বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে স্মৃতি ইরানি। বুধবার মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর হলে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।
মোদী-সরকারের এক বছর।
অথচ মমতা-সরকার নিয়ে একটি শব্দও তিনি খরচ করলেন না।
দু’দিন আগেই বাবুল-মার্কা ঝালমুড়ির ঝাঁঝে তেলে বেগুনে জ্বলেছেন রাজ্যের এক বিজেপি নেত্রী।
অথচ তৃণমূল নিয়ে ঝালঝাল কিছু বলতেই গেলেন না তিনি। বরং ‘আ মরি বাংলা ভাষা’য় ঝরঝরিয়ে মিঠে বুলি বলে বিজেপি কর্মীদের মন ভুলিয়ে গেলেন প্রাক্তন অভিনেত্রী, বর্তমানে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।
বুধবার দুপুরে খড়্গপুর আইআইটি ঘুরে বিভিন্ন প্রকল্পের খোঁজখবর
নিয়ে বিকেলে মেদিনীপুর শহরে বিদ্যাসাগর হলে বিজেপির সভায় হাজির স্মৃতি। উপলক্ষ, মোদী সরকারের বর্ষপূর্তি। শুরুতেই জায়গা না পেয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দলীয় কর্মীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ঝরঝরে বাংলায় স্মৃতি বলেন, ‘‘রাজ্যের কার্যকর্তাদের কয়েক জন ভাবেন, আমরা যখন মার খাই তখন কে জানে? দিল্লি জানে? এটাই ভাবেন তো? আমরা কিন্তু সব খবর রাখি।’’ সেই সঙ্গেই ঝটিতি যোগ করে দেন, ‘‘কলকাতার একটি মিছিলে থাকায় আমিও জেলে গিয়েছিলাম।’’
সামনের সারিতেই বসে ছিলেন খড়্গপুরের কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারী। তাঁকে দেখতে পেয়ে মঞ্চ থেকেই স্মৃতির প্রশ্ন— “বেলাদি তুমি কত বার জিতলে। চার বার হয়ে গিয়েছে? পাঁচ বছর আগে তোমার নির্বাচনে এসেছিলাম মনে আছে? তুমি চা খাইয়েছিলে?” একগাল হেসে বেলারানি বলেন, ‘‘হ্যাঁ গো, মনে আছে। এই নিয়ে তিন বার হল।’’
মিনিট পনেরো কখনও হিন্দি, কখনও বাংলায় টানা বলে গিয়েছেন স্মৃতি। কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের লড়াইয়ের জন্যই আজ এক বছর পার করল সরকার। আপনাদের অভিনন্দন জানাতেই দিল্লি থেকে এসেছি।” সভার আগেই এক সাংবাদিক বৈঠকে সারদা-তদন্ত নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলে বোঝাপড়া হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে স্মৃতি বলেছিলেন, “কংগ্রেস সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করত। বিজেপি তা করে না।”
পরে স্মৃতির বক্তৃতার সময়ে বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য পাশ থেকে অনুরোধ করেন অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে কিছু বলতে। স্মৃতি হেসে বলেন, “শমীকদা, ও নিয়ে তুমিই বলো না!” বরং বঙ্গের বাইরেও অনেকেরই চেনা একটা গানের লাইন তুলে এনে স্মৃতি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা গানের কথা খুব মনে পড়ে— ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’। আমরা তো বাংলায় একলাই চলছি।” হাততালিতে ফেটে পড়ে হল।
স্মৃতির মুখে স্বচ্ছন্দ বাংলা শুনে আপ্লুত হয়ে পড়েন দলীয় কর্মী রঞ্জিত আঢ্য, আশীর্বাদ ভৌমিকেরা। বলেন, ‘‘ভাবতেই পারিনি, এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ ভাবে বাংলায় কথা বলবেন। খুব ভাল লাগল!’’ বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁকে দেখে মনে হয়, যেন পাশের বাড়ির মেয়ে। ২০১০ সালে খড়্গপুরে পুরভোটের প্রচারে এসে উনি আমার সঙ্গে রাস্তার দাঁড়িয়ে চা-ও খেয়েছিলেন।’’
কথার সময় ফুরোয়। স্মৃতি বলেন, “আমি যখনই রাজ্যে আসি, যাওয়ার সময়ে আগে বলেছি, এখনও বলি— আবার দেখা হবে, দুগ্গা দুগ্গা...।”
(সহ-প্রতিবেদন: দেবমাল্য বাগচী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy