E-Paper

কিট নষ্ট হয়েছিল প্রচুর, তাই অবস্থা বুঝে কোভিড পরীক্ষা

কেরলে করোনাভাইরাসের উপ-প্রজাতির খোঁজ মিলতেই সব রাজ্যকে সতর্ক করেছে কেন্দ্র। সেই মতো রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ফের জোর দিয়েছে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার উপরে।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৪১
An image of Covid Test

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

চলতি বছরের গোড়া থেকেই পরীক্ষা করানোর প্রবণতা কমতে কমতে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। যেখানে দীর্ঘ দিন ধরে দৈনিক কয়েক হাজার পরীক্ষা হত, সেখানে সেই সংখ্যা অনেক দিন শূন্যও থাকছিল। কিন্তু, কেরলে করোনাভাইরাসের উপ-প্রজাতির খোঁজ মিলতেই সব রাজ্যকে সতর্ক করেছে কেন্দ্র। সেই মতো রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ফের জোর দিয়েছে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার উপরে। ন্যূনতম উপসর্গ থাকলেই করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সেই অনুযায়ী পরীক্ষায় জোর দিচ্ছে বিভিন্ন জেলা ও শহরের বেসরকারি হাসপাতাল এবং পরীক্ষাগার। তবে অনেক বেসরকারি পরীক্ষাগারের তরফে দাবি করা হচ্ছে, মাসকয়েক আগে পরীক্ষার সংখ্যা তলানিতে গিয়ে ঠেকায় অসংখ্য কিট পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। শহরতলির একটি পরীক্ষাগারের তরফে ঋতম মল্লিক বলেন, ‘‘যাদের নিজস্ব আরটি-পিসিআর যন্ত্র রয়েছে, সেখানে পরীক্ষা এখনও হচ্ছে। কিন্তু যে সব সংস্থা নমুনা সংগ্রহ করে অন্য হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করাত, তাদের বেশির ভাগই এখনও শুরু করেনি। আসলে পরীক্ষার প্রবণতা কমে যাওয়ায় সবারই প্রচুর কিট নষ্ট হয়েছে।’’ ফের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে পরীক্ষা করা যাচ্ছে।

তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পরীক্ষা করানোর প্রবণতা যেমন কমেছিল, তেমনই পজ়িটিভ রোগীর সংখ্যাও সে ভাবে মিলছিল না। সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক্সের মাইক্রোবায়োলজিস্ট পম্পি মজুমদার জানাচ্ছেন, কয়েক মাস ধরে দৈনিক পাঁচ-ছ’টি করে নমুনা পরীক্ষার জন্য এলেও পজ়িটিভের সংখ্যা ছিল শূন্য। কিন্তু, শেষ কয়েক দিনে দেখা যাচ্ছে, দৈনিক চার-পাঁচটি নমুনার মধ্যে এক-দু’টি পজ়িটিভ আসছে।

প্রসঙ্গত, ২০২২-এর মাঝামাঝি থেকে দেশ তথা রাজ্যে করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করে। ২০২৩-এর শুরুতে সংক্রমিতের সংখ্যা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছয় দশের নীচে। বিশেষজ্ঞেরা তখন জানান, অতিমারির অন্তিম পর্যায় চলছে। সেই মতো করোনা পরীক্ষা কাদের করা হবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রকাশ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। জানানো হয়, করোনার উপসর্গ রয়েছে এবং মুখ বা নাকের অস্ত্রোপচার হবে, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে। উপসর্গহীন বা অন্যদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।

সংক্রমিতের সংখ্যা কমতে শুরু করায় লোকজনের মধ্যেও পরীক্ষা না করানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে বলে মত চিকিৎসকদের। গত ২৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য দফতর শেষ দৈনিক করোনা বুলেটিন প্রকাশ করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, আগের দিন, অর্থাৎ ২৭ জানুয়ারি রাজ্যে ১৪৪৪ জনের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা হয়েছিল। পরীক্ষার হার যে ক্রমশ কমেছে, তা বোঝা যায় একটু পিছন দিকে গেলে। ২০২২-এর ২৭ জুন ৬০৭৮ জনের এবং ওই বছরেরই ২৭ জানুয়ারি ৬১৮৮৩ জনের পরীক্ষা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র সতর্কতা জারির পরে, ‘কোভিড লাইক ইলনেস’ (সিএলআই) বা কোভিডের মতো অসুস্থতা দেখলেই আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় জোর দেওয়ার সময় এসেছে বলে মত মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের।

তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসক ও রোগী, উভয়ের মধ্যেই ‘না’-এর প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু যখন দেশে আবার ঝাপটা শুরু হয়েছে, তখন আমাদেরও আগাম সতর্ক থাকতেই হবে।’’ স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, জেলা ও স্টেট জেনারেল হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ২৬টি সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে করোনা পরীক্ষাগার তৈরি করা হয়েছিল। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘ভর্তি নেই, এমন কেউ বহির্বিভাগে
দেখানোর পরে ডাক্তারের সুপারিশ থাকলে তাঁর পরীক্ষা করা হত। তবে সেই সংখ্যা ছিল খুবই কম। প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি জেলাকে রিপোর্ট দিতে হত।’’ কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের উপরে জোর দিয়েছে। তা পাঠানো হচ্ছে কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Covid Test Kit Covid test Corona Virus in India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy