বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না এসএফআইয়ের। সিপিএমের এই ছাত্র সংগঠনটির যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের (আর্ট্স ইউনিট) এক নেতাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনেরই এক নেত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করেছে এসএফআই। অভিযোগ, শান্তিনিকেতনে একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানেই শ্লীলতাহানির ঘটনাটি ঘটে। এর আগে দমদম এলাকার এক এসএফআই নেতার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব এবং তা প্রত্যাখ্যান করায় রাজনৈতিক প্রতিশোধের অভিযোগ তুলে ইস্তফা দিয়েছিলেন সংগঠনের এক নেত্রী। সেই ঘটনার এক মাসও কাটেনি। ফের বিতর্কে জড়াল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন। ঘটনাচক্রে বিতর্ক দানা বাঁধল সেই ইংরেজি বিভাগে!
যাদবপুরের যে নেতার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র। আবার যিনি অভিযোগ করেছেন, তিনিও ইংরেজি বিভাগের। সূত্রের খবর, সম্প্রতি তাঁরা শিক্ষানবিশ পর্যায়ের একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণে (ইন্টার্নশিপ এক্সকারশন) শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন। সেখানে শ্লীলতাহানি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্রী। ঘটনার কথা তিনি সংগঠনে জানান। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর প্রাথমিক ভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। তার পরেই পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন:
এসএফআইয়ের তরফে বুধবার বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ইউনিটের সহ সম্পাদকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ সংগঠনে জমা পড়েছে। যাদবপুরেরই এক ছাত্রী সংগঠনে অভিযোগ জানান। ইউনিট স্তর থেকে লোকাল (আঞ্চলিক) স্তরে অভিযোগ এলে সংগঠনে প্রাথমিক আলোচনার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পরবর্তী চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত না-হওয়া পর্যন্ত ওই নেতাকে সমস্ত স্তরের সমস্ত কাজ থেকে বিরত রাখা হবে। এই বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।’’ বিবৃতিতে এসএফআইয়ের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি রাসেল পারভেজ এবং সম্পাদক সৌগত তরফদারের নাম ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক এসএফআই নেত্রী বলেন, ‘‘ঘটনা ঘটেছে। তথ্যপ্রমাণ পেয়ে আমরা এই বিবৃতি জারি করেছি। সংগঠনের মধ্যে এমন কোনও উপাদানকে আমরা রাখব না।’’
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতরে পুকুরে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডলের। কী ভাবে তিনি পুকুরে পড়ে গেলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাঁর পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। ক্যাম্পাসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তার মধ্যেই ফের অন্য ঘটনায় শিরোনামে উঠে এল যাদবপুরের ইংরেজি বিভাগ।
এর আগে লেকটাউনের এসএফআই নেতার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, তাতেও যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়তে হয় এসএফআই তথা সিপিএম নেতৃত্বকে। তরুণী জেলা এসএফআই-কে লেখা চিঠিতে দাবি করেছিলেন, ওই ছাত্রনেতা তাঁকে বারংবার মদ্যপানের প্রস্তাব দিতেন। দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তাঁর ফাঁকা ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। তার পরেও উত্ত্যক্ত করা থামেনি। অভিযোগ, ধারাবাহিক ভাবে যৌন সম্পর্কের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল তরুণীকে। ছাত্রনেতা তাঁকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, রাজ্য সিপিএমের ফেসবুক পেজে সংবাদ সঞ্চালিকা হিসাবে সুযোগ করে দেবেন। যৌন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সেই সুযোগ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতে আবার শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল এসএফআইয়ের ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে।