E-Paper

‘ইন্ডিয়া’য় থাকা মানে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা নয়, বোঝালেন ইয়েচুরি

ইয়েচুরির মতে, বিজেপির মোকাবিলায় ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের লড়াইয়ের কৌশলে কোনও বদল আসেনি। বিজেপির বিরুদ্ধে অনেক দল একজোট হচ্ছে দেখে তৃণমূলও সেখানে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৩
Sitaram Yechury

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।

বেঙ্গালুরু বা মুম্বইয়ে বিরোধীদের বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে বলেছেন। বাংলায় রাজ্য দলের একটি পত্রিকার শারদ-সংখ্যায় কলম ধরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এ বার সরাসরি বাংলায় দলের নেতা-কর্মীদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বুঝিয়ে দিলেন, তৃণমূল কংগ্রেস আছে জেনেও কেন তাঁরা সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে শামিল হয়েছেন। সেই সঙ্গেই তাঁর স্পষ্ট বার্তা, বিজেপির পাশাপাশি বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গেও লড়াই চলবে। তৃণমূলকে তাঁরা কোনও ভাবেই বিজেপির বিকল্প বলে মনে করেন না।

রাজ্যে যখন তৃণমূলের সঙ্গে প্রবল লড়াই চলছে, সেই সময়ে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের পাশে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে কেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বকে দেখা যাচ্ছে, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল দলের নিচু তলায়। বিষয়টি নিয়ে বাম শিবিরে ‘বিভ্রান্তি’র সুযোগ নিতে প্রচারে নেমেছিল বিজেপিও। এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বর্ধিত বিশেষ অধিবেশনে দলের জেলা নেতারা ওই বিষয়ে সরব হওয়া বা প্রশ্ন তোলার আগেই শুক্রবার গোটা প্রেক্ষিত ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন ইয়েচুরি। হাওড়া জেলা সিপিএমের কার্যালয় অনিল বিশ্বাস ভবনের প্রেক্ষাগৃহে বর্ধিত অধিবেশনের সূচনা-পর্বে ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘এই প্রশ্ন অনেক জায়গাতেই উঠেছে যে, তৃণমূল যেখানে রয়েছে, আমরা সেখানে কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে আমরা কেন? আমরা জানি, তৃণমূল অতীতে বিজেপির সঙ্গী ছিল। ভবিষ্যতে আবার সঙ্গী হবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সংসদে বারবার দেখা গিয়েছে তৃণমূলের সাংসদেরা মুখে বিজেপি-বিরোধী বক্তৃতা করলেও ভোটাভুটির সময়ে গরহাজির থাকেন। তবু বিজেপিকে রাষ্ট্র এবং সরকার থেকে দূরে রাখতে সামান্য সহায়তার সম্ভাবনা থাকলেও তাকে অগ্রাহ্য করাও যাবে না।’’

ইয়েচুরির মতে, বিজেপির মোকাবিলায় ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের লড়াইয়ের কৌশলে কোনও বদল আসেনি। বিজেপির বিরুদ্ধে অনেক দল একজোট হচ্ছে দেখে তৃণমূলও সেখানে গিয়েছে। তার মানে এই নয় যে, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের কোনও সমঝোতার সম্ভাবনা রয়েছে। কেরলে যেমন কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের লড়াই হবে, তেমনই বাংলায় তৃণমূল-বিরোধিতা বজায় থাকবে। ইয়েচুরির কথায়, ‘‘তৃণমূল কোনও ভাবেই বিজেপির বিকল্প নয়। হতেও পারবে না। মানুষকে সে কথাও আমাদের বলতে হবে। আমরা জানি, এই লড়াইয়ে সকলে পুরো রাস্তা যাবে না, এমনকি মাঝপথে বিশ্বাসঘাতকতাও করতে পারে।’’

জাতীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে একমঞ্চে থাকা প্রসঙ্গে পুরনো আমলের একটি গল্পও শুনিয়েছেন ইয়েচুরি। ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে যখন নানা দল এক জায়গায় আসছিল, তখনও নানা প্রশ্ন উঠেছিল। ইয়েচুরির বক্তব্য, সেই সময়ে দলের নেতা বি টি রণদিভে বলেছিলেন, ধরা যাক, দিল্লি থেকে গাড়ি নিয়ে বাইরে যেতে গিয়ে রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে। তখন যারা গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে চালু করতে আসবে, তাদের সহায়তা নেওয়াই ঠিক উপায়। তখন অমুক কেন ধাক্কা দিতে এল, এই প্রশ্ন তোলার সময় নয়! সেই ভাবেই এখন বিজেপি-বিরোধী জোটে তৃণমূলের অবস্থান বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক।

তৃণমূল সংক্রান্ত প্রশ্নে কলকাতায় এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেছেন, ‘‘বাংলায় আমরা আক্রান্ত এবং তৃণমূল হল আক্রমণকারী। তা হলে আক্রমণকারীর সঙ্গে আক্রান্তদের সমঝোতার প্রশ্ন উঠছে কেন?’’

দুই রাজ্য সম্মেলনের মাঝে সংগঠনের কী হাল, আন্দোলনের গতিমুখই বা কেমন, সে সব প্রশ্নের পর্যালোচনার জন্য এই বিশেষ অধিবেশন হচ্ছে বলে এ দিন জানিয়ছেন ইয়েচুরি। প্রারম্ভিক পর্বে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও বলেছেন, নতুন নতুন মানুষকে টেনে এনে, আন্দোলনে নতুন উপাদান এনে লোকসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনকে সাজিয়ে নিতে চান তাঁরা। সেই লক্ষ্যেই তিন দিনের অধিবেশনে আলোচনা হবে। ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামপন্থীদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে। মানুষের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে দলের। জনতাকে আরও বেশি মাত্রায় লড়াইয়ের ময়দানে শামিল করা এখন আমাদের দায়িত্ব।’’

ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো নিয়েও সরব হয়েছেন ইয়েচুরি। ইডি-সিবিআই তৃণমূলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করলে তাঁরা কেন পাশে দাঁড়ান না বলে ষে প্রশ্ন তোলে তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর মতে, ‘‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে নই। আদালতে প্রমাণ দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে আপত্তির কিছু নেই। আমরা তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে হেনস্থা করার বিপক্ষে। বাংলায় তৃণমূল শুধু গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে নয়, দুর্নীতিতেও ডুবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sitaram Yechury CPM TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy