Advertisement
E-Paper

আঁধার পেরিয়েও অধরা পুনর্বাসন

কেন? কেননা মূল স্রোতে তাঁদের পুনর্বাসনের সুযোগ প্রায় হচ্ছেই না। নিছক পেটের তাগিদেই যন্ত্রণা সত্ত্বেও ক্লেদাক্ত যৌনপল্লিতে ফেরার পথ বেছে নেওয়ার সমর্থনে তাঁরা নিজেকে প্রবোধ দেন, ‘আমার আঁধার ভাল’।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রুজিরোজগারের খোঁজে পথে নামতে বাধ্য হন তাঁরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতারকের পাল্লায় পড়ে ঠাঁই হয় অন্ধকার জগতে। অনেক লড়াইয়ের পরে সেখান থেকে পরিত্রাণ হয়তো মেলে। কিন্তু ঘরে ফিরেও সেই সব কিশোরী-তরুণীদের অনেকেই ফের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার কথা ভাবেন বা শেষ করে দিতে চান।

কেন? কেননা মূল স্রোতে তাঁদের পুনর্বাসনের সুযোগ প্রায় হচ্ছেই না। নিছক পেটের তাগিদেই যন্ত্রণা সত্ত্বেও ক্লেদাক্ত যৌনপল্লিতে ফেরার পথ বেছে নেওয়ার সমর্থনে তাঁরা নিজেকে প্রবোধ দেন, ‘আমার আঁধার ভাল’।

যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জয়নগরের বাসিন্দা বছর আঠারোর তরুণী সাবিনা (নাম পরিবর্তিত)। কাজের আশায় দু’বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিলেনতিনি। কিন্তু কাজ জুটিয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে যে-যুবক তাঁকে পথে নামিয়েছিল, সে সাবিনাকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়। তাঁর ঠাঁই হয় দিল্লির জি বি রোডের যৌনপল্লিতে। উদ্ধারকারীদের হাত ধরে পরে ফিরে এসেছে সাবিনা। কিন্তু জীবনধারণের মতো কাজ না-পেয়ে হতাশ তরুণী ঠিক করে ফেলেছিলেন, দিল্লির সেই যৌনপল্লিতেই ফিরে যাবেন কিংবা আত্মহত্যা করবেন।

শেষ পর্যন্ত দিল্লিরই উদ্ধারকারী বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হস্তক্ষেপে সাবিনাকে ওই চরম পথ বেছে নিতে হয়নি। ওই সংস্থার চেষ্টায় অবশেষে সরকারি সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ওই সংস্থা সাবিনাকে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজার কাছে নিয়ে যায়। মন্ত্রী বলেন, ‘‘স্বাবলম্বন কিংবা মুক্তির আলোর মতো প্রকল্প রয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বিনা পয়সায়। আমি সে-কথাই বলেছি সাবিনাকে।’’

কিন্তু গত দু’বছর ধরে এই সাবিনাই ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দোরে দোরে। কোথাও প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ব্যাগ সেলাইয়ের, কোথাও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কাপড়ের তৈরি ব্যাগের উপর কাঁথা স্টিচ করে নকশা ফুটিয়ে তোলার। কিন্তু এমন কোনও ভদ্রস্থ কাজ মেলেনি, যা করে মেয়েকে নিয়ে সংসার করা যায়। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীর আশ্বাস পেয়েছেন সাবিনা।

কিন্তু তাঁর মতো অসংখ্য সাবিনা দিন কাটাচ্ছেন চূড়ান্ত অনিশ্চয়তায়। অস্তিত্বের বিপন্নতায়। অভিযোগ: পাচারের পরে নরক থেকে বেঁচে ফেরার সুযোগ পেলেও এ রাজ্যের অধিকাংশ তরুণী এমন কোনও সরকারি সাহায্য পান না, যার সাহায্যে জীবন ধারণ করতে পারেন। অভিযোগ: এই কারণে অর্থাৎ পুনর্বাসন না-পেয়ে অনেকেই ফিরে গিয়েছেন যৌনপল্লিতে। যেটা করতে তৈরি হচ্ছিলেন সাবিনাও। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ভেবেছিলাম আত্মঘাতী হবো!’’

এমন পরিস্থিতি কেন? স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা জানান, পুলিশ উদ্ধার করছে না বলে আগে অভিযোগ উঠত। কিন্তু শুধু উদ্ধারেই পাচার-সমস্যার সুরাহা হবে না। প্রয়োজন যথাযথ পুনর্বাসন। যা শুধু এ রাজ্যে কেন, দেশের কোথাও নেই। তাই সাবিনার মতো মেয়েরা বাড়ি ফেরার রাস্তা পেয়ে‌ও জীবনের মূল স্রোতে ফিরতে পারেন না। সেই পাচারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিন্‌ রাজ্যের যৌনপল্লিতে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে বাধ্য হন তাঁরা। অভাবের তাড়নায় অনেকেই আবার অন্ধকার জীবনে ফিরে গিয়েছেন। এ-যাত্রায় সাবিনা আলোর দেখা পেলেও প্রশ্ন উঠছে, ক’জন সাবিনা মন্ত্রী কিংবা সচিবের কাছে পৌঁছতে পারেন!

‘‘মন্ত্রী ও সচিব দু’জনেই উদ্ধার করে আনা মেয়েদের তালিকা তৈরি করতে বলেছেন। সেই তালিকা ধরে তাঁদের সরকারি প্রকল্পে আনা হবে,’’ বলেন দিল্লির বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি ঋষিকান্ত।

Human trafficking Suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy