Advertisement
E-Paper

‘যোগ্য-অযোগ্য এক ফল? সিবিআই তবে করল কী?’ চাকরিহারাদের প্রশ্ন, কেন এই অনিশ্চয়তা, অসম্মান?

মঙ্গলবার সকালে শহিদ মিনার চত্বরে ধর্নায় বসেন চাকরিহারাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্যের নির্যাস, কেন অযোগ্য কয়েক জনের জন্য যোগ্যদের শাস্তি পেতে হবে? দোষ না করেও অসম্মানিত হতে হবে?

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৪৪
Sit on protest to protect jobs after Calcutta High Court terminated these in SSC verdict case

হাতে ওএমআর শিট নিয়ে চাকরিহারাদের একাংশ। মঙ্গলবার শহিদ মিনার চত্বরে। ছবি: সারমিন বেগম।

মুড়ি আর মিছরির এক দর হবে কেন? মঙ্গলবারের তপ্ত দুপুরে এই প্রশ্নই উঠে আসছে শহিদ মিনার ময়দান থেকে। হাই কোর্টের প্রায় ৩০০ পাতার একটি রায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন। মঙ্গলবার সকালে শহিদ মিনার চত্বরে ধর্নায় বসেন চাকরিহারাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্যের নির্যাস, কেন অযোগ্য কয়েক জনের জন্য যোগ্যদের শাস্তি পেতে হবে? সিবিআই এত দিন ধরে তল্লাশি চালিয়ে কেন যোগ্য আর অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের মধ্যে ফারাক করতে পারল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ধর্নায় বসা চাকরিহারারা।

সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়। চাকরিহারাদের মধ্যে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক ছাড়াও শিক্ষাকর্মীরাও রয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলার চাকরিহারা ব্যক্তিরা শহিদ মিনার চত্বরে জমায়েত করেন। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই বক্তব্য, হঠাৎ চাকরি হারালে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে বাঁচা যাবে না। তা ছাড়া সামাজিক সম্মানহানিরও প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। অযোগ্যদের জন্য কেন সমাজ তাঁদের অপরাধী হিসাবে দেখবে, সেই প্রশ্নও উঠে আসে।

আজ়হারউদ্দিন রকি নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক। সোমবারের রায়ের পর চাকরি খুইয়েছেন তিনিও। শহিদ মিনার চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বিভিন্ন জেলা থেকে আসা চাকরিহারাদের কাছ থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করছেন। ‘‘কী নিচ্ছেন এগুলো?’’ প্রশ্ন করতেই একগোছা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলেন, “এই দেখুন আমাদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র), মেধাতালিকায় থাকা আমাদের নাম। আমরা তো অবৈধ উপায়ে চাকরি পাইনি। তাই এই সব কাগজ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাব। ন্যায়বিচার চাইব।”

আজ়হারউদ্দিনদের বক্তব্য, বৈধ ভাবে চাকরি পাওয়ার সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। শীর্ষ আদালতের কাছে আর্জি জানাবেন, তাঁদের চাকরিতে যেন ছেদ (সার্ভিস ব্রেক) না পড়ে। এক চাকরিহারার কথায়, “স্কুলে একটা ক্লাসে কয়েক জন ফেল করলে কি সবাইকে ফেল করিয়ে দেওয়া হবে? অযোগ্যদের জন্য আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। কিন্তু আমরা যাঁরা বৈধ ভাবে চাকরি পেয়েছি, তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাব।”

চাকরিহারাদের বক্তব্য, তাঁদের সঙ্গে অবিচার হয়েছে। এক জনের কথায়, “২৫-২৬ হাজারের মধ্যে চার-পাঁচ হাজার অবৈধ ভাবে চাকরি পেয়েছেন। সাদা খাতা জমা দিয়েছেন। কিন্তু এত দিন ধরে সিবিআই-ইডি কী করল? অযোগ্যদের বাদ দিক না।” প্রাক্তন বিচারপতি তথা লোকসভা নির্বাচনে তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন চাকরিহারাদের একাংশ। আজহারউদ্দিনের কথায়, “আমাদের অবস্থার জন্য রাজনীতি, ষড়যন্ত্র সব কিছু দায়ী। অবশ্যই বলব হাই কোর্টের সেই বিচারপতির কথা। আমরা দেখেছি তো চেয়ারে বসে কী ভাবে রায় দিতেন। এখন তিনি আবার প্রার্থী। তাঁর শাস্তি চাই।”

‘মানবিক কারণে’ সোমা দাস নামের এক চাকরিপ্রাপকের চাকরি বহাল রাখে আদালত। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। চাকরিহারাদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের অনেকের বাড়িতেই অসুস্থ এবং বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন। কারও বাড়িতে রয়েছে ছোট সন্তান। তা হলে আদালত কেন তাঁদের প্রতি মানবিক হল না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ধর্নায় বসা চাকরিহারারা।

অযোগ্যদের জন্য কেন যোগ্যদের চাকরি যাবে, সোমবার হাই কোর্টের রায়ের পর সেই প্রশ্ন তুলেছে এসএসসিও। এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, “পাঁচ হাজার জনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তার জন্য ২৬ হাজার জনের কেন চাকরি বাতিল হবে?” সোমবার উত্তর দিনাজপুরের জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “যাঁদের চাকরি বাতিল করা হল, চিন্তা করবেন না, হতাশ হবেন না। কেউ জীবনের ঝুঁকি নেবেন না। আমরা পাশে আছি। যত দূর দরকার, লড়াই করব।’’

Bengal SSC Recruitment Case Calcutta High Court Supreme Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy