Advertisement
E-Paper

চাকদহে সমবায় গড়ে পথ দেখাচ্ছেন নয়নেরা

শীতের রাত। ঘড়িতে তখন ভোর ৪টে। হঠাৎ বেজে উঠল মোবাইলটা। ঘুম ভেঙে যায় বাড়ির সকলের। আঁতকে ওঠেন ওঁরা। এই বুঝি কোনও দুঃসংবাদ এল। দুরু দুরু বুকে ফোনটা ধরলেন গৃহকত্রী নয়ন মজুমদার। ফোনের ও প্রান্ত থেকে এক মহিলা তখন বলে চলেছেন, ‘‘ও দিদি, বাছুর হয়েছে গো। খবরটা দিতেই ফোন করলাম।’’

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০২:১৮
দুধের গুণাগুণ পরীক্ষা করতে ব্যস্ত গ্রামের মহিলারা। — নিজস্ব চিত্র

দুধের গুণাগুণ পরীক্ষা করতে ব্যস্ত গ্রামের মহিলারা। — নিজস্ব চিত্র

শীতের রাত। ঘড়িতে তখন ভোর ৪টে। হঠাৎ বেজে উঠল মোবাইলটা। ঘুম ভেঙে যায় বাড়ির সকলের। আঁতকে ওঠেন ওঁরা। এই বুঝি কোনও দুঃসংবাদ এল। দুরু দুরু বুকে ফোনটা ধরলেন গৃহকত্রী নয়ন মজুমদার। ফোনের ও প্রান্ত থেকে এক মহিলা তখন বলে চলেছেন, ‘‘ও দিদি, বাছুর হয়েছে গো। খবরটা দিতেই ফোন করলাম।’’

চাকদহের মহেশচন্দ্রপুরের নয়ন মজুমদারের ধ্যান-জ্ঞান দুগ্ধ সমবায় সমিতি। আর সেই কারণেই রাত না পোহাতেই সমিতির ওই সদস্যা নয়নদেবীকে ফোন করেছিলেন। গোয়ালাদের হাজারও কারচুপির প্রতিবাদে বছর দেড়েক আগে এই গ্রামে গড়ে ওঠে মহিলা দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতি।

গাঁ-গঞ্জে দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা চাষিদের দাদন দেন। গরিব চাষিরা সেই দাদন নিয়ে বাধ্য হন গোয়ালাদের দুধ বেচতে। অভিযোগ, গোয়ালারা সেই সুযোগে কম দামে ওই দুধ কেনেন। ওজনেও কারচুপিও হয়। আর সেই দাদন প্রথার বিরুদ্ধে ওই সমিতি গড়ে তোলেন মহিলারা। যে সমিতির নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন নয়নদেবী।

কী ভাবে কাজ করছে সমবায়? আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ৭৬ জন এই সমবায়ের সদস্য। তাঁরা দুপুরের দুধ সমিতিতে দেন। ওজনও ঠিকঠাক। দাম পান গড়ে ২৩ টাকা কেজি। সংগৃহীত দুধ চলে যায় হরিণঘাটা ফার্মে। আর সমিতির সদস্যরা ন্যাশনাল ডেয়ারি প্ল্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের আর্থিক সুযোগ সুবিধা পান। গোয়ালঘর তৈরির টাকা পান সমিতির সদস্যরা। তাছাড়া উন্নত মানের ঘাসের বীজ, গো-খাদ্যও ভর্তুকিতে মেলে। দুধের পাত্র পাওয়া যায় নিখরচায়।

সমিতির সম্পাদিকা নয়ন মজুমদার জানান, সমবায় গড়তে খুব বেগ পেতে হয়েছিল। অনেকেই ভরসা রাখতে পারছিলেন না। এখন এলাকার ৭৬ জন সমিতির সদস্য। মহাজনদের কাছ থেকে এলাকার পরিবারগুলি রক্ষা পেয়েছে। মহাজনের অত্যাচার প্রসঙ্গে বলতে গিয়েছে নয়নদেবী জানাচ্ছেন, দিনকয়েক আগে গ্রামের এক মহিলা তাঁর কাছে দুধ নিয়ে আসেন। গোয়ালা তাঁকে জানান, এক কেজি দুধ রয়েছে। কিন্তু তিনি মেপে দেখেন ১১০০ মিলিলিটার দুধ রয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে সেই মহিলা সমাবায়ে দুধ বিক্রি করেন।

নয়নদেবীর বাড়ির উঠোনের এক পাশে ইট ও টালির ছাউনি দেওয়া ছোট্ট ঘরে সমবায়ের কার্যালয়। অল্প সময়ের মধ্যেই সমবায় সকলের নজর কেড়েছে। সমিতির পাঁচ সদস্যকে গুজরাতের আনন্দে ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভলপমেন্ট বোর্ডের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুগ্ধ উৎপাদনের নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে তাঁদের শেখানো হয়। দুধের বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য তৈরিরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ওই পাঁচ জনকে। দিনকয়েক আগে ওই বোর্ডের একটি প্রতিনিধি দল আসেন মহেশচন্দ্রপুরের দুগ্ধ মহিলা সমবায় পরিদর্শন করতে।

মহেশচন্দ্রপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার অনুপকুমার সরকার বলেন, ‘‘মহেশচন্দ্রপুরের ওই সমিতি ভাল কাজ করছে। দি কিষাণ কো অপারেটিভ মিল্ক প্রডিউসার্স ইউনিয়ন বিষয়টি দেখভাল করে।’’ মিল্ক ইউনিয়নের পক্ষে নারায়ণচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘সমিতির সদস্যদের গো-পালনের উপযোগী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়। তাছাড়াও লিটার প্রতি কমিশন পান সমিতির সদস্যরা। ওঁদের কয়েক জনকে গোয়ালঘর তৈরির জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এতে মহাজনদের জুলুম বন্ধ হয়েছে।’’ আর নয়নদেবীরা শুধু নিজেরাই স্বনির্ভর হননি, স্বাবলম্বী করে তুলেছেন গ্রামের আরও পাঁচ জনকে।

Chakdaha Dairy cooperative society Dairy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy