Advertisement
E-Paper

আর আসবেন না দাদা, কান্নায় কৃষ্ণ

জয়ন্ত-সুকান্তদের কথাই যেন সুরটা বেঁধে দিয়েছিল পাড়ার। ২০০৮ সালে পুজোর পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রিয়। তার পর থেকে বাড়িতে লোক সমাগম কমতে থাকে। গত কয়েক বছর দীপা দাশমুন্সিও বিশেষ আসতে পারেননি, বলছিলেন প্রতিবেশীরা। ফলে বাড়ি ঘিরে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে অনেক দিনই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৯
স্মৃতি: ১৯৯৯ সালে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনে জেতার পরে স্ত্রী দীপার সঙ্গে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ফাইল চিত্র

স্মৃতি: ১৯৯৯ সালে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনে জেতার পরে স্ত্রী দীপার সঙ্গে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ফাইল চিত্র

ন’বছর আগে শেষ বার এসেছিলেন পুজোর সময়ে। ঠিক ছিল, পুজো কাটিয়ে বাগডোগরা দিয়ে দিল্লি ফিরবেন। ফিরেছিলেন বটে, তবে সোজা দিল্লির এইমসে। তখন যমে-মানুষে টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে প্রিয়রঞ্জনকে নিয়ে।

‘‘সে দিন থেকে অপেক্ষা করে বসে আছি, কবে প্রিয়দা সুস্থ হয়ে ফিরবেন,’’ বলছিলেন জয়ন্ত ও সুকান্ত চক্রবর্তী। কালিয়াগঞ্জে যে পাড়ায় দাশমুন্সি পরিবারের সাদা-সবুজ দোতলা বাড়ি, সেই শ্রীকলোনিতেই থাকেন ওঁরা। দাশমুন্সি বাড়ির পুজোয় মিশে যেতেন অন্যদের মতো। সেই স্মৃতিই এ দিন উঠে আসছিল বারবার ওঁদের কথায়, ‘‘পুজোর সময়ে সকাল-বিকেল আড্ডা। নানা জায়গা থেকে কত লোক আসত। তার পর ছিল ওঁর ধুনুচি নাচ। হাসি-ঠাট্টা-গল্পে সকলের সঙ্গে মিশে যেতেন প্রিয়দা।’’ সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে এল আক্ষেপ, ‘‘ভাবতে পারছি না, আর কোনও দিন তিনি আসবেন না!’’

জয়ন্ত-সুকান্তদের কথাই যেন সুরটা বেঁধে দিয়েছিল পাড়ার। ২০০৮ সালে পুজোর পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রিয়। তার পর থেকে বাড়িতে লোক সমাগম কমতে থাকে। গত কয়েক বছর দীপা দাশমুন্সিও বিশেষ আসতে পারেননি, বলছিলেন প্রতিবেশীরা। ফলে বাড়ি ঘিরে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে অনেক দিনই।

গত ১৮ বছর ধরে বাড়ির দেখভাল করেন কৃষ্ণ সরকার। তিনি বলছিলেন, ‘‘এই শূন্যতায় হাঁফিয়ে উঠছি। আগে ধুমধাম করে পুজো হতো। তার পরেও দাদা নানা সময়ে আসতেন। বাড়ি গমগম করত। এখন কেউ নেই। অন্য দাদারাও বাইরে থাকেন। বৌদিও নানা কাজে ব্যস্ত। মিছিলও কত দিন আসে না!’’

পড়শিরা বলছিলেন, লোকজন নিয়ে হইচই করতে ভালবাসতেন প্রিয়। বলতেন, এতে জনসংযোগও হয়। হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে হেরে যাওয়ার পরে রায়গঞ্জে নিজের এলাকায় ফিরে এসেছিলেন তিনি। ১৯৯৯ ও ২০০৪ সালে পরপর এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন। তখন তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা। তাই জনসংযোগটা ছিল তাঁর জীবনের অঙ্গ। তাই বরাবরই লোকজনের সঙ্গে মিশে যেতে তিনি।

দলমত নির্বিশেষে অনেকেই দেখা করতে আসতো প্রিয়র সঙ্গে। তৃণমূলের এখনকার জেলা সভাপতি অমল আচার্য এক সময়ে কংগ্রেসেই ছিলেন। এ দিন বলেন, ‘‘আমরা অনেকেই প্রিয়দার শিষ্য। এখানে তো দলটা বড় বিষয় নয়। রাজনীতিটা তো ওঁর কাছেই শিখেছি।’’ কংগ্রেস নেতা মোহিত সেনগুপ্তের সঙ্গে একসময়ে ঠান্ডা লড়াই ছিল প্রিয়র। এ দিন মোহিত বুঝিয়ে দিলেন, সে সব অনেক আগেই অতীত হয়ে গিয়েছে। বললেন, ‘‘আমরা অভিভাবকহীন হলাম আজ।’’

জয়ন্তবাবুদের কথায়, ন’বছর আগে এসেও সবার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু একই সঙ্গে বারবার বলছিলেন, শরীরটা বিশেষ ভাল নেই। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল!

সেই থেকে এই বাড়ি আগলে বসে আছেন কৃষ্ণবাবু। বলছিলেন, ‘‘নিজেকে মাঝে মাঝে যক্ষের মতো মনে হয়।’’ বলছিলেন, ‘‘আগে তো দাদা বাড়ি ফিরেই গলা ফাটিয়ে বলতেন— কৃষ্ণ, কালো জিরে ফোড়ন দিয়ে পাতলা মাছের ঝোল আর গরম ভাত খাওয়া তো! অনেক সময়ে দিল্লি যাওয়ার আগে বলে যেতেন, ‘এই টাকাটা রাখ! বউ-ছেলেকে কিছু কিনে দিস’। এ সব আর বলবেন না দাদা!’’

বলতে বলতে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন কৃষ্ণবাবু।

১৯৬৯ সাল। যুক্তফ্রন্টের সরকার। কোচবিহারে একটি সভায় প্রিয়দার কথা শুনে মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম। প্রিয়দা ডেকে বললেন, ‘তুমি ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতির দায়িত্ব নাও।’ সেই থেকে কংগ্রেসে। প্রিয়দা নেই শুনে আজ কিছু ভাল লাগছে না।

শ্যামল চৌধুরী
কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি

প্রিয়দার সঙ্গে প্রথম দেখা ১৯৬৬ সালে মহাজাতি সদনে। তাঁর হাত ধরেই ছাত্র রাজনীতি। মন্ত্রী থাকাকালীন তিস্তা ক্যানেলের জন্য টাকা বরাদ্দ করেন। চা শ্রমিকদের নিয়ে ভাবতেন। অসুস্থ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও আলোচনা করেছিলেন।

বিশ্বরঞ্জন সরকার
আলিপুরদুয়ার কংগ্রেস সভাপতি

আমাদের পরিবারের সঙ্গে প্রিয়বাবুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। আমার কেন্দ্রেরও সাংসদ ছিলেন তিনি। মা, মামা মারা যাওয়ার সময় তিনি আমাদের পাশে ছিলেন। আজকে মনে হচ্ছে যেন সম্পূর্ণ অভিভাবকহীন হলাম। তাঁর পরিবারের পাশে আছি।

মৌসম নুর
মালদহ কংগ্রেস সভানেত্রী

মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে পুরনো দিনের কথা মনে হচ্ছে। যে দিন প্রথম পরিচয় হয়েছিল সে দিনটা এখনও চোখে ভাসছে। ফুটবল জগতের সঙ্গেও দীর্ঘ যোগাযোগ ছিল তাঁর। প্রিয়দার প্রয়াণে শুধু রাজনীতি নয়, ফুটবলের জগতেও বড় ক্ষতি হল

গোলাম রব্বানি
গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী

Priya Ranjan Dasmunsi প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy