Advertisement
E-Paper

নেতাদের নাম করে সুদীপ্তের চিঠি, প্রশ্ন

ওই নেতাদের মধ্যে দু’জন সিপিএমের, এক জন কংগ্রেসের, এক জন বিজেপির। তাঁরা এই অভিযোগ দৃঢ় ভাবে নস্যাৎ করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:০৮
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

জেল থেকে এই প্রথম চিঠি লিখলেন সারদা সংস্থার কর্তা সুদীপ্ত সেন। এবং সেই চিঠিতে তিনি বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএমের শীর্ষ স্তরের কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। প্রেসিডেন্সি জেল থেকে এই চিঠি (চিঠির যে প্রতিলিপি আনন্দবাজারের কাছে রয়েছে, তার সারবত্তা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে পাঠানোর জন্য আর্জি জানিয়েছেন।

ওই নেতাদের মধ্যে দু’জন সিপিএমের, এক জন কংগ্রেসের, এক জন বিজেপির। তাঁরা এই অভিযোগ দৃঢ় ভাবে নস্যাৎ করেছেন। এই চিঠি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ‘কাঁচা হাতের কাজ’ বলেই জানিয়েছেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, সারদা-কাণ্ড নিয়ে যে বাম ও কংগ্রেস লড়াই করেছিল, এখন বিধানসভা ভোটের আগে তাদের নেতাদের ‘চরিত্রহনন’ করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আইনি পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানিয়ে রেখেছেন। তৃণমূলের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

২০১৩ সালে রাজ্য সরকারের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে সিবিআইকে চিঠি লিখেছিলেন সুদীপ্ত। সেখানেও কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। সিবিআই পরে কয়েক জন নেতাকে গ্রেফতার করে। হাতে লেখা দু’পাতার চিঠির যে প্রতিলিপি এ বার পাওয়া গিয়েছে, তাতে সুদীপ্তের আক্ষেপ, যে নেতাদের নাম তিনি লিখছেন, তাঁরা বেআইনি ভাবে টাকা নিয়েও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে জেলের ভিতরে সাড়ে সাত বছর চুপ করে থাকার পরে বিধানসভা
নির্বাচনের ঠিক আগে এমন চিঠি সুদীপ্ত লিখলেন কেন, আর এত দিন পরে কেনই বা বিভিন্ন নেতার নামের পাশে টাকার অঙ্ক বসালেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

সুদীপ্তের সই করা ১ ডিসেম্বরের চিঠিতে (প্রতিলিপিতে যা দেখা যাচ্ছে) দাবি করা হয়েছে, “সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি আমার কাছ থেকে প্রচুর আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশকে অনুরোধ করেছি।” প্রতিলিপি অনুযায়ী, এর পরেই তিনি অধীরবাবুর নাম করে দাবি করেছেন, তিনি নাকি ৬ কোটি টাকা নিয়েছেন। সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ৯ কোটি এবং বিমান বসুর বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগও দেখা যাচ্ছে প্রতিলিপিতে। রাজ্য রাজনীতি সরগরম করা, এক বিতর্কিত তৃণমূল নেতা তাঁর কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়েছেন বলেও দাবি সুদীপ্তের। এ প্রসঙ্গে অধীরের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের সরকার ভয় পেয়েছে। বাম ও কংগ্রেস জোটের নেতাদের তাই চরিত্র হনন করার চেষ্টা হচ্ছে। সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্তেরা তৃণমূলের মুখপাত্র হয়েছেন। জামিন পেলে সুদীপ্তবাবুও না মুখপাত্র হয়ে যান! তাই কি তাঁকে দিয়ে এ সব করানো হচ্ছে?’’ রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবুর মন্তব্য, ‘‘তাই না কি! দেখা যাক।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সাত বছর ধরে রাজ্য সরকারের সিট থেকে শুরু করে সিবিআই তদন্ত করে কিছু পেল না। শেষে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখছেন প্রতারণায় অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন। এতে কার সম্মান বাড়ছে, জানি না! তবে কাঁচা হাতের কাজ ধরা পড়ে যাচ্ছে।’’ তৃণমূলের তরফে অবশ্য রাত পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

চিঠির প্রতিলিপিতে মুকুল রায় সম্পর্কে আবার সুদীপ্তের দাবি, “তিনি এত বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন যে এখন মনেও করতে পারছি না।” মুকুল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সুদীপ্ত এখন জেলে আছেন। তিনি কী বললেন, তাতে কিছু যায় আসে না।’’

এ ছাড়াও সারদা-কর্তার দাবি, সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের আরও কিছু নেতা তাঁর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই নেতারাই এখন অন্যদের সমালোচনা করছেন।’’ এ সব কথা তিনি সিবিআইকে জানিয়েছেন বলেও দাবি সুদীপ্তের। তাঁর আরও দাবি, ‘‘যাঁরা আমার কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করেছেন, তাঁরাই এখন বিজেপি-তে গিয়ে যোগ দিচ্ছেন দেখে কষ্ট হয়।’’ রাজ্য সরকারকেও যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ তাঁর।

সূত্রের খবর, এই চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত তা পৌঁছনোর খবর মেলেনি। প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “জেলের নিয়ম মেনে সুদীপ্তবাবু চিঠি লিখেছেন। তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।”

Saradha Scam Sudipta Sen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy