Advertisement
E-Paper

কোষ্ঠকাঠিন্যে কাবু বাংলার স্কুলবেলাও

পেটের সমস্যার সঙ্গে, বিশেষত নিয়মিত পেট সাফ না-হওয়ার সমস্যার সঙ্গে বিশ্বের তাবৎ সঙ্কটের অদ্ভুত আত্মীয়তা দেখতে পেতেন ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং সেই ‘পৈটিক’ বিপত্তিতে ভুগে বিপুল উদ্বেগ হয়ে উঠেছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী।

মধুরিমা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৮

পেটের সমস্যার সঙ্গে, বিশেষত নিয়মিত পেট সাফ না-হওয়ার সমস্যার সঙ্গে বিশ্বের তাবৎ সঙ্কটের অদ্ভুত আত্মীয়তা দেখতে পেতেন ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং সেই ‘পৈটিক’ বিপত্তিতে ভুগে বিপুল উদ্বেগ হয়ে উঠেছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী।

রুপোলি পর্দার ‘পিকু’র সত্তরোর্ধ্ব বাবা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে থাকলে এটা জেনে হয়তো আরও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতেন যে, শুধু বেশি বয়সে নয়, পেটের নানান বিটকেল রোগ, এমনকী কোষ্ঠকাঠিন্যও হানা দিচ্ছে স্কুলবেলা থেকেই। আর সেগুলো মোটেই বদহজমের মতো পেট খারাপের সাধারণ সমস্যা নয়।

সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, স্কুলপড়ুয়াদের ৪০ শতাংশই ভুগছে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায়। এবং এ ক্ষেত্রেও চিকিৎসকেরা কাঠগড়ায় তুলছেন বর্তমান দিনযাপনের অনিয়মকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়, এটাই ছিল এত দিনকার সাধারণ ও স্বাভাবিক প্রবণতা। কিন্তু ওই সমীক্ষা জানাচ্ছে, সেই স্বাভাবিকতায় তুড়ি মেরে শিশু-কিশোরদের মধ্যে গেড়ে বসছে এই আপাত-নিরীহ রোগ।

চিকিৎকেরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে থাকলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। প্রথম থেকে সতর্ক না-হলে তা বাচ্চার বৃদ্ধিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। এই রোগ খিদে কমিয়ে দেয়। খাবারে অনীহার দরুন ঘাটতি পড়ে পুষ্টিতে। ব্যাহত হয় স্বাভাবিক বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে পেটের যন্ত্রণা হয়ে উঠতে পারে নিত্যসঙ্গী। হতে পারে অর্শ, আলসারও। চিকিত্সকেরা জানাচ্ছেন, বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দু’সপ্তাহের বেশি হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডাক্তারের পরামর্শ নিতে গিয়েই টনক নড়ে সোহমের মা-বাবার। পেটের যন্ত্রণায় কষ্ট পেত ষষ্ঠ শ্রেণির সোহম। পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার অর্শ হয়েছে। মাত্র ১১ বছর বয়সে অর্শের কথা শুনে অবাক হয়ে যান তার মা-বাবা। ডাক্তারেরা জানান, সোহমের মতো কমবয়সিদের কারও বা অর্শ, কারও আলসার ধরা পড়ছে। কেউ বা ভুগছে দীর্ঘদিনের পেটের যন্ত্রণায়।

কম বয়সের এই সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। কেন? চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, এই বয়সে দিনের একটা বড় অংশ কাটে স্কুলে বা কোচিংয়ে। সেই সময়ে অনিয়ম ও অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়াই ইন্ধন জোগাচ্ছে এই রোগে। সাধারণত সেই বাচ্চারাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগে, ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার (গম বা যবের রুটি, নানান সব্জি) যাদের আদৌ খাওয়া হয় না বা কম খাওয়া হয়। অনেকেই হুটহাট রেস্তোরাঁয় খেতে ছোটেন। সঙ্গী হয় ছোটরাও। এ ভাবে অত্যধিক ‘প্রক্রিয়াজাত’ এবং ‘জাঙ্কফুড’ই ডেকে আনছে রোগ, মত চিকিত্সকদের। এর সঙ্গে রয়েছে জল কম খাওয়ার প্রবণতা। এর ফলে শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য নয়, দেখা যায় কিডনির সমস্যাও।

প্রতিকার কী?

‘‘শিক্ষকেরা তো ছোটদের ‘হোমটাস্ক’ দেন। ‘স্কুলটাস্ক’ দিতে পারেন অভিভাবকেরা। যেমন, বাচ্চাকে বলে দিতে হবে, স্কুলে অন্তত এক বোতল জল খেতেই হবে। তা হলে কিডনির সমস্যা এড়াতে ছোট থেকেই সতর্ক হওয়া যায়,’’ বলছেন ইউরোলজিস্ট শিবাজী বসু। টিফিনে ফাইবার জাতীয় খাবার নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন গ্যাসট্রোএন্ট্রোলজিস্ট সত্যপ্রিয় দে সরকার। তিনি বলেন, ‘‘বারে বারে খেতে হবে। বাচ্চাদের টিফিনে আটার রুটি বা কেক দেওয়া উচিত। আর ফলের রস নয়, আস্ত ফল।’’ তাঁর বক্তব্য, ডায়াবেটিসের সমস্যা ভারতে খুব বেশি। তাই ছোটদের কার্বোহাইড্রেটের উপরে নির্ভরশীল না-করে তোলাই ভাল।

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগের জন্য অভিভাবকদের দিকে আঙুল তুলছেন গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট অভিজিত্ চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘‘মা-বাবা তো বাচ্চাদের একাধিক কোচিং ক্লাসে পাঠানোর ব্যাপারটায় খুব জোর দেন। তাঁরা যদি ‘টয়লেট ট্রেনিং’ (কোষ্ঠ সাফ করতে রোজ দু’‌বেলা বড় বাথরুমে যাওয়া) বিষয়টিকেও সমান গুরুত্ব দেন, বাচ্চাদের স্বাস্থ্যরক্ষার অভ্যাস নিজের থেকেই তৈরি হয়ে যেতে পারে।’’

west bengal schools constipation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy