E-Paper

চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে বিপাকে স্কুলগুলি, কম বেতনে অমিল কর্মী

যে সব স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই, সেখানে স্কুল চালানোই কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠছে। এই সমস্যা যে অদূর ভবিষ্যতে মিটবে, সেই সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন না প্রধান শিক্ষকেরা।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৫ ০৮:৩৩

কর্মখালির বিজ্ঞাপন দেওয়াটাই শুধু বাকি আছে।

কলকাতার যে সব স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা চাকরি হারিয়েছেন, সেই সব স্কুলগুলির কয়েকটি ওই সব পদে অস্থায়ী কাজ দিতে চাইছে। বেতন মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, ওই বেতনে রাজি হচ্ছেন না কেউ। পুরুষ প্রার্থীরা জানাচ্ছেন, অ্যাপ-ক্যাব চালিয়ে বা অনলাইনে খাবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজে অনেক বেশি রোজগার। কেন সেই কাজ ফেলে তাঁরা স্কুলে আসবেন? আর মহিলারা জানাচ্ছেন, আয়ার কাজে বা অঙ্গনওয়াড়ির কাজে তাঁরা বেশি স্বচ্ছন্দ। এ দিকে, যে সব স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই, সেখানে স্কুল চালানোই কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠছে। এই সমস্যা যে অদূর ভবিষ্যতে মিটবে, সেই সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন না প্রধান শিক্ষকেরা।

যেমন কলকাতার শিয়ালদহ অঞ্চলের টাকি হাউস গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শম্পা চক্রবর্তী জানান, তাঁদের স্কুলে চার জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন। তাঁদের এক জন অবসর নিয়েছেন। বাকি তিন জনই এসএসসি-র ২০১৬ প্যানেলে ছিলেন। ওই তিন জন চাকরিহারা হয়েছেন। শম্পা বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে অনেক পড়ুয়া। নৈশপ্রহরী ও ঝাড়ুদার স্কুলের নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা দিয়ে অস্থায়ী ভাবে রাখতে হয়েছে। অস্থায়ী ভাবে দু’জন করণিকও রাখতে হয়েছে। এই চার জনের খরচ স্কুলের তহবিল থেকেই দেওয়া হচ্ছে। যদিও তহবিলের খুব খারাপ অবস্থা, তা-ও হাজার পাঁচেক টাকা দিয়ে অন্তত এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রাখতে চাইছিলাম। কিন্তু কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। আট হাজার টাকার কমে কেউ কাজ করতে চাইছেন না। সঙ্গে চাই পুজোর বোনাস। আট হাজার টাকা দিয়ে কাউকে রাখার মতো স্কুলের তহবিলের জোর নেই।’’ তিনি জানান, স্কুলের ঘণ্টা বাজানো ছাড়াও ফাইল দেওয়া-নেওয়া, ব্যাঙ্কে যাওয়া, জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসে কোনও ফাইল পৌঁছে দেওয়ার মতো কাজ করেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা। সেই সব কাজ এখন কে করবেন, ফাঁপরে পড়েছে স্কুলগুলি।

যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বলেন, ‘‘কয়েক জন স্পষ্ট জানালেন, অনলাইনে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়ে মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা উপার্জন করেন। আর এক জন জানালেন, অ্যাপ-ক্যাব চালিয়ে ১৫ হাজারের বেশি উপার্জন হয়। অন্তত ১২ হাজারের কমে স্কুলে কাজ করতে পারবেন না। অ্যাপ-ক্যাব চালিয়ে স্কুলে আং‌শিক সময়ের জন্য কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তাতেও কেউ রাজি হচ্ছেন না।’’ অমিতের মতে, হয়তো কোনও বয়স্ক মানুষ এই কাজে রাজি হতে পারেন। কিন্তু স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর কাজে অনেক সময়েই বাইরে যেতে হয়, বয়স্ক মানুষেরা কি সেই কাজে স্বচ্ছন্দ হবেন? উত্তর নেই স্কুলগুলির কাছেও।

বাঙুরের নারায়ণ দাস মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া জানান, তাঁদের স্কুলে এক জন কর্মীর চাকরি গিয়েছে। তাঁর মতে, যা পরিস্থিতি, তাতে গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদে এখনই নতুন নিয়োগ হচ্ছে না। যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাঁরাও স্কুলে ফিরতে পারবেন কিনা, তার উত্তর নেই। সঞ্জয় বলেন, ‘‘মাসে হাজার পাঁচেক টাকা অর্থাৎ বছরে ৬০ হাজার টাকা স্কুলের তহবিল থেকে দিয়ে কর্মী রাখা খুবই কঠিন। তবু চেষ্টা করছি। কিন্তু পাচ্ছি না।’’

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা শিক্ষক-নেতা নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘কলকাতা শহরের যে স্কুলগুলি থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের চাকরি গিয়েছে, সর্বত্র এই সমস্যা। গ্রামাঞ্চলের স্কুলে এই সমস্যা কিছুটা কম। সেখানে তবু হাজার পাঁচেক টাকায় হয়তো লোক পাওয়া যাবে।’’ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেও গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে, তা নিয়ে অবশ্য শিক্ষা দফতরের কোনও কর্তা মন্তব্য করতে চাননি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Schools SSC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy