Advertisement
E-Paper

মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন শান্তনুর! বললেন, চুপ করে বসে থাকব না, আইনি পরামর্শ নিয়ে জিতব

আরজি কর পর্বে শান্তনুকে প্রথমে দলের মুখপাত্র পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু শান্তনু তাতে মুখ বন্ধ করেননি। আপাতত জেলবন্দি আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় প্রকাশ্যে এনেছিলেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫ ১৩:০৬
Santanu Sen reaction on cancellation of his medical license

শান্তনু সেন। —ফাইল চিত্র।

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে গেলেন তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা শান্তনু সেন। শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে ওই মর্মে মামলা করেছেন তিনি। তার ফাঁকেই বলেছেন, ‘‘যা হয়েছে তা আমি মুখ বুজে মেনে নেব না।’’ আগামী সোমবার শান্তনুর দায়ের করা মামলার শুনানির সম্ভাবনা।

শান্তনু কলকাতা পুরসভার তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর। তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদও বটে। আবার প্রায় এক বছর তিনি প্রাক্তন তৃণমূল নেতা। কারণ, আরজি কর পর্বে দল তাঁকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছিল। শান্তনুর পরিচয়ের পাশে সবেতেই যখন ‘প্রাক্তন’ যুক্ত করতে হচ্ছিল, তখন ‘বর্তমান’ বলতে ছিল শুধু তাঁর ‘ডাক্তার’ পরিচয়। বৃহস্পতিবার রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে সেটিও খুইয়েছেন তিনি। আপাতত তিনি ‘প্রাক্তন চিকিৎসক’।

চিকিৎসক হিসাবে তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিল প্রসঙ্গে শান্তনু বলেন, ‘‘আমার কষ্টার্জিত রেজিস্ট্রেশন কেউ যদি চক্রান্ত করে কেড়ে নিতে চায়, তা হলে আমি চুপ করে বসে থাকব না কি?’’ কী করবেন? শান্তনুর জবাব, ‘‘আমি আইনি পরামর্শ নেব এবং জিতব।’’ সেইমতোই তিনি বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে তাঁর সঙ্গে কি দলের কারও সঙ্গে কথা হয়েছে? শান্তনু বলেন, ‘‘এটা দল আর আমার ব্যাপার। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলব না।’’

উল্লেখ্য, আরজি কর পর্বে শান্তনুকে প্রথমে দলের মুখপাত্র পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু শান্তনু তাতে মুখ বন্ধ করেননি। আপাতত জেলবন্দি আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় প্রকাশ্যে এনেছিলেন। এ-ও বলেছিলেন, তিনি আরজি করের ‘ঘুঘুর বাসা’ নিয়ে সরকারকে বারংবার জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। যা ‘অস্বস্তি’ বাড়িয়েছিল স্বাস্থ্য ভবনের।

শান্তনুর বক্তব্য ছিল, আরজি করের ‘হুমকি সংস্কৃতি’র কবলে পড়তে হয়েছে তাঁর ডাক্তারি পড়ুয়া কন্যাকেও। সে সবের পরে শান্তনুকে নিলম্বিত করে দল। কিন্তু ‘ডাক্তার’ শান্তনু দল থেকে নিলম্বিত হলেও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচিতে পুরোদস্তুর যুক্ত ছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে টানা ৭৫ দিন ধরে চলা অভিষেকের কর্মসূচিতে চিকিৎসকদের সংগঠিত করার নেপথ্য কারিগর ছিলেন কাশীপুর-বেলগাছিয়ার এই নেতা। যা থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, দল শান্তনুকে নিলম্বিত করলেও ক্যামাক স্ট্রিট তাঁকে ‘আগলে’ রেখেছে। সেই প্রেক্ষিতেই তৃণমূলের একাংশের মধ্যে কৌতূহল, ডাক্তারির রেজিস্ট্রেশন খোয়ানোর পর শান্তনু কি ক্যামাক স্ট্রিটকে পাশে পাবেন?

শান্তনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে রেজিস্ট্রেশন না করিয়েই ‘এফআরসিপি গ্লাসগো’ নামে একটি বিদেশি ডিগ্রি ব্যবহার করছিলেন তিনি। গত মাসেই তা নিয়ে শান্তনুকে নোটিস ধরিয়েছিল কাউন্সিল। বৃহস্পতিবার তাঁকে তলব করা হয়েছিল। তার পরেই কাউন্সিল শান্তনুর ডাক্তারি রেজিস্ট্রেশন দু’বছরের জন্য বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।

কাউন্সিলের বক্তব্য, ‘এফআরসিপি’ ডিগ্রির কথা কাউন্সিলকে জানাননি শান্তনু। ‘এফআরসিপি’ একটি সাম্মানিক ডিগ্রি। ওই ডিগ্রির ব্যাপারে জানতে গ্লাসগোতে তারা ইমেলও করেছিল। জানতে চাওয়া হয়েছিল, যাঁদের এই ডিগ্রি রয়েছে, তাঁরা প্র্যাকটিস করতে পারেন কি না। কিন্তু মেলের এখনও কোনও উত্তর আসেনি বলে জানিয়েছে কাউন্সিল। কাউন্সিলের ওই সিদ্ধান্তের পর শান্তনু কি আর ডাক্তারি প্র্যাকটিস করতে পারবেন না? জবাবে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তা-ই তো হওয়া উচিত।’’

উল্লেখ্য, শুধু দলীয় পদ নয়। চলতি বছর রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকেও সরানো হয়েছিল শান্তনুকে। তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, সেই থেকেই ‘চক্রান্ত’ শুরু। যা চরমে পৌঁছেছে বৃহস্পতিবার। আরজি কর পর্ব থেকেই সেন পরিবার তৃণমূলের মূলস্রোত থেকে বাইরে। শান্তনুর স্ত্রী তথা চিকিৎসক কাকলি সেন কলকাতা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তাঁকেও পুরসভার কাউন্সিলরদের হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শান্তনুর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, এত দিন ‘দাদা-বৌদি’র বিরুদ্ধে যা হচ্ছিল, সেগুলি সব রাজনৈতিক বিষয়। কিন্তু এ বার পেশা নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। যার নেপথ্যে বৃহত্তর রাজনীতি থাকতে পারে বলেও একান্ত আলোচনায় বলছেন সেনদম্পতির ঘনিষ্ঠেরা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলেও রাজনৈতিক সমীকরণ রয়েছে। রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত তারই ফল। এখন দেখার, আদালতে গিয়ে শান্তনুর সমস্যার কোনও সুরাহা হয় কি না।

Santanu Sen Tmc Leader
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy