Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal News

মিনাখাঁয় পুলিশের বাধায় পিছু হঠল বিজেপি, ২ কর্মীর দেহ ফিরছে সন্দেশখালিতেই

মালঞ্চর কাছে আসতেই পুলিশ সেই কনভয় আটকায়। আগে থেকেই সেখানে মোতায়েন ছিল র‌্যাফ। পুলিশ ও র‌্যাফ কনভয় আটকানোর চেষ্টা করতেই বিজেপি নেতা-নেত্রীরাও বলপ্রয়োগ শুরু করেন।

বিজেপি নেতাদের কনভয় আটকে দেওয়ার পর। —নিজস্ব চিত্র

বিজেপি নেতাদের কনভয় আটকে দেওয়ার পর। —নিজস্ব চিত্র

সোমনাথ মণ্ডল
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৯ ১৮:১৬
Share: Save:

সন্দেশখালিতে নিহত ২ বিজেপি কর্মীর দেহ কলকাতায় আনা ঘিরে দফায় দফায় ধুন্ধুমার। মিনাখাঁয় পুলিশের বাধায় শেষ পর্যন্ত পিছু হঠল বিজেপি। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার পর বিজেপি নেতৃত্বের ঘোষণা, ‘মানবিকতা’র কারণেই দেহ দু’টি সন্দেশখালিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মিনাখাঁর বামনপুকুরে রাস্তার উপর সৎকারের ঘোষণা করেও পরিবারের দিকে তাকিয়েই সিদ্ধান্ত বদল করেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু আগামিকাল সোমবার বসিরহাট মহকুমায় ১২ ঘণ্টার বন‌্ধের ডাক দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি ১২ জুন বুধবার ‘মহাধিক্কার মিছিল’ করবে বিজেপি।

শনিবার সন্দেশখালিতে বিজেপি কর্মীদের মৃত্যুর পর আজ রবিবার এলাকা পরিদর্শনে যান বিজেপি নেতা-সাংসদদের ৭ জনের একটি প্রতিনিধি দল। গতকাল নিহত দু’জনের দেহ বসিরহাট হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। তার পর মৃতদেহ নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব প্রথমে নিহতদের বাড়িতে যান। সেখান থেকে দু’টি শববাহী গাড়িতে মৃতদেহ-সহ দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহ, অর্জুন সিংহ, লকেট চট্টোপাধ্যায়র মৃতদেহ নিয়ে কলকাতার দিকে রওয়ানা হন।

কিন্তু মালঞ্চর কাছে আসতেই পুলিশ সেই কনভয় আটকায়। আগে থেকেই সেখানে মোতায়েন ছিল র‌্যাফ। পুলিশ ও র‌্যাফ কনভয় আটকানোর চেষ্টা করতেই বিজেপি নেতা-নেত্রীরাও বলপ্রয়োগ শুরু করেন। প্রশ্ন করতে থাকেন, কেন আটকানো হচ্ছে তাঁদের? এর পরই শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি। ওই পরিস্থিতির মধ্যে পুলিশ-র‌্যাফের বাধা টপকে কলকাতার দিকে এগিয়ে আসে কনভয়। এই মালঞ্চ এলাকাতেই ধস্তাধস্তির সময় বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তথা হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ দলের।

কিন্তু তার চেয়েও বড় উত্তেজনা ছড়ায় মিনাখাঁয়। মালঞ্চ মোড়ে পুলিশের বাধা পেরিয়ে বিজেপি নেতা-নেত্রীদের কনভয় ও শববাহী দু’টি গাড়ি কলকাতার দিকে এগিয়ে এলেও আটকে পড়ে বামনপুকুরে। সেখানে পৌঁছতেই ফের আটকে পড়ে কনভয়। কারণ, আগে থেকেই রাস্তার উপর আড়াআড়ি ভাবে প্রিজন ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিল পুলিশ ও র‌্যাফ। বিজেপি নেতারা গাড়ি থেকে নেমে স্লোগান দিতে শুরু করেন। গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন দলের নেতা-নেত্রীরা। পুলিশকে প্রশ্ন করেন, কেন তাঁদের আটকানো হচ্ছে? কিন্তু সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি কর্তব্যরত পুলিশ কর্মী-আধিকারিকরা। তবে তাঁরা সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন, কোনও ভাবেই মৃতদেহ কলকাতায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। সন্দেশখালির গ্রামেই ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে সৎকার করতে হবে দেহ দু’টি।

আরও পড়ুন: প্রদীপের বাড়ির সামনে চাপ চাপ রক্ত, পড়ে রয়েছে বুলেটের খোল, হাটগাছিয়ায় জারি ১৪৪ ধারা

আরও পড়ুন: ‘গন্ডগোলটা আর রাজনৈতিক নেই’ দাবি বিজেপির, সুপারি কিলার দিয়ে খুন, পাল্টা জ্যোতিপ্রিয়র

উল্টো দিকে বিজেপি নেতৃত্বও সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ। সেখানে দাঁড়িয়েই দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহ, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা হুঁশিয়ারি দেন, কলকাতায় নিয়ে যেতে না দিলে বামনপুকুরেই দেহ দুটি দাহ করা হবে। সেই মতো শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতিও। কাঠ নিয়ে এসে রাস্তার উপরেই শুরু হয় চিতা সাজানোর প্রক্রিয়া। মৃতদের পরিবারের সদস্যরাও চলে আসেন।

দীর্ঘক্ষণ দু’পক্ষের এই নাছোড় মনোভাবের জেরে গোটা এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। বিজেপি কর্মীরা স্লোগান-বিক্ষোভ করতে থাকেন। উল্টো দিকে রাস্তাও পুরোপুরি বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছুক্ষণ পর পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বিজেপি নেতারা কথা বলেন। তার পরই দেহ সন্দেশখালিতেই ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘মৃতের পরিবারের সদস্যরা শোকগ্রস্ত। তাঁরা মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাই মানবিকতার কারণেই সিদ্ধান্ত বদল করা হয়েছে। মৃতদেহ সন্দেশখালিতেই নিয়ে গিয়ে সেখানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।’’

মিনাখাঁর বামনপুকুরে চিতা সাজাচ্ছেন বিজেপি কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র

রাহুল সিংহর এই ঘোষণার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিজেপি কর্মী এবং মৃতদের পরিজনরাও গাড়ি ঘুরিয়ে সন্দেশখালির উদ্দেশে রওয়ানা দেন। তবে বামনঘাটায় দাঁড়িয়েই আাগামিকাল ১২ ঘণ্টার বসিরাহাট মহকুমা বন্‌ধ এবং বুধবারের ‘মহাধিক্কার মিছিল’-এর কথা ঘোষণা করেন রাহুল সিংহ।

অন্য দিকে সন্দেশখালির ঘটনার পর কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিজেপি। হাজরা মোড়ে এই প্রতিবাদ-মিছিল ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sandeshkhali BJP Scuffle Minakha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE