Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Death

সল্টলেকে বাড়ির ছাদে কঙ্কাল, ছেলেকে খুনের অভিযোগ মায়ের বিরুদ্ধে

অনিলের দাবি, তিনি জানতে পারেন যে সন্তানদের নিয়ে রাঁচী চলে গিয়েছেন স্ত্রী। ফোনে তাঁকে স্ত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গেই বড় ছেলে অর্জুন রয়েছে।

ঘটনায় তদন্তে নেমেছেন বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা।। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

ঘটনায় তদন্তে নেমেছেন বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা।। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:৫০
Share: Save:

বড় ছেলেকে অপহরণ করে খুন করেছেন তাঁর স্ত্রী। কলকাতার এক ব্যবসায়ীর এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর স্ত্রীর সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেই তল্লাশিতে ওই বাড়ির ছাদ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় কঙ্কাল হয়ে যাওয়া পচাগলা একটি দেহ। খাস কলকাতায় সল্টলেকের এ জে ব্লকের এই ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ওই কঙ্কালটি ব্যবসায়ীর বড় ছেলের। পারিবারিক বিবাদের জেরেই তাঁকে খুন করা হয়েছে। এবং পরিবারের কোনও সদস্যই খুন করেছেন। ঘটনায় সন্দেহভাজনদের তালিকায় রয়েছেন ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী-ও। জেরার পর ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী এবং তাঁদের ছোট ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোটা ঘটনায় তদন্তে নেমেছেন বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা।

পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালে অনিল মাহেনসরিয়া নামে সল্টলেকের এক ব্যবসায়ী বিধাননগর (পূর্ব) থানায় তাঁর বড় ছেলের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। অনিলের দাবি, স্ত্রী গীতা মাহেনসরিয়াই তাঁদের বড় ছেলে অর্জুন মাহেনসারিয়াকে অপহরণ করে খুন করেছেন।

কেন নিজের স্ত্রীর বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ করছেন, পুলিশকে তা-ও জানিয়েছেন অনিল। পুলিশের কাছে বয়ানে অনিল জানিয়েছেন, দাম্পত্য কলহের জেরে সম্প্রতি তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন। বড় ছেলে ২৫ বছরের অর্জুন-সহ আর এক ছেলে ২২ বছরের বিদুর এবং ২০ বছরের মেয়ে বৈদেহীকে নিয়ে সল্টলেকের বাড়িতে থাকতেন গীতা। তিনি রাজারহাটের একটি আবাসনে একা থাকতেন। অনিলের দাবি, গত ২৯ অক্টোবর তিনি জানতে পারেন যে ছেলেমেয়েদের নিয়ে নিজের বাবার বাড়ি রাঁচী চলে গিয়েছেন গীতা। যদিও পরে খোঁজ নিলে জানা যায় যে বিদুর এবং বৈদেহী মায়ের সঙ্গে রাঁচীতে থাকলেও সেখানে অর্জুন নেই। অথচ স্ত্রী গীতা ফোনে তাঁকে জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গেই বড় ছেলে রয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে স্ত্রীর উপর সন্দেহ হয় অনিলের। ছেলের খোঁজ শুরু করেন তিনি। তবে কোথাও অর্জুনের খোঁজ না পেয়ে অবশেষে বৃহস্পতিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।

আরও পড়ুন: সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত রাজ্যে, মুখ্যসচিব ও ডিজি-র সঙ্গে বৈঠকের পর টুইট রাজ্যপালের

অনিলের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ১৯৮৮ সালে অনিল এবং গীতার বিয়ে হয়েছিল। সল্টলেকের এ জে ব্লকের ২২৬ নম্বর বাড়িটি তাঁর স্ত্রী গীতার মালিকানাধীন।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় গীতাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তাঁরা। তবে বয়ানে অসঙ্গতি থাকায় তাঁকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই দম্পতির ছোট ছেলে বিদুরকেও। ইতিমধ্যেই গীতার বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা রুজু করা হলেও এই ঘটনায় বিদুরের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গীতাকে গ্রেফতারে পরেই বৃহস্পতিবার বিকেলে সল্টলেকের এ জে ব্লকের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে সল্টলেকে স্ত্রীর বাড়িতে যান তদন্তকারীরা। স্থানীয়দের দাবি, মাস দুয়েক ধরেই ওই বাড়িটি তালাবন্ধ ছিল। সেখানে কাউকে যাতায়াত করতে দেখেননি তাঁরা। ওই বাড়ির তল্লাশিতে তার তিনতলার ছাদে একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের পচাগলা কঙ্কাল দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একটি বিছানার চাদরে কঙ্কালটি মোড়া ছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কঙ্কালটি কার বা সেটি কত পুরনো, ফরেন্সিক পরীক্ষার পরেই সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

আরও পড়ুন: সামান্য কমল সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৪৯, কলকাতাতেই প্রাণ গেল ১৯ জনের

কঙ্কাল উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার রাতেই ওই বাড়িতে যান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘বাড়ির ছাদ থেকে কঙ্কাল ছাড়াও একতলার একটি ঘরে পোড়া দাগ দেখতে পাওয়া গিয়েছে।’’ পুলিশের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, ঘরে যজ্ঞ করলে যে রকম পোড়া দাগ তৈরি হয়, ওই দাগটি প্রায় সে রকম।

পুলিস সূত্রে খবর, এই ঘটনায় গীতা-সহ পরিবারের বাকি সদস্যদের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের আর এক কর্তা বলেন, ‘‘গীতা ছাড়াও বাকিদের জেরা না করা পর্যন্ত গোটা ঘটনা স্পষ্ট হবে না।’’ অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলে এই ঘটনার জট খোলার চেষ্টা চলছে। ওই দম্পতির মধ্যে কেন অশান্তি হয়েছিল, তা-ও জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।

গোটা ঘটনা ঘিরে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠছে। কঙ্কালটি কার? যদি সেটি অর্জুনের হয়, তা হলে কবে এবং কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হল? কঙ্কালটি যদি অর্জুনের না হয়, তা হলে অর্জুন এই মুহূর্তে কোথায় রয়েছেন? তবে সল্টলেকের ওই বাড়ি থেকে পচাগলা দেহের কঙ্কাল উদ্ধার হওয়ায় পর পুলিশকর্তাদের একটি প্রশ্ন বেশি করে ভাবাচ্ছে, পচাগলা দেহের কঙ্কাল উদ্ধার হলেও আশপাশের মানুষজন কেন কোনও গন্ধ পেলেন না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Skeleton Salt Lake Crime Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE