Advertisement
E-Paper

পঞ্চম-অষ্টমের পরীক্ষায় শৈশব হরণের আশঙ্কা

ওই পরীক্ষায় বোর্ডের হস্তক্ষেপ আখেরে খারাপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন মডার্ন হাইস্কুলের অধিকর্তা দেবী কর-ও। তিনি জানান, পরীক্ষা ব্যবস্থার আদৌ কতটা সুফল রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বিশ্ব জুড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ১৪:১০

আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের পরীক্ষা নিতে চলেছে আইসিএসই বোর্ড। কিন্তু কলকাতায় ওই বোর্ডের অধীনে থাকা বেশ কয়েকটি স্কুল এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ সমালোচনায় মুখর হয়েছে।

যেমন এই সিদ্ধান্ত শিশুদের কাছ থেকে তাদের শৈশবটুকুই কেড়ে নিতে চলেছে বলে আক্ষেপ করছেন লা-মার্টিনিয়ারের সচিব সুপ্রিয় ধর। যদিও বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, পঞ্চম-অষ্টমে পরীক্ষা নেওয়ার ফলে পড়ুয়াদের উপরে বাড়তি কোনও চাপ পড়বে না। কেননা এই পরীক্ষার জন্য পৃথক প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে না। পড়ুয়ারা প্রশ্নের জবাব দেবে তাদের বোধবুদ্ধি আর মানস-প্রবণতা অনুযায়ী। এই পরীক্ষার চরিত্র মোটেই দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার মতো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বোর্ডের সচিব জেরি অ্যারাথুন।

আইসিএসই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বোর্ড-পরীক্ষা নেওয়া হবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই। কিন্তু পড়ুয়াদের উপরে বাড়তি চাপের প্রশ্ন নেই বলে বোর্ডের তরফে যে-আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, শহরের স্কুলপ্রধানদের একটি অংশ তাতে আস্থা রাখতে পারছেন না। তাঁদের বক্তব্য, যে-হেতু এটা পরীক্ষাই, তাই চাপ না-পড়ে যায় না। কিন্তু তাঁরা পড়ুয়াদের এই বাড়তি চাপ দিতে রাজি নন। লা-মার্টিনিয়ারের সচিব সুপ্রিয়বাবু জানান, বোর্ডের পরীক্ষা মানেই পড়ুয়াদের উপরে বাড়তি চাপ। দশম-দ্বাদশ শ্রেণিতে সেই চাপ নেওয়ার প্রস্তুতি থাকলেও পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে সেটা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। তিনি বলেন, ‘‘এই বাড়তি চাপের ফলে ওই শিশুদের জীবন থেকে শৈশব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এটা ঠিক নয়।’’ শুধু তা-ই নয়, এর ফলে গৃহশিক্ষক দিয়ে বাচ্চাদের পড়ানোর প্রবণতা আরও বাড়বে বলেই তাঁর আশঙ্কা।

ওই পরীক্ষায় বোর্ডের হস্তক্ষেপ আখেরে খারাপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন মডার্ন হাইস্কুলের অধিকর্তা দেবী কর-ও। তিনি জানান, পরীক্ষা ব্যবস্থার আদৌ কতটা সুফল রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বিশ্ব জুড়ে। তার মধ্যে ফের পরীক্ষার চাপ দেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমার আশঙ্কা, এর ফলে পড়ুয়াদের উন্নতির বদলে মানসিক বিকাশ ব্যাহত হবে। সেটা ভয়ঙ্কর।’’ শুধু পড়ুয়া নয়, অভিভাবকেরাও এতে চাপে পড়বেন বলে তাঁদের ধারণা।

বিবেকানন্দ মিশন স্কুলের অধ্যক্ষা শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কেউ কেউ অবশ্য বোর্ডের সিদ্ধান্তের উপরে আস্থা রাখারই পক্ষপাতী। শর্মিষ্ঠাদেবী বলেন, ‘‘এত দিন পর্যন্ত বোর্ড সব সময়েই পড়ুয়াদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি, এ ক্ষেত্রেও সেটাই হবে। তবে হঠাৎ নতুন নিয়ম চালু হলে কিছুটা অসুবিধা তো হবেই। পুরোটা না-জেনে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ বোর্ডের পরীক্ষার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্যালকাটা বয়েজের অধ্যক্ষ রাজা ম্যাকগি। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এটা মানতেই হবে যে, এর ফলে পড়ুয়াদের উপরে বাড়তি মানসিক চাপ পড়বে।’’

আইসিএসই বোর্ডের সচিব অ্যারাথুন জানান, চাপের প্রশ্ন নেই। পড়ুয়ারা ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সোশ্যাল স্টাডিজের পরীক্ষা দেবে। পড়ুয়ারা বুদ্ধি কাজে লাগিয়েই উত্তর দিতে পারবে। সেই উত্তর বিশ্লেষণ করে দেখা হবে, কোন পড়ুয়ার খামতি কোথায়। তার রিপোর্ট পাঠানো হবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও অভিভাবকের কাছে। অ্যারাথুন বলেন, ‘‘প্রস্তুতি ছাড়া এই পরীক্ষায় যোগ দিয়ে পড়ুয়ারা সৃষ্টিশীলতার প্রমাণ দেবে। কোন পড়ুয়ার কোন বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে, সেটাও বোঝা যাবে।’’

কিন্তু ওই স্তরে পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ও আশঙ্কা রয়েছে অনেকের মনেই।

ICSE Exams Schools La Martiniere Calcutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy