অবশেষে বরফ গলার ইঙ্গিত মিলল।
পশ্চিমবঙ্গে প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকদের নিয়োগ এত দিন যে নিয়মের ফেরে আটকে ছিল, সেই নিয়ম এককালীন ভিত্তিতে শিথিল করার ইঙ্গিত দিল কেন্দ্র। তবে শর্তসাপেক্ষে। আর এর ফলে পুরভোটের মুখে বড় রকমের রাজনৈতিক সুবিধে পেয়ে গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস।
রাজ্যের স্কুলগুলিতে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগ দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। নতুন নিয়মে (১ এপ্রিল, ২০১৪) প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে শিক্ষকতার জন্য প্রশিক্ষণ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের আবেদনকারীদের একটি বড় অংশের ওই প্রশিক্ষণ নেই। ফলে পরীক্ষাতেই বসার ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারছেন না তাঁরা। প্রায় দেড় বছর পরীক্ষা বন্ধ থাকায় রাজ্যে ১ লক্ষ ২০ হাজার শিক্ষক পদ খালি পড়ে রয়েছে।
ফলে শুধু প্রশাসনিক ভাবেই নয়, রাজনৈতিক ভাবেও অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছিল রাজ্য সরকারকে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বিক্ষোভের মুখে পড়েছে সরকার। এই অচলাবস্থা কাটাতে আগামী এক বছরের জন্য ওই নিয়মে ছাড় দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে দীর্ঘ সময় ধরে দরবার করছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কলকাতা সফরে গিয়ে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তবু হাল ছাড়েননি মমতা। বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত স্মৃতির কাছে ফোনে তদ্বির করে গিয়েছেন তিনি। গতকালও মমতার সঙ্গে কথা হয় স্মৃতির। মন্ত্রক বলছে, সেখানেই প্রথম বরফ গলার ইঙ্গিত আসে। মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র ইতিবাচক পদক্ষেপ করতে পারে স্মৃতি এই ভরসা দেওয়াতেই, সরকারি ভাবে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করে ছাড়ের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন জানায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
এত দিন এই ছাড়ের বিষয়টিতে কড়া অবস্থান নিয়ে আসছিল মন্ত্রক। এ মাসের শুরুতেও এ বিষয়ে স্মৃতিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, এই মুহূর্তে মন্ত্রক কোনও নিয়ম শিথিল করার বিষয়ে ভাবছে না। কিন্তু আজ বিষয়টি নিয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়ে মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি এসেছে। উনি এককালীন ছাড়ের জন্য আবেদন করেছেন। এর আগে উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যকে এককালীন ছাড় দেওয়া হয়েছিল। এখন পশ্চিমবঙ্গকেও কী ভাবে ছাড় দেওয়া সম্ভব, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গকে শর্তসাপেক্ষে ছাড় দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রাজ্যকে লিখিত ভাবে আশ্বাস দিতে হবে, যে প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকদের নিয়োগ করা হবে তাঁদের এক বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে বাধ্য থাকবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্য সরকার এই আশ্বাস দিলে কেন্দ্রও সদর্থক পদক্ষেপ করার বিষয়ে এগোতে পারে।”
মন্ত্রকের আরও ব্যাখ্যা, নিয়মের গেরোয় এখন যদি শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকে তা হলে আখেরে ক্ষতি হবে পড়ুয়াদেরই। এটা কখনওই মন্ত্রকের কাছে কাম্য নয়। পড়ুয়াদের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক যেমন প্রয়োজন, তেমনি ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতও যাতে বজায় থাকে সেটাও দেখতে হবে। তাই এখন পশ্চিমবঙ্গের জন্য মধ্যবর্তী পন্থা খুঁজে বার করতে চাইছে কেন্দ্র। স্মৃতির মন্ত্রক জানিয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে যাঁদের প্রশিক্ষণ রয়েছে তাঁদের অগ্রাধিকার দিতে হবে রাজ্যকে। সমস্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিয়োগের পরে যাঁদের প্রশিক্ষণ নেই, তাঁদের নিয়োগ করতে পারবে রাজ্য। তাঁদের বাধ্যতামূলক ভাবে এক বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্যকেই।
কেন কেন্দ্রের এই পরিবর্তন?
সূত্রের খবর, পড়ুয়াদের স্বার্থের কথা ভেবেই নিয়ম শিথিল করার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফরের পর থেকেই রাজ্য ও কেন্দ্রের সম্পর্কে নতুন উষ্ণতা দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মমতা এক দিকে যেমন রাজ্যের ঋণ মকুব করার জন্য দাবি করেছিলেন, তেমনই রাজ্যের যে সব প্রকল্প কেন্দ্রের ছাড়পত্রের অভাবে আটকে রয়েছে সেগুলোর জন্যও আলাদা করে দরবার করেন। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারই সুফল পাওয়া যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ওই বৈঠকের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের পারস্পরিক যোগাযোগ আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে। সংসদেও কট্টর বিরোধিতার অবস্থান থেকে সরে এসেছে তৃণমূল। কয়লা ও খনি বিলে সমর্থন ছাড়াও বিমা বিল পাশ করাতে সরকারকে সুবিধে করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রতিদানে রাজ্যের আটকে থাকা প্রকল্পগুলো নিয়ে উৎসাহ দেখাতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। নগরোন্নয়ন প্রকল্পের আটকে থাকা অর্থ দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বেঙ্কাইয়া নায়ডু, রাজ্যের বিভিন্ন রেল প্রকল্পের প্রশ্নে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর বরাদ্দের বাইরে গিয়ে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্বকে।
এ বার স্মৃতি ইরানিও সহযোগিতার সেই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিলেন।
যার ফলে পুরভোটের ঠিক আগে বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে গেলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy