E-Paper

হাজিরার জালিয়াতি, নালিশ এনএমসি-তে

রাজ্যে বহু নতুন তৈরি হওয়া বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক-চিকিৎসকদের হাজিরা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং এনএমসি-র মধ্যে কার্যত চোর-পুলিশ খেলা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাঠদাতা চিকিৎসকের সংখ্যায় ঘাটতি লুকোতে হাজিরায় জালিয়াতির নতুন-নতুন পন্থা বের করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:২৫

— প্রতীকী চিত্র।

বিশেষ অ্যাপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহযোগিতা, এবং মোবাইল সিম কার্ডের ‘ক্লোনিং’—এই তিনের সাহায্যেই রাজ্যের একাধিক নতুন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষক-চিকিৎসকদের হাজিরায় জালিয়াতির নতুন পন্থা আবিষ্কার করে ফেলেছে বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ নিয়েই আপাতত তোলপাড় শুরু হয়েছে চিকিৎসক মহলে। এ ব্যাপারে অভিযোগও পৌঁছেছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (এনএমসি) চেয়ারম্যান অভিজাত শেঠের কাছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবিও উঠেছে। পদক্ষেপের আশ্বাসও দিয়েছেন এনএমসি-র চেয়ারম্যান।

১৩ সেপ্টেম্বর রাজ্যের বামপন্থী চিকিৎসক সংগঠন ‘হেলথ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল’ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (এনএমসি) চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ করেছে, গত ১৬ এপ্রিল থেকে চালু হওয়া ‘ফেস বেসড আধার-জিপিএস অথেন্টিকেশন’ বা আধার-জিপিএস যুক্ত মুখের ছবির বায়োমেট্রিক হাজিরা ব্যবস্থায় জালিয়াতির নতুন পন্থা বার করে ফেলেছে রাজ্যের একাধিক নতুন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ। তার পরেই এই অভিযোগ নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিজাত শেঠ বলেন, ‘‘এনএমসি-তে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। সব কিছুই নতুন করে বুঝতে হচ্ছে। তবে এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ সম্পর্কে অবশ্যই এনএমসি খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করবে।’’

প্রসঙ্গত, রাজ্যে বহু নতুন তৈরি হওয়া বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক-চিকিৎসকদের হাজিরা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং এনএমসি-র মধ্যে কার্যত চোর-পুলিশ খেলা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাঠদাতা চিকিৎসকের সংখ্যায় ঘাটতি লুকোতে হাজিরায় জালিয়াতির নতুন-নতুন পন্থা বের করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। যেমন, আঙুলের ছাপ দিয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু হওয়ার পর কিছু বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষক-চিকিৎসকদের আঙুলের ছাপ ‘সিলিকন মোল্ড’-এ তুলে সেটা হাজিরায় ব্যবহার শুরু করে দিয়েছিল। সূত্রের দাবি, এই জালিয়াতি সামনে আসায় এই পদ্ধতি বন্ধ করে এনএমসি চালু করে ‘লাইভ’ মুখের এবং চোখের পাতা ঝাপটানোর ভিডিয়োর মাধ্যমে রেটিনার ছবি ভিত্তিক বায়োমেট্রিক হাজিরা। প্রতিটি কলেজে নির্দিষ্ট কিছু জায়গা ঠিক করা হয়েছে। শিক্ষক-চিকিৎসকদের সেখানে গিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে মুখের ও চোখের পাতা ঝাপটানোর ভিডিয়ো তুলে হাজিরা দিতে হয়। ১ মে থেকে সব মেডিক্যাল কলেজে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

‘হেলথ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল’ এনএমসি-কে জানিয়েছে, বিশেষ করে জেলার কিছু নতুন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ তাদের শিক্ষক-চিকিৎসকের ঘাটতি লুকিয়ে এমএমসি-র অনুমোদন পেতে জালিয়াতির নতুন পন্থা নিয়েছে। তারা একটা ঘরে শিক্ষক-চিকিৎসকদের বসিয়ে চোখের ও চোখের পাতা ঝাপটানোর ভিডিয়ো তুলছে। তার পর তাঁদের মোবাইলের সিম ‘ক্লোন’ করছে। বেঙ্গালুরুর একটি সংস্থা থেকে এআই-নির্ভর বিশেষ অ্যাপ ও সফ্টঅয়্যার আনা হয়েছে। সেগুলির সাহায্যে শিক্ষক-চিকিৎসকেরা হাসপাতালে উপস্থিত না থাকলেও তাঁদের হাজিরা পড়ে যাচ্ছে। তাই ডাক্তারি পড়ানোর পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও কলেজগুলি পড়ুয়া ভর্তি করছে। আখেরে ক্ষতি হচ্ছে মেডিক্যাল শিক্ষার।

‘হেলথ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর দাবি, এক শ্রেণির ফাঁকিবাজ শিক্ষক-চিকিৎসক একে সমর্থন করছেন। কিন্তু অন্য একটা শ্রেণির চিকিৎসক এতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, সিম কার্ডের ‘ক্লোন’ বা চোখের রেটিনার ভিডিয়ো অন্যের হাতে চলে যাওয়া মানে যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য যে কোনও মুহূর্তে ফাঁস হওয়ার শঙ্কা থাকছে। কিন্তু প্রতিবাদ করলে চাকরি খাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

প্রবীণ চিকিৎসক তথা এসএসকেএম হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্রের কথায়, ‘‘এর জন্য এনএমসি-ও দায়ী। মুড়িমুড়কির মতো নতুন মেডিক্যাল কলেজকে তারা ছাড়পত্র দিচ্ছে। দেশে এত ডাক্তার কোথায়? সেটা কি তারা জানে না? পরিকাঠামো ছাড়া মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হলে এইরকম আরও প্রযুক্তি নির্ভর জালিয়াতি হবে। এনএমসি-র অধিকাংশ পদ এখন খালি। এই সব জালিয়াতিতে নজরদারি চালানোর মতো লোকবলও তাদের নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Medical Colleges Artificial Intelligence

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy