Advertisement
E-Paper

বহুবার ধর্ষণ করেছে দাদা, জানাতে গিয়ে বাবা-মায়ের মার খেল কিশোরী

বছর তেরোর মেয়েকে অপহরণ করে নিজের বাড়িতে আটকে রেখেছেন এক আত্মীয়, এই মর্মে থানায় মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছিলেন মেয়ের বাবা। তদন্তে নেমে পুলিশ হতবাক। মেয়েটিকে উদ্ধার করতে গেলে সে জানায়, তারই নিজের দাদার কাছে একাধিকবার ধর্ষিতা হতে হয়েছে তাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:০৮

বছর তেরোর মেয়েকে অপহরণ করে নিজের বাড়িতে আটকে রেখেছেন এক আত্মীয়, এই মর্মে থানায় মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছিলেন মেয়ের বাবা। তদন্তে নেমে পুলিশ হতবাক। মেয়েটিকে উদ্ধার করতে গেলে সে জানায়, তারই নিজের দাদার কাছে একাধিকবার ধর্ষিতা হতে হয়েছে তাকে। ঘটনা অজানা নয় পরিবারে। বরং ধামাচাপা দিতে মেয়েটিকে মারধর করে বাবা, মাথার চুল কেটে নেন। জোর করে বিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন।

মঙ্গলবার অভিযোগ দায়েরের পরে বুধবারই অষ্টম শ্রেণির ওই নাবালিকাকে বাদুড়িয়ার গ্রামে তার পিসির বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। কাছেই তার নিজের বাড়ি। বসিরহাটের এসডিপিও শ্যামল সামন্ত বলেন, ‘‘ঘটনাটি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পিসেমশাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছে। নাবালিকার ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেয়ের দাদার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। বাবাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’ সরকার পক্ষের আইনজীবী এএসএম মাসুম বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার বসিরহাট আদালতের বিচারক মেয়েটির গোপন জবানবন্দি গ্রহণ করবেন।’’ মেয়েটিকে আপাতত নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছে পুলিশ।

মেয়ের বাবা-মায়ের সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি। তবে পুলিশের বক্তব্য, মেয়ে আর তার মায়ের বয়ান ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে। সেখানে মেয়ের মা বলেছেন, ঘটনাটি তাঁরা জানতেন। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়েই কাউকে কিছু না জানিয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আর বিয়েতে রাজি হতে না চাওয়ায় মেয়েকে মারধর করে তার বাবা।

মেয়েটির পিসি-পিসেমশাই বুধবার আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘বাচ্চা মেয়েটাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইছে শুনে খারাপ লাগছিল। তারপরে দেখি, বিয়ে করতে না চাওয়ায় মারধর করা হচ্ছে। ওকে এই অবস্থায় আমাদের বাড়িতে এনে রেখেছিলাম।’’

পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটিকে কেউ অপহরণ করেছে কিনা জানতে চাওয়ায় পুরো বিষয় খুলে বলে সে। ভেঙেও পড়ে। মেয়েটি জানিয়েছে, তারা পাঁচ ভাইবো‌ন। বড় দাদা থাকে দিল্লিতে। সে যখন বাড়ি ফেরে, তখনই শারীরিক অত্যাচার চালায়। ঘটনার কথা মাকে জানিয়েছিল মেয়েটি। কিন্তু সেখানেও বিচার মেলেনি। উল্টে, মা মেয়েকে ঘটনা চেপে যাওয়ার কথা বলেন।ইতিমধ্যে বাবার কানেও কথা ওঠে। বড় ছেলেকে শাসন করা তো দূরের কথা, তিনি আবার কুকীর্তি ঢাকতে মেয়েকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন।

মেয়ে বেঁকে বসায় তাকে মারধর করেন বাবা। মেয়ে যাতে বাইরে বেরিয়ে দাদার ‘গুণপনা’র কথা রাষ্ট্র না করে বেড়ায়, সে জন্য কয়েক মাস আগে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন। মেয়ের মাথার চুল কেটে নেন। মেয়ে বাইরের লোকজনকে ঘটনাটি জানানোর চেষ্টা করলে ফের মারধর করা হয় মাস তিনেক আগে।

সে দিন ওই বাড়িতে এসেছিলেন মেয়ের পিসি-পিশেমশাই। তাঁরাই মেয়েটিকে ক’দিন বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখবেন বলেন। মেয়েটি আর ফিরতে চাইছিল না সেখান থেকে। সে জন্যই পুলিশের দ্বারস্থ হন মেয়ের বাবা। যদিও কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে পড়ে কেউটে।

আর কী বলছে মেয়েটি?

নিজের ইচ্ছাতেই সে পিসি-পিসেমশাইয়ের কাছে চলে গিয়েছিল বলে দাবি করেছে মেয়েটি। তার কথায়, ‘‘মা বলেছিল, দেখবি বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। সব কথা ভুলে যাবি। আমি কিন্তু কাউকে বিয়ে করতে চাই না। লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে দাদার অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে চাই।’’

MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy