Advertisement
E-Paper

অভিজিতের সমর্থনে সাত উপাচার্য

এত দিন সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি তাঁরা। এ বার দাঁড়ালেন। এর আগে ৫০-৫২ ঘণ্টা ঘেরাও থেকেছেন যাদবপুরের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের তালা ভেঙে ক্যাম্পাসে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে বহিরাগতরা। সিন্ডিকেট বৈঠক চলাকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দল বহিরাগত নিয়ে ভিতরে ঢুকে বেনজির বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিলেন টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। কিন্তু কোনও ঘটনাতেই সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি ওঁরা। এ বার দাঁড়ালেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৮
উপাচার্যদের সাংবাদিক বৈঠক। মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে।  নিজস্ব চিত্র

উপাচার্যদের সাংবাদিক বৈঠক। মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে। নিজস্ব চিত্র

এত দিন সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি তাঁরা। এ বার দাঁড়ালেন।

এর আগে ৫০-৫২ ঘণ্টা ঘেরাও থেকেছেন যাদবপুরের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের তালা ভেঙে ক্যাম্পাসে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে বহিরাগতরা। সিন্ডিকেট বৈঠক চলাকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দল বহিরাগত নিয়ে ভিতরে ঢুকে বেনজির বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিলেন টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। কিন্তু কোনও ঘটনাতেই সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি ওঁরা। এ বার দাঁড়ালেন।

গত ২২ দিনে রাজ্য জুড়ে ১৯টি ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। একটিরও নিন্দা পর্যন্ত করেননি ওঁরা। এ বার করলেন।

মঙ্গলবার রাজ্যের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিলেন, যাদবপুরের সাম্প্রতিক অচলাবস্থার দায় ছাত্রছাত্রীদেরই। যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পাশে দাঁড়াতেই যে তাঁদের এই সাংবাদিক বৈঠক, তা-ও স্পষ্ট করে দিলেন সাত উপাচার্য। তবে এই দলে ছিলেন না কলকাতা, প্রেসিডেন্সি বা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস যাদবপুর-কাণ্ডে এত দিন মুখই খোলেননি। আর এখন রাজ্য সরকার নিযুক্ত তদন্ত কমিটির প্রধান হওয়ায় তাঁর পক্ষে আর মুখ খোলা সম্ভব নয়। তবে প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া এ দিন যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে আলাদা ভাবে বলেছেন, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে সে দিন অত রাত পর্যন্ত ঘেরাও চলেছিল। তবে তার চেয়েও বেশি দুর্ভাগ্যজনক হল ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকার ঘটনা।”

অনুরাধাদেবী এ কথা বললেও সাংবাদিক বৈঠকে বসে সাত উপাচার্যের দাবি “প্রেসিডেন্সির উপাচার্য ফিন্যান্স কমিটির একটি বৈঠকে ব্যস্ত আছেন বলে আসতে পারেননি। তবে সকলেই আমাদের সঙ্গে একমত।”

অভিজিৎবাবুকে দক্ষ প্রশাসক এবং ছাত্র দরদী হিসেবে উল্লেখ করে সাত উপাচার্যের দাবি, তাঁরা পঠনপাঠনের উন্নতির জন্যই সাংবাদিক সম্মেলন করছেন। রাজনৈতিক বা পেশার তাগিদে নয়। যদিও ওই সাত জনের মধ্যে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরাধা মুখোপাধ্যায় এবং সিধো কানহু বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শমিতা মান্না অস্থায়ী উপাচার্য পদে রয়েছেন এবং নিজেদের পদ স্থায়ীকরণের তাগিদেই ওঁরা দু’জন এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে হাজির ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের মধ্য থেকেই। যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি দুই অস্থায়ী উপাচার্যই।

এ দিন সরব হওয়া উপাচার্যদের সকলেই তৃণমূল সরকারের আমলে নিযুক্ত। কাউকে কাউকে শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার অনুষ্ঠানেও দেখা গিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। ওই উপাচার্যেরা অবশ্য রাজনৈতিক যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্যই ওই সাত উপাচার্যকে সরব হতে হয়েছে। যদিও ওই সাত জনের দাবি, “যাদবপুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। গত মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত উপাচার্য-সহ অন্যদের ছাত্রছাত্রীরা যে ঘেরাও করে রেখেছিলেন, তাতে আমরা ব্যথিত। পড়ুয়াদের কাছে আমাদের আবেদন, ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরান, ক্লাস শুরু করুন।”

কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের ঘেরাও আন্দোলন ঠেকাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকা এবং সেখানে পুলিশের আচরণ কতটা যুক্তিসঙ্গত? সে প্রশ্নের উত্তর দেননি সাত উপাচার্য।

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

পুলিশের সাহায্যে উপাচার্যের ঘেরাওমুক্ত হওয়ার ব্যাপারটা তাঁরা কী ভাবে দেখছেন? এই প্রশ্নের জবাবে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলু বলেন, “যদি পুলিশ আদৌ কিছু করে থাকে, তা হলে সেটা কোন পরিস্থিতিতে হল, তা দেখতে হবে।” আর রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন ভট্টাচার্যের মতে, “আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে। ঘেরাও পর্যন্ত যেতে হবে কেন!”

গত মঙ্গলবার রাতে উপাচার্য-সহ এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের (ইসি) সদস্যদের ঘেরাও করে রাখার সময় ছাত্রছাত্রীরা বারবার দাবি করছিলেন অভিজিৎবাবু বেরিয়ে এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন। কিন্তু তা তিনি করেননি বলে অভিযোগ। উল্টে পুলিশ ডেকে ক্যাম্পাস থেকে নিজেকে ঘেরাওমুক্ত করেছেন। তা হলে আলোচনার পথটা কি তিনিই বন্ধ করেননি? এর জবাবে উপাচার্যদের পাল্টা প্রশ্ন, “ছাত্রছাত্রীরা ঘেরাও করতে গেলেন কেন?”

দাবিদাওয়া আদায়ে প্রশাসনিক কর্তাদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো যাদবপুরে কার্যত ফি বছরের ঘটনা। গত বছরও তৎকালীন উপাচার্য শৌভিক ভট্টাচার্যকে প্রায় ৫০ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখেন একদল ছাত্রছাত্রী। কিন্তু তিনি পুলিশ ডাকেননি। অথচ এ বার ঘেরাও শুরু হওয়ার ঘণ্টাদুয়েকের মাথায় অভিজিৎবাবু পুলিশ ডাকায় প্রশ্ন উঠেছে, এমন কী হয়েছিল যে এমন পদক্ষেপ করতে হল? অভিজিৎবাবু অবশ্য বারবারই দাবি করেছেন, জীবন বিপন্ন হওয়ায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

গত মঙ্গলবার রাতে যাদবপুরের ক্যাম্পাসে পুলিশের মারধরের পরে দাবি উঠেছে, পদত্যাগ করুন অভিজিৎবাবু। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এই দাবিতে অনড়। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ক্লাস বয়কট চলবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ‘জুটা’-র দাবি, উপাচার্য পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই অভিজিৎবাবুর। প্রাক্তনী, শিক্ষাকর্মী থেকে গবেষক অনেকেই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য কী, জানতে চাওয়া হলে রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “এই দাবি অযৌক্তিক।” ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য জানিয়েছেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাঁদের ক্লাস বয়কট চলবে।

webcupa abhijit chakrabarty jadavpur university tmcp juta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy