থানারপাড়ায় জহিরুলের বাড়িতে এনআইএ-র দল। বুধবার ছবি তুলেছেন কল্লোল প্রামাণিক।
কমলা ন্যানো গাড়ির মালিক কে?
উত্তর খুঁজতে-খুঁজতে বর্ধমানের শিমুলিয়া থেকে বীরভূমের নিমড়ায় পৌঁছে গেল এনআইএ। শিমুলিয়ায় উদ্ধার হওয়া ন্যানোটির মতোই একটি গাড়ি ছিল সেখানকার কাপড়ের ব্যবসায়ী হিপজুল্লা কাজির। বুধবার তাঁকে আটক করা হয়েছে। রাতে বর্ধমান শহর থেকেও এক জনকে আটক করে এনআইএ। কিন্তু তা কোন সূত্রে, সেটা স্পষ্ট নয়।
বুধবার ভোরে কীর্ণাহারের কাছে নিমড়ায় যায় এনআইএ-র দল। বাড়ি থেকে হিপজুল্লার বাবা আজপার কাজি এবং ভাই আজিজুরকে আটক করা হয়। পরে কীর্ণাহারের কাজি মার্কেটে তাঁর কাপড়ের দোকান থেকে ধরা পড়েন হিপজুল্লা। একটি ল্যাপটপও বাজেয়াপ্ত করা হয়। বাবা ও ভাইকে ছেড়ে দেওয়া হলেও হিপজুল্লাকে রাত পর্যন্ত জেরা করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার কাজি মার্কেট থেকেই মুদি দোকানি সুকুর শেখকে আটক করেছিল পুলিশ। তাঁর ছেলে আমজাদ ওরফে কাজলের খোঁজে তাঁকে জেরা করা হয়। খাগড়াগড়-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত কওসরের শ্যালক, নিমড়ার বাসিন্দা কদর গাজির সঙ্গে হিপজুল্লা ও কাজলের যোগ ছিল কি না, গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন।
কাজি মার্কেটের দোকানিরা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। দুপুরে নিমড়ার দক্ষিণপাড়ায় হিপজুল্লার বাড়ির কাছে যেতেই কার্যত রে-রে করে তেড়ে আসেন এক দল যুবক। জানান, বাড়ির দিকে যাওয়া চলবে না। পরিচয় জিজ্ঞেস করলে আরও খেপে ওঠেন। এঁদের বাধায় আর এগোনো যায়নি। যুবকদের মধ্যে চুলে বাদামি রঙ করা, স্যান্ডো গেঞ্জি পরা আজিজুরও ছিলেন বলে গ্রামেরই এক সূত্রের খবর।
বেলডাঙায় সিআইডি-র এক আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনায়
এনআইএ-র এক গোয়েন্দা। বুধবার ছবি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক।
বিকেলে ডিআইজি (এনআইএ) অনুরাগ তনখার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের দল বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে খড়দত্তপাড়া গ্রামে যায়। গত ৫ অক্টোবর রাতে ওই গ্রাম থেকেই ধরা হয়েছিল হাসেম মোল্লাকে। গ্রামে ঢোকার মুখে এক হাতুড়ের বাড়িতে ঢোকে দলটি। বছর পঞ্চাশের ওই হাতুড়ে তখন বাড়িতে ছিলেন না। মিনিট পনেরো সেখানে কাটিয়ে অফিসারেরা হাসেমের বাড়ি গিয়ে তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। পারিবারিক মুদির দোকানেও তল্লাশি চালানো হয়।
পরে বড়ডাঙা মোড়ে হাসেমের জুতোর দোকানেও তল্লাশি চালায় এনআইএ। মোবাইল ফোনের দু’টি সিমকার্ড, একটি এটিএম কার্ড, একটি ছবির নেগেটিভ এবং কিছু কাগজপত্র মিলেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। ডিআইজি (এনআইএ) এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। পরে হাসেমের স্ত্রী ও সৎমা জানান, হাসেম কোথায় থাকত, কী করত, বিস্ফোরণে যে সব নাম উঠে আসছে তাদের কাউকে তাঁরা চেনেন কি না, জানতে চাওয়া হয়েছে। তাঁদের কথায়, “কওসর কোথায়, তা-ও ওরা জানতে চাইছিল। কিন্তু আমরা ওদের চিনি না। তা-ই জানিয়েছি।”
খাগড়াগড়-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে নদিয়ার থানারপাড়ার গমাখালি এলাকার জহিরুল শেখেরও। গত ১০ অক্টোবর তার বাড়ি থেকে সিআইডি ৪১টি জিলেটিন স্টিক উদ্ধার করে। এ দিন দুপুরে থানারপাড়া থানা থেকে সেগুলি নিয়ে যান এনআইএ-র দুই অফিসার। বিকেলে পুলিশ সঙ্গে নিয়ে জহিরুলের বাড়িতেও যান তাঁরা। পরে জহিরুলের মা ফতেমা বিবি, বাবা জুয়াদ আলি শেখ ও ছোট ভাই ইসারুল শেখকে থানায় এনে দফায়-দফায় জেরা করা হয়। দুপুরে খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণস্থলেও যান ডিআইজি (এনআইএ)। পরে বাড়িটির একতলায় এক দোকান থেকে একটি ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়।
দরজার ফাঁক দিয়ে তদন্তকারীদের গতিবিধি দেখছেন শিমুলিয়ার বাসিন্দারা।
বুধবার অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
এনআইএ-র সন্দেহ ছিল, মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া লাগোয়া দু’টি ডোবায় জঙ্গিরা কিছু ফেলে দিয়ে থাকতে পারে। এ দিন সকাল থেকেই ওই দুই ডোবার জল ছেঁচে তুলে ফেলা হয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জেনেছেন, দু’ কিলোমিটার দূরের নিগনে বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে নতুন মাদ্রাসা তৈরি করছিল শিমুলিয়ার মাদ্রাসা পরিচালক ইউসুফ শেখ। সাড়ে ১১টা নাগাদ সেখানে গিয়ে অফিসারেরা নির্মীয়মাণ বাড়িটির ছবি তোলেন। ওই জমির আগের মালিক বৃন্দাবন ঘোষ ও মধুসূদন ঘোষ জানান, কয়েক মাস আগে বাজারদরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে ইউসুফ ওই ২৫ কাঠা জমি কিনেছিল।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এ দিনই দিল্লি থেকে এক এনআইএ অফিসার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিগন শাখায় ফোন করে জানতে চান, শেষ ৩ মাসে কী-কী বড় অঙ্কের টাকা তোলা হয়েছে, কারাই বা তা তুলেছেন। গোয়েন্দারা জেনেছেন, ব্যাঙ্কের ওই শাখায় ‘ইউসুফ’ নামে মোট ৪৮টি অ্যাকাউন্ট আছে। ইউসুফের স্ত্রী’র নাম আয়েষা। ওই নামেও ২১টি অ্যাকাউন্ট। ওই সব অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy