Advertisement
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মিড ডে মিল খেয়েও অপুষ্টি শিশুদের, দাবি নাইসেডের

ভাতের সঙ্গে ডিম, সবজি। কোনও দিন খিচুড়ি। সপ্তাহের ছ’দিন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এটাই খাদ্যতালিকা। তবু অপুষ্টিতে ভুগছে পড়ুয়ারা। গুরুতর অপুষ্টির শিকার হয়েছে এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সরকারি স্কুলে মিড-ডে-মিল খেয়ে ছেয়েমেয়েদের কতটা পুষ্টি হচ্ছে, তার খোঁজ করতে গিয়ে এই তথ্য হাতে এসেছে কেন্দ্রীয় গবেষণা কেন্দ্র ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টারিক ডিজিজেস’ বা নাইসেড-এর। তাদের আরও পর্যবেক্ষণ, গ্রামাঞ্চলের অনেক স্কুলে পানীয় জলের সংস্থানও নেই।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ০৪:০৮
Share: Save:

ভাতের সঙ্গে ডিম, সবজি। কোনও দিন খিচুড়ি। সপ্তাহের ছ’দিন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এটাই খাদ্যতালিকা। তবু অপুষ্টিতে ভুগছে পড়ুয়ারা। গুরুতর অপুষ্টির শিকার হয়েছে এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সরকারি স্কুলে মিড-ডে-মিল খেয়ে ছেয়েমেয়েদের কতটা পুষ্টি হচ্ছে, তার খোঁজ করতে গিয়ে এই তথ্য হাতে এসেছে কেন্দ্রীয় গবেষণা কেন্দ্র ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টারিক ডিজিজেস’ বা নাইসেড-এর। তাদের আরও পর্যবেক্ষণ, গ্রামাঞ্চলের অনেক স্কুলে পানীয় জলের সংস্থানও নেই।

দারিদ্রের কারণে বহু পরিবারের বাচ্চার দু’বেলা পেটভরে খাবার জোটে না। ফলে স্কুলে যাওয়া তাদের কাছে বিলাসিতার মতো। এই ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করতে এবং একই সঙ্গে তাদের অন্তত একবেলা রান্না করা কিছুটা পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

এক দশকেরও বেশি আগে চালু হওয়া সেই ব্যবস্থা নিয়ে এখন প্রায় সর্বত্রই বিস্তর অভিযোগ উঠছে। নাইসেডের বক্তব্য, বাড়িতে যেটুকু বা খাবার পায় শিশুরা, তাতে কোনও পুষ্টি মেলে না। সেই ঘাটতিই পূরণের কথা ভাবা হয়েছিল মিড-ডে মিলের মাধ্যমে। কিন্তু আর্থিক নয়ছয়, খাবারের মান, রন্ধন প্রণালী, পরিচ্ছন্নতার মতো বিষয়গুলির ক্ষেত্রে মিড-ডে মিল ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন। ছাত্রছাত্রীর কাছে পৌঁছনোর আগেই রান্না করা খাবার চলে যাচ্ছে অন্যত্র। পড়ুয়ারা পরিমাণমতো খাবার পাচ্ছে না। রান্নার লোক রোজ আসছেন না বলে খাবার তৈরিই হচ্ছে না— অভিযোগ এমনই। নাইসেডের দাবি, প্রতিটি অভিযোগেরই কমবেশি সত্যতা রয়েছে।

রাজ্যের স্কুল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নাইসেডের রিপোর্ট হাতে পেয়ে উদ্বিগ্ন। বললেন, ‘‘অনেক অভিযোগ আমিও শুনেছি। এই রিপোর্ট পেয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক এবং দফতরের অন্য কর্তাদের নিয়ে দু’টি বৈঠক হয়েছে। সবাইকে বলা হয়েছে, স্কুলে গিয়ে নজরদারি করাটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে, তা না হলে জবাবদিহি করতে হবে।’’

মন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘প্রত্যেক পরিদর্শককে সপ্তাহে একদিন তাঁর এলাকার ১৫-২০টি স্কুলে যেতে হবে। রান্নার মান ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ১৫টি ‘কমিউনিটি কিচেন’ তৈরি করা হচ্ছে। ধাপে-ধাপে সংখ্যাটা বাড়বে। আশা করছি এর পর বাচ্চাদের অপুষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’’ তবে স্কুলে পানীয় জলের ব্যবস্থা না-থাকার কথা মানতে নারাজ মন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা ৯৩% স্কুলে পানীয় জলের ব্যবস্থা করে ফেলেছি।’’

২০১৪-১৫ সালের অর্থবর্ষে রাজ্যের ১২০০ প্রাথমিক ও উচ্চ-প্রাথমিক স্কুলের ২৪ হাজার পড়ুয়ার উপর সমীক্ষা চালায় নাইসেড। এ জন্য প্রতি জেলায় ৩০টি স্কুল বেছে নেওয়া হয়েছিল। বয়সের অনুপাতে একটি ছেলে বা মেয়ের উচ্চতা ও ওজন কত, তার ভিত্তিতে অপুষ্টির মাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রাথমিকে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে ২৬%। আর উচ্চ প্রাথমিকে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ১৯.৬% গুরুতর অপুষ্টির শিকার। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা। আবার, প্রাথমিকের ২৮.৬% এবং উচ্চ প্রাথমিকের ২৬.১% ছাত্রছাত্রী ‘হাই রিস্ক’-এ রয়েছে। এর অর্থ, তারা গুরুতর অপুষ্টির দোরগোড়ায়। ছাত্রীদের তুলনায় আবার ছাত্রদের মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা বেশি। সমীক্ষায় প্রকাশ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূম, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুরের মতো মোট ১০টি জেলার অনেক স্কুলে পানীয় জল নেই।

নাইসেডের ডেপুটি ডিরেক্টর তথা নিউট্রিশন মনিটরিং ব্যুরো-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান কমলেশ সরকারের আফশোস, ‘‘যথাযথ নজরদারির অভাবে একটা ভাল প্রকল্প নিষ্ফল হয়ে যাচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, কলকাতা শহরেও প্রাথমিকে ১০.৫% এবং উচ্চ প্রাথমিকে ৯.১% ছাত্রছাত্রীর মধ্যে চূড়ান্ত অপুষ্টির লক্ষণ স্পষ্ট। রাজ্যের ‘মিড ডে মিল কুকিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে’র সভাপতি অনুরাধা দেবের অভিযোগ, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় গ্রাম-প্রধানরা প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে নিজেদের লোক ঢোকাচ্ছে।

তাঁরা চাল, ডিম সরাচ্ছে। খাবারের টাকা দিয়ে খাবার কেনা হচ্ছে না। নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগ হয়ে যাচ্ছে, বাচ্চাগুলো খাবার পাচ্ছে না।’’ স্কুলশিক্ষা দফতরে বহুবার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ করেন অনুরাধাদেবী।

অন্য বিষয়গুলি:

National Institute of Cholera and Enteric Diseases niced mid day meal school children malnutrition nced claims partha chattopadhyay nutrition monitoring bureau
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy