Advertisement
E-Paper

অবৈধ বালির ‘মধু’র জন্যই ঝরছে রক্ত

লাভপুর তো বটেই, বালি-ঘাটের দখল নিয়ে আগেও বহু বার রক্তে ভিজেছে বীরভূমের মাটি। কারণ, অবৈধ বালি-ব্যবসার ‘মধু’—প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে পাওয়া কাঁচা টাকা। বেসরকারি হিসেবে, অবৈধ বালি-ঘাটের কারবারীর লাভ মাসে অন্তত ২০-২৫ লক্ষ টাকায় দাঁড়ায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৩৬

লাভপুর তো বটেই, বালি-ঘাটের দখল নিয়ে আগেও বহু বার রক্তে ভিজেছে বীরভূমের মাটি। কারণ, অবৈধ বালি-ব্যবসার ‘মধু’—প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে পাওয়া কাঁচা টাকা। বেসরকারি হিসেবে, অবৈধ বালি-ঘাটের কারবারীর লাভ

মাসে অন্তত ২০-২৫ লক্ষ টাকায় দাঁড়ায়। লাভের অঙ্ক বেশি বলেই তা নিয়ে রক্তক্ষয়ে পিছপা হয় না বালি-মাফিয়ারা। চলতি মাসের গোড়ায় সিউড়িতে একপ্রস্ত তাণ্ডব চালিয়েছিল তারা। তার পরে শুক্রবারের লাভপুর।

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে নদী থেকে ইচ্ছেমতো বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সরকারকে বিধিমতো বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে বালি তোলার অধিকার পান ই-অকশনের মাধ্যমে লিজপ্রাপ্তেরাই। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রের খবর, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১০টি বালিঘাটে মেয়াদী লিজ এবং ৬০টিতে স্বল্প-সময়ে বালি তোলার অনুমতি দিয়ে বীরভূম জেলায় রাজস্ব বাবদ প্রায় ৬৭ কোটি টাকা উঠেছে। কিন্তু সরকারি সূত্রের দাবি, বালি পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে অনাদায়ী থাকছে আরও বেশি।

কী ভাবে?

প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় বহু অবৈধ বালিঘাট রয়েছে, যার ইজারা দেওয়া হয়নি। সংখ্যাটা শতাধিক। কিছু ‘প্রভাবশালী’ লোককে হাতে রেখে গায়ের জোরে এই ঘাটগুলি থেকে বালি তোলে মাফিয়ারা। আর সরকারি ভাবে বিলি হওয়া ঘাটের ক্ষেত্রেও নিয়ম ভাঙার নজির রয়েছে। যেমন—একটি ঘাট থেকে যতটা বালি তোলার কথা, ইজারাদারদের অনেকে তার চেয়ে অনেক বেশি বালি তোলেন বলে অভিযোগ। গাড়িতে অনুমোদিত পরিমাণের বেশি বালি তোলা, নিজের বরাদ্দ ঘাট ছাড়াও অন্য ঘাটে ‘বোঝাপড়া’ করে গাড়ি লাগানো, কোনও বালি ব্যবসায়ীকে প্রশাসন ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করলে অন্য নামে তাঁর কারবার চালানো— অভিযোগের অন্ত নেই।

বীরভূম জেলা প্রশাসনের এক কর্তার আক্ষেপ, ‘‘দিনের পর দিন এই কাণ্ড চলছে। বালি-মাফিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সরকারি দফতর ও পুলিশের কেউ কেউ। সবার উপরে আছে নেতাদের আশীর্বাদ।’’

সেই সূত্রে লাভপুর, সাঁইথিয়া, তিলপাড়া, ময়ূরেশ্বরে ময়ূরাক্ষী নদীতে, ময়ূরেশ্বরের কামড়াঘাট, শেখপুরে দ্বারকা নদীতে এবং নানুরের থুপসড়া, বোলপুরের গীতগ্রামের মতো এলাকায় অজয় নদে বালি পাচারের রমরমা হয়েছে।

বালি পাচারে জড়িতদের একাংশের বক্তব্য, ইমারতি ব্যবসায় মোটা দানা বালির কদর বেশি। তেমন বালি বোঝাই ট্রাক্টরে ১০০ সিএফটি-র (ঘনফুট) জন্য ঘাট মালিকেরা প্রায় পাঁচশো টাকা পান। চার চাকার লরি, ছয়-দশ-ষোলো চাকার ট্রাকের জন্য গুণিতকে টাকা বাড়ে। প্রতিটি ঘাট থেকে প্রতিদিন গড়ে পাঁচশো থেকে সাতশো গাড়ি বালি বর্ধমান,

হুগলি, নদিয়া, মুশির্দাবাদ এবং কলকাতায় যায়। সেই হিসেবে অবৈধ বালি-ঘাটের মালিক মাসে অনায়াসে অন্তত ৩০ লক্ষ টাকা আয় করেন। এলাকার নেতা-পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের ‘প্রণামী’ এবং পাচারের কারবার দেখভালের জন্য লোকের পারিশ্রমিক বাবদ তাঁর মাসিক পাঁচ থেকে দশ লক্ষ টাকা খরচ হয়। বাকিটা লাভ।

জেলা পুলিশের এক কর্তাও মানছেন, ‘‘অবৈধ বালির ট্রাকের চাকায় টাকা ওড়ে। তাই এই ব্যবসা ঘিরে রক্ত ঝরা বন্ধ হচ্ছে না।’’

Illegal Sand Trade Death Blood Sand Mafia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy