E-Paper

বহু স্কুলে ক্ষতি, পড়ুয়ারা দিশাহারা পাহাড়ে-ডুয়ার্সে

বুধবার রাতে ফের বৃষ্টি শুরু হতেই দুশ্চিন্তা বেড়েছিল পাহাড় এবং ডুয়ার্সে। তবে বৃহস্পতিবার টানা বৃষ্টি হয়নি। মৌসম ভবন জানিয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাব কেটেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২০
ধসের জেরে গুঁড়িয়ে গিয়েছে স্কুল। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙের সুখিয়াপোখরিতে।

ধসের জেরে গুঁড়িয়ে গিয়েছে স্কুল। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙের সুখিয়াপোখরিতে। নিজস্ব চিত্র ।

কাদা, রাবিশে প্রায় ঢাকা পড়েছে বাড়িটা। এক সময়ে স্কুল ছিল। দুর্যোগের আগে। শনিবার রাতের দুর্যোগের পরে, দার্জিলিঙের সুখিয়াপোখরিতে ওই স্কুলের মতো পাহাড়ের মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক স্তরের কিছু স্কুলভবন কার্যত গুঁড়িয়ে গিয়েছে, কোনওটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। সব মিলিয়ে অন্তত ১৮টি স্কুল কম-বেশি বিপর্যস্ত বলে খবর প্রশাসন সূত্রের। লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন খোলার কথা থাকলেও, পরিস্থিতির জেরে স্কুল আপাতত বন্ধ।

সমতলের পরিস্থিতিও তথৈবচ। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির জলঢাকার বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণির সুস্মিতা রায় বলেন, ‘‘বাড়ি জলের তলায়। বইপত্র খাতা কিছুই বাঁচাতে পারিনি। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের চতুর্থ সিমেস্টার। অ্যাডমিট কার্ডও হারিয়ে গিয়েছে।’’ সে জেলার বকরিবাড়ির বাসিন্দা দশম শ্রেণির বনশ্রী রায়ের অভিজ্ঞতাও একই। তার কথায়, ‘‘বই-খাতা জলে ভিজে নষ্ট। তা না পেলে হয়তো পরীক্ষায় বসতে পারব না।’’ তবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়ারা যে স্কুলে পড়ে, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা বা সে জেলার জেলা স্কুল পরিদর্শকদের কোন পড়ুয়া কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার রিপোর্ট পাঠাতে বলা হচ্ছে। সেই তালিকা মিললে বই, খাতা-সহ যা সাহায্য লাগে, দেওয়া হবে।’’ মধ্যশিক্ষা শিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতরের নির্দেশানুসারে পদক্ষেপ করব।’’

বুধবার রাতে ফের বৃষ্টি শুরু হতেই দুশ্চিন্তা বেড়েছিল পাহাড় এবং ডুয়ার্সে। তবে বৃহস্পতিবার টানা বৃষ্টি হয়নি। মৌসম ভবন জানিয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাব কেটেছে। বিক্ষিপ্ত বজ্রগর্ভ মেঘ বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। পাহাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিপজ্জনক। সুখিয়ার গুদামদাড়া, সিয়কের ধস-বিধ্বস্ত এলাকায় পৌঁছতে বুধবার রাতে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর প্রধান অনীত থাপাকে আর্থমুভারে চাপতে হয়। এ দিন কালিম্পং এবং সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস নামে।

বন্যাকবলিত এলাকাগুলিতে কতটা ত্রাণ পাঠানো হয়েছে, এ দিন তা নিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে রাজ্য প্রশাসন বলেছে, ৩ কোটিরও বেশি টাকা ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে এবং মৃতদের পরিজনের জন্য মোট ১.৬০ কোটি টাকা অনুদান হিসাবে মঞ্জুর করেছে প্রশাসন। এ ছাড়াও ৩ লক্ষ তারপলিন এবং ৪.৫ লক্ষ পোশাক ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির জন্য ইতিমধ্যেই বরাদ্দ করা হয়েছে।

পাহাড়, ডুয়ার্সের অনেক এলাকাতেই ত্রাণ পর্যাপ্ত পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। বিজনবাড়ির পুলবাজার, মিরিক, সৌরিণী-সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় ৩৫টির বেশি ত্রাণ শিবিরে দশ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছেন।

ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ ডুয়ার্সেও। জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা ব্লকের বামনডাঙা চা বাগানে ত্রাণ বিলির সময় শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেবের গাড়ি দেখে ডায়না লাইনের বাসিন্দারা দাবি করতে থাকেন, তাঁরা ত্রাণ পাননি। মেয়রের গাড়ির পিছনে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কুজুরের ত্রাণ ভর্তি ট্রাক্টর ছিল। তা তাঁদের দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় ধূপগুড়ির গধেয়ারকুঠি পঞ্চায়েতে ত্রাণ বিলি করতে যান গৌতম। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুর্নবাসন নিয়ে কিছু বলা হচ্ছে না। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, বিভিন্ন এলাকায় মাটি পরীক্ষার পরে জায়গা চিহ্নিত করে গৃহহারাদের বাড়ির বিষয়ে ব্যবস্থা হবে। ধূপগুড়ির বগড়িবাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি মেরামতি ও পলি, আবর্জনা সরানো হয়নি বলে ক্ষোভ। এলাকার রূপচাঁদ মণ্ডল বলেন, “ত্রাণের খাবার পেয়েছি। কিন্তু এলাকায় কত কী জমে আছে, পচাগন্ধ বেরোচ্ছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Darjeeling Dooars

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy