জলাশয়, ঘাসজমি বুজিয়ে মাথা তুলছে একের পর এক বহুতল। একদা জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা সাফ করে গড়ে উঠছে জনবসতি। ফলে, নষ্ট হচ্ছে সাপেদের বাসস্থান। এরই ফল, নিউ টাউনের যত্রতত্র সাপের উপদ্রব। এই বর্ষায় কখনও বহুতলের সিঁড়িতে, কখনও বাড়ির আশপাশে প্রায়ই দেখা মিলছে নানাবিধ সাপের। সাপে কামড়ানোর ঘটনাও বাড়ছে। তবু সাপ আমাদের শত্রু নয়, বন্ধু— এই সচেতনতার বার্তা দিতেই আজ, শনিবার শহরে এক অনুষ্ঠানে আলোচনা করবেন সরীসৃপ বিশারদ স্বর্ণ চক্রবর্তী।মহারাষ্ট্রের তাডোবা ব্যাঘ্র প্রকল্পে কর্মরত স্বর্ণ বহু বছর ধরেই সাপ ধরার কাজ করে আসছেন। কোবরা থেকে গোখরাে, দাঁড়াশ থেকে অজগর— এ দেশের বিষধর এবং নির্বিষ নানাবিধ সাপের সঙ্গে নিত্য ‘ওঠাবসা’ তাঁর।
সাপ ও মানুষের সম্পর্ককে আরও একটু সহজ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ করতে তাই ‘দ্য হিমালয়ান’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সর্পজগৎ নিয়েই কথা বলবেন স্বর্ণ। তবে, তার আগে তিনি বলছেন, ‘‘সাপেদের অধিকাংশ সময়েই আমরা শত্রু ভাবি। কিন্তু সে-ও এই পরিবেশের অংশ, বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম উপাদান। তাই তাকে মেরে ফেললে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হতে বাধ্য।’’
স্বর্ণ জানাচ্ছেন, তাডোবা ব্যাঘ্র অরণ্যের আশপাশের জনবসতি জঙ্গলে ঘেরা থাকায় সাপের আনাগোনা লেগেই থাকে। কিন্তু আগে সেখানকার জনজাতি সম্প্রদায়ের বাড়িতে সাপ বেরোলে তা পিটিয়ে মেরে ফেলা হলেও এখন সচেতনতা বেড়েছে। তাঁরা এখন বন দফতর অথবা সাপ উদ্ধারকারীদের খবর দেন। স্বর্ণের কথায়, ‘‘ওঁরা বুঝেছেন, বিষাক্ত সাপেরাও চট করে কামড়াতে চায় না। ওদের বিষ তৈরি হয় শিকার করার জন্য, তাই সেটা ওরা নষ্ট করতে চায় না। তাই মানুষের সামনে পড়লে পালিয়ে যাওয়ারই চেষ্টা করে। দাঁড়াশ সাপ আবার চাষির বন্ধু, ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষা করে। জীবনদায়ী ওষুধও তৈরি হয় সাপের বিষ থেকেই।’’
তবে, এ দেশে আজও সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, এ দেশে বছরে সাপের কামড়ে মারা যান প্রায় ৮০ হাজার মানুষ! অথচ এ নিয়ে সচেতনতার অভাব এবং কুসংস্কার— দুই-ই প্রবল ভাবে রয়েছে। স্বর্ণের আক্ষেপ, ‘‘কোভিড বা ডেঙ্গির মরসুমে প্রতিষেধকের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রচুর বিজ্ঞাপন দেখেছি আমরা। কিন্তু সাপে কামড়ালে ওঝার কাছে না গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টি-ভেনাম নিতে যাওয়া প্রয়োজন— এইটুকু কথা কোথাও প্রচারিত হয় না।’’
তবে, সাপ নিয়ে আতঙ্কের পিছনে বহু ক্ষেত্রে উদ্ধারকারীদের ‘দেখনদারি’র প্রবণতাও অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন স্বর্ণ। তাঁর মতে, একটি সাপ উদ্ধারে লাগে মাত্র ৩-৪ মিনিট। কিন্তু ভিডিয়ো বা রিল বানানোর তাগিদে সেই উদ্ধারকাজে অযথা দেরি করা হচ্ছে। ফলে, দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেকে উপযুক্ত পোশাক বা সরঞ্জাম না নিয়ে খালি হাতেই সাপ ধরে ‘বাহাদুরি’ দেখাতে গিয়ে বিপদে পড়েন। ফলে জনমানসে আরও আতঙ্ক ছড়ায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)