Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Shantanu Banerjee Resort in Balagarh

শান্তনুর রিসর্টের পাঁচিল তৈরি ‘১০০ দিনের কাজে’! ভয়ে চুপ ছিলাম, বলছেন ‘প্রত্যক্ষদর্শীরা’

শান্তনুর রিসর্টের জমির ভিতরেই ১০০ দিনের কাজের ফলক লাগানো রয়েছে। অভিযোগ, ওই কাজের টাকাতেই রিসর্টের চারদিকে পাঁচিল তোলা হয়েছে। শ্রমিকেরা খেটেও প্রাপ্য টাকা পাননি।

Shantanu Banerjee allegedly used labors of 100 day work in his own resort of Balagarh.

বলাগড়ে শান্তনুর যে রিসর্ট রয়েছে, তার কাজ করানো হয়েছে ১০০ দিনের কাজের টাকাতে, অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। ছবি: সংগৃহীত।

সারমিন বেগম
বলাগড় শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ১৬:৫৪
Share: Save:

১০০ দিনের সরকারি কাজের নাম করে গ্রামবাসীদের দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নিয়েছেন বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই অভিযোগ তুলছেন এলাকার প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। অভিযোগ, বলাগড়ে শান্তনুর যে রিসর্ট রয়েছে, তার চারপাশে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়েছে বেশ কিছু জমি। ১০০ দিনের কাজের টাকাতেই সেই কাজ করানো হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রামবাসীদের কারও কারও অভিযোগ, শান্তনুর রিসর্টের কাজ করেও তাঁরা প্রাপ্য টাকা পাননি।

খাতায়কলমে বলাগড়ের চাঁদড়া বটতলা এলাকার ওই রিসর্টের মালিক সুপ্রতিম ঘোষ ওরফে আকাশ। তিনি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত শান্তনুর ছায়াসঙ্গী। শনিবার সকালে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে রিসর্টে নিয়ে যান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আধিকারিকেরা। আকাশকে সঙ্গে নিয়েই তাঁরা এলাকা ঘুরে দেখেন। রিসর্টের চারপাশে প্রায় দু’বিঘা জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

ওই রিসর্টের জমির ভিতরেই ১০০ দিনের কাজের ফলক লাগানো রয়েছে। শ্রীপুর বলাগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা কংগ্রেস নেতা বিশ্বনাথ মালিক আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে শান্তনু এই জমি নিয়েছিলেন। জমিতে ফলকও লাগানো হয়েছিল পাঁচিল তৈরির সময়েই। ১০০ দিনের কাজের টাকাতেই রিসর্টের চারদিকে ওই পাঁচিল তোলা হয়েছে।’’

প্রাক্তন প্রধান আরও জানান, সব জেনেশুনেও ‘প্রভাবশালী’ শান্তনু এবং তাঁর দলবলের ভয়ে তাঁকে চুপ করে থাকতে হয়েছিল। কারণ তাঁরা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। বিশ্বনাথের কথায়, ‘‘ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস কারও ছিল না। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ওরা আমাকে মারধর করে। আমার এজেন্টকেও মেরে বুথ থেকে বার করে দেয়।’’

অভিযোগ, পাঁচিলকে কেন্দ্র করে আগাছা সাফ করা কিংবা বৃক্ষরোপণের মতো বেশ কিছু কাজ করেছিলেন গ্রামের কয়েক জন শ্রমিক। ১০০ দিনের কাজের নাম করেই তাঁদের দিয়ে ওই কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রাপ্য টাকা এখনও শ্রমিকদের হাতে পৌঁছয়নি। জনৈক শ্রমিক বলেন, ‘‘আমি ২২ দিন এই পাঁচিলের পাশে আগাছা পরিষ্কার এবং নতুন গাছ লাগানোর কাজ করেছি। কিন্তু আমাকে প্রাপ্য টাকা দেওয়া হয়নি। এর আগে নর্দমা পরিষ্কারের মতো অন্য কাজও করেছিলাম। সেই টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাঁচিলের কাজের টাকা পাইনি।’’

শান্তনুর ভাইয়ের স্ত্রী বর্তমানে শ্রীপুর বলাগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। অভিযোগ, পঞ্চায়েতে আত্মীয় থাকার কারণেই এলাকায় দাপট আরও বেড়ে গিয়েছিল শান্তনুর। জোর খাটিয়ে তিনি নিজের রিসর্টের কাজ গ্রামের শ্রমিকদের দিয়ে করিয়ে নিয়েছিলেন। প্রাপ্য টাকাও দেননি কাউকে।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে শান্তনুর নাম জড়ানোর পর থেকেই নামে-বেনামে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর একাধিক সম্পত্তির হদিস মিলেছে। ইডির দাবি, একাধিক বাড়ি, রেস্তরাঁ, বিলাসবহুল বাগানবাড়ির মালিক এই শান্তনু। শুক্রবার শান্তনুর পাশাপাশি, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্তত ২০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করা হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, নজরে থাকা অ্যাকাউন্টগুলিতে সব মিলিয়ে ১ কোটি টাকারও বেশি গচ্ছিত রয়েছে। সেই টাকা কোথা থেকে এল, কোথায় গেল, কবে গেল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তার মাঝেই বলাগড়ের রিসর্টের পাঁচিল সংক্রান্ত ১০০ দিনের কাজের কথা প্রকাশ্যে এল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shantanu Banerjee ED Balagarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE