মশারির-ছায়ায়: চাঁদপাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র জ্বরে আক্রান্ত রোগী ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক ও সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
গত শনিবার জ্বর নিয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দেগঙ্গার আলি হোসেন। সোমবার তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। মঙ্গলবার ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ বার কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান আলি। ওই এলাকায় এর আগেও বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে জ্বরে ভুগে। অনেকের চিকিৎসা চলছে বিভিন্ন হাসপাতালে।
বিক্ষোভ গ্রামে
শুক্রবার সকালে দেগঙ্গার গিলেবাড়ি দাসপাড়ায় দুই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। লক্ষ্মী দাস নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘চুন-ব্লিচিং ছড়ানোর নাম নেই, শুধু গ্রামে এসে ঘুরে যাচ্ছে।’’ গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ, প্রশ্নের মুখে পড়ে দ্রুত পায়ে এলাকা ছাড়েন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ দিনই দাসপাড়া থেকে এক জনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় বারাসত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ঘোগের বাসা
জ্বরের প্রকোপ ছড়িয়েছে গাইঘাটা ব্লকের বিভিন্ন এলাকায়। ডেঙ্গিও ধরা পড়েছে। অসুস্থ রোগীরা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হচ্ছে চিকিৎসার আশায়। সেখানেই দেখা যাচ্ছে মশার উপদ্রব। চিকিৎসা করাতে এসে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দাঁড়িয়েও মশার কামড় খেতে হচ্ছে। গাইঘাটা ব্লকের প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র ঠাকুরনগরে, চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, গোটা চত্বর জুড়ে ঝোপ-জঙ্গল। নোংরা আবর্জনা পড়ে। বৃষ্টির জল জমে কোথাও কোথাও। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢোকার মুখে রাস্তার পাশে পাঁচিলের পাশ জুড়ে রয়েছে ডোবা, ঝোপঝাড়। সেখানেও মশার লার্ভা দেখা গেল। অভিযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে মশা মারার তেল স্প্রে করা হয় না। শুক্রবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, এক যুবক পুরুষ ওয়ার্ডের পিছনে গজিয়ে ওঠা কচুগাছ কেটে সাফ করছেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়।
সাফাই-১
গাইঘাটার বিধায়ক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পুলিনবিহারী রায়ের আশ্বাস, ‘‘দ্রুত রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠক ডেকে বন-জঙ্গল কাটার ব্যবস্থা করা হবে।’’ গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার ব্লকের তেরোটি পঞ্চায়েতের প্রধানকে নিয়ে বৈঠক করে মশা মারার তেল দ্রুত এলাকায় স্প্রে করতে বলা হয়েছে। মশার উৎসব খুঁজে বের করতে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।’
আক্রান্ত ১৮
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কাড়োলা, গাঁতি, চিকনপাড়া, আঙুলকাটা, সুটিয়া, পাঁচপোতার মতো বহু এলাকায় জ্বরের প্রকোপ ছড়িয়েছে। রোজ বহু মানুষ জ্বর নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে আসছেন। ইতিমধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে কাড়োলা গ্রামের বাসিন্দা অনুপ দাস (৩১) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ইলা বাগচী বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ব্লকে ১৮ জন রোগীর সন্ধান মিলেছে যাঁরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। ডেঙ্গি প্রতিরোধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
সাফাই-২
উত্তর ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানান হয়েছে, যেখানে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে, সেখানেই কর্মীরা যাচ্ছেন। পঞ্চায়েতও ব্যবস্থা নিচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy