Advertisement
E-Paper

সারা বছর কোনও রকমে সংসার চলে শোলা শিল্পীর

পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে শুরু হল দেবীপক্ষ। অনেক মণ্ডপেই প্রতিমা এসে গিয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই দেবীকে গয়না পরানো হবে। তার মধ্যে থাকবে শোলার গয়নাও। তাই দিনরাত এক করে এখন শোলার অলঙ্কার তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০১:১৭
বহু কষ্টে এখনও পেশায় টিঁকে আছেন এঁরা। —নিজস্ব চিত্র।

বহু কষ্টে এখনও পেশায় টিঁকে আছেন এঁরা। —নিজস্ব চিত্র।

পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে শুরু হল দেবীপক্ষ। অনেক মণ্ডপেই প্রতিমা এসে গিয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই দেবীকে গয়না পরানো হবে। তার মধ্যে থাকবে শোলার গয়নাও। তাই দিনরাত এক করে এখন শোলার অলঙ্কার তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা। কিন্তু এত পরিশ্রমের পরে তাঁরা যা পারিশ্রমিক পান, তা দিয়ে সারা বছর সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় শিল্পীদের।

বসিরহাটের মেরুদণ্ডী গ্রামের পালপাড়ায় বেশির ভাগ শোলা শিল্পীর বাস। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ঘুমচোখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন রমেশ, অমল, রিনা, তপন, টুম্পা, দীনেশ পালরা। শোলা দিয়ে কেউ তৈরি করছেন মুকুট, হাতের ও গলার নানা ধরনের গয়না, কোমরবন্ধনী, আঁচল, বুকের আস্তরণ। কানপাটা, কান বেঁকি এবং শোলা দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রতিমার আরও নানা অঙ্গসাজ।

শিল্পী রমেশ পাল বললেন, ‘‘কলকাতার বড়বাজারে গয়না দিই। তা ছাড়া, গ্রামে গ্রামে প্রতিমা শিল্পীদের বাড়িতেও গয়না পৌঁছনো হয়ে গিয়েছে। এখন বাকি বসিরহাট তথা শহর-সংলগ্ন গ্রামের শিল্পীদের বাড়িতে গয়না পৌঁছনো। দেরি হলে শিল্পীরা বড় বিপদে পড়বেন। এক-দু’দিনের মধ্যে সমস্ত গয়না দিয়ে দিতে হবে। তাই আর দম ফেলার সময় নেই।’’

কিন্তু কেমন চলছে বিক্রিবাট্টা?

শিল্পীরা জানালেন, এক সময়ে শোলার কাজের কদর ছিল অনেক বেশি। থিমের পুজোর টানে সেই বাজার কমেছে। অমর পাল নামে এক শিল্পী বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল, যখন শোলা ছাড়া প্রতিমার সাজ হতোই না। এখন সে সব থার্মোকল দিয়ে করা হচ্ছে। শোলা কেটে কাজ করতে খাটনিও বেশি। তবে থার্মোকল দিয়ে অলঙ্কার তৈরি সহজ। শোলার থেকে থার্মোকলের দাম বেশি হওয়ায় এই কাজে খরচও বেশি। কিন্তু এই কাজ করে তেমন দাম পাওয়া যায় না।’’ শোলার কারিগরদের কোনও সরকারি অনুদান মেলে না। ফলে বাইরে থেকে বাড়তি সুদে টাকা নিয়ে কাজ করতে হয়।

বসিরহাটের এই এলাকায় প্রায় ৩০টি পরিবারের শতাধিক মানুষ প্রতিমার শোলার অলঙ্কার তৈরির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। দুর্গা থেকে শুরু করে লক্ষ্মী, কালী, সরস্বতী, জগদ্ধাত্রী, কার্তিক, গণেশ সব দেবদেবীর জন্য সারা বছর ধরে তাঁরা অলঙ্কার তৈরি করেন। রিনা পাল, টুম্পা পালদের আক্ষেপ, ‘‘ভাগ্য ফেরাতে কত মানুষ দেবীর পুজোর মানত করেন। পুজোও করেন। অথচ, সারা বছর ধরে দেবদেবীর শোভা বাড়াতে আমরা নানা ধরনের গয়না গড়ি। তাতেও ঠাকুর আমাদের সহায় হন না।’’ আমাদের অভাবের মধ্যেই দিন কাটে।’’

ডাকের সাজের প্রতিমার পিছনের চালির কারুকাজ করতে ব্যস্ত বাসন্তী পাল বলেন, ‘‘রাত-দিন এক করে বাবার সঙ্গে হাত লাগিয়ে আমরা প্রতিমাকে সাজিয়ে তুলি। থার্মোকল, জরি, রঙিন কাগজ দিয়ে তৈরি করি নানা রকমের কারুকাজ। এতে প্রতিমার আরও সৌন্দর্য বাড়ে। কিন্তু আমাদের তেমন লাভ হয় না।’’

nirmal basu shola thermocol shola artist meagre income thermocol artist shola artist life struggle
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy