ফের আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন সারদার এক এজেন্ট। কারণ সেই একই, আমানতকারীদের টাকা ফেরতের চাপ। বৃহস্পতিবার রাতে ক্যানিংয়ের মিঠাখালি গ্রামের এই ঘটনায় ইয়াসমিনা বিবি নামে ওই এজেন্ট আপাতত কলকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ইয়াসমিনার ঘটনা এ রাজ্যে নতুন কিছু নয়। অর্থলগ্নি সংস্থা সারদা বন্ধ হওয়ার পর থেকে এ ধরনের ঘটনার সাক্ষী রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত। কোথাও এজেন্ট আত্মঘাতী হয়েছেন। কোথাও পাওনাদারের চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। কোথাও পালিয়ে বেরাচ্ছেন।
আমানতকারীরাও পড়েছেন অথৈ জলে। টাকা ফেরত চেয়ে কার দ্বারস্থ হবেন তাঁরা, সেটাই জানা নেই। হাতের কাছে আছে এজেন্ট। টাকা ফেরত চেয়ে তাঁর উপরেই চাপ সৃষ্টি করছেন আমানতকারীরা। যাঁরা লক্ষ লক্ষ টাকা রেখে সবর্স্বান্ত হয়েছেন সারদায়।
ক্যানিংয়ের ঘটনায় পুলিশ জানতে পেরেছে, টাকা ফেরত চেয়ে ইয়াসমিনার বাড়িতে মাঝে মধ্যেই টাকা ফেরত চেয়ে চড়াও হতো গ্রাহকেরা। বৃহস্পতিবার তেমনই কিছু লোক হাজির হয় ওই এজেন্টের বাড়িতে। শুরু হয় গালিগালাজ। ভয় পেয়ে ইয়াসমিনা ফোন করেন থানায়। বলেন, ‘‘আমাকে হেনস্থা করা হচ্ছে। আপনারা কিছু করুন।’’
কিছু ক্ষণের মধ্যেই পৌঁছয় পুলিশ। কিন্তু তত ক্ষণে ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়েছেন ওই মহিলা। পুলিশ আসায় গ্রাহকেরা সরে পড়ে। ইয়াসমিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় কলকাতায়। ইয়াসমিনার ফোনের ভিত্তিতে হেনস্থার অভিযোগের একটি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কেউ ধরা পড়েনি।
সারদা-কাণ্ডের পরে একের পর এক অর্থলগ্নি সংস্থার অফিসে তালা ঝুলেছে। রোজভ্যালি, র্যামেল, এমপিএস, আইকোর— বন্ধ লগ্নিসংস্থার নামের তালিকাটা দীর্ঘ। এ ছাড়াও গাঁয়েগঞ্জে ছোট-বড় আরও বহু সংস্থা গ্রাহকদের থেকে বছরের
পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা তুলেছে। সে সব বন্ধ হওয়ার পরে গ্রাহকদের মাথায় হাত। অন্য দিকে, এজেন্টরাও পড়েছেন আতান্তরে। ঘটিবাটি বেচে কিছু কিছু টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ। আর যতটুকু টাকা ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন তাঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে, তাও যৎসামান্য।
সারদা বন্ধ হওয়ার পরে রাজ্য সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে শ্যামল সেন কমিশন গড়ে টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করেছিল। কয়েক লক্ষ লোক কিছু কিছু টাকা ফেরতও পেয়েছেন। কিন্তু সিবিআই মামলার তদন্তভার নেওয়ার পর থেকে শ্যামল সেন কমিশনের কাজও বন্ধ। এখন প্রশ্ন হল, বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থায় জীবনের কষ্টার্জিত সঞ্চয় রেখে যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁরা যাবেন কোথায়? আর লগ্নি সংস্থাগুলির হয়ে যে সব এজেন্টরা গাঁয়েগঞ্জে কোটি কোটি টাকা, তাঁদের নিরাপত্তাই বা দেবে কে?