আগে থেকে তেমন কোনও পরিকল্পনা ছিল না এখানে বেড়াতে আসার। স্বামী অফিস থেকে কয়েক দিনের ছুটি পেয়েছিল। তাই কিছুটা চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে দিনকয়েক আগে এসেছি, উত্তর সিকিমের সুদৃশ্য উপত্যকা ঝঙ্গুতে। আমাদের সঙ্গে আমার বছর এগারোর ছেলে। মূলত ওর আনন্দের কথা ভেবেই আসা। হোম স্টে-তে ঘরের জানলা খুললেই দিগন্তজোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা। দারুণ কাটছিল ক’টা দিন। কিন্তু বৃষ্টি আর ধস বেড়ানোর আনন্দটাই মাটি করে দিল। আনন্দের রেশ কেটে গিয়ে এখন চেপে বসেছে দুশ্চিন্তা।
আমরা যেখানে রয়েছি সেই জায়গাটার সঙ্গে বাকি সিকিমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ১৩ তারিখ থেকে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ভেসে গিয়েছে একমাত্র সংযোগকারী, প্রায় ১০০ মিটার লম্বা সংকলন সেতু। স্থানীয়দের কাছ থেকে যেটুকু খবর মিলছে। অমুক রাস্তা বন্ধ, ওই সেতুটা আর নেই, এমন খবরই বেশি আসছে। পাশের গ্রামের তিন জনের নাকি কোনও খোঁজ নেই। তিন দিন ধরে গোটা এলাকা বিদ্যুৎহীন, মোবাইলের নেটওয়ার্কেরও এক অবস্থা। পরিজনেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন, আমরাও চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনও খবরই পাচ্ছি না। ওঁরাও পাচ্ছেন না। সারা দিনে আচমকা হয়তো কিছুক্ষণের নেটওয়ার্ক মিলছে। আবার যে কে সেই!
তবে এখানকার লোকজন দারুণ অতিথিবৎসল। আমাদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে ওঁদের সবসময় নজর রয়েছে। শুধু এ ভাবে এক জায়গায় আটকে থেকে হাঁফিয়ে উঠেছি।
বাকি বেড়ানোটার দফারফা হয়ে গেল বলেও মনটা একটু খারাপ। এ দিকে, বৃষ্টি থামার কোনও লক্ষণ নেই। দিন-রাত শুধু অপেক্ষা করে আছি, কখন রাস্তা মেরামত
হবে। আর মনটা পড়ে আছে বাড়িতে। আজ সকালে খবর পেলাম, সেনাবাহিনী দ্রুত ভাঙা রাস্তা মেরামত করছে। কবে যে বাড়ি ফিরব, সেই আশায় রয়েছি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)