তি করেছিলাম।’’ ২৭ এপ্রিল রাতে তিনি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।

পম্পার মা শিবানী সরকারের অভিযোগ, ২৮ এপ্রিল, সোমবার সকালে তাঁর মেয়েকে শয্যায় দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুতেই যন্ত্রণা কমছিল না। বিকেল থেকে পম্পার কাঁপুনি শুরু হয়। মুখ-সহ বিভিন্ন জায়গা লাল হয়ে যাচ্ছিল। শিবানী বলেন, ‘‘ডাক্তারদের জানানোয় ইনজেকশন দিলেন। তখনও মেয়ে কথা বলছিল।’’ পরিজনদের অভিযোগ, মঙ্গলবার পম্পার অবস্থা আরও খারাপ হয়। স্যালাইনের চ্যানেল দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল, সারা দেহে র‌্যাশের মতো লাল হয়ে গিয়েছিল, শ্বাসও ঠিক মতো নিতে পারছিলেন না। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয় পম্পাকে। রাত ৮টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়।

শিবানীর অভিযোগ, ইনজেকশন দেওয়ার পরে আরও কয়েক জন প্রসূতির অবস্থার অবনতি হয়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এক প্রসূতির মৃত্যু-সহ আরও ১০ জনের অবস্থা খারাপ জেনে ২৯ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে এসেছিলেন বিশেষ সচিব পর্যায়ের এক স্বাস্থ্যকর্তা। এমনকি, অভিযোগ ওঠা ব্যাচের বাকি ইনজেকশনগুলি সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

নিমতার উত্তর প্রতাপগড়ে গৌরের বাড়িতে শুক্রবার সদ্যোজাত নাতনিকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন শিবানী। তাঁর কথায়, ‘‘রবিবার রাতে মেয়েটা অটোয় হাসপাতালে গেল। মঙ্গলবার দেহ নিয়ে ফিরলাম। এর দায় কে নেবে?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Death operation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy