Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Somen Mahapatra-Suvendu Adhikari

পদ হারিয়ে কি ‘শুভ-যোগ’, উড়িয়ে দিলেন সৌমেন

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের সময়েও শুভেন্দু অধিকারী বনাম সৌমেনের টক্কর ছিল জেলা রাজনীতির অন্যতম চর্চার বিষয়। পাল্টা কর্মসূচি তো ছিলই, পরস্পরকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করতেন তাঁরা।

soumen and suvendu

তখন দু’জনেই তৃণমূলে। ২০১৩ সালে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবসে পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারী ও সৌমেন মহাপাত্র। —ফাইল চিত্র।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৩
Share: Save:

কেউ প্রকাশ্যে, কেউ আবার আড়ালে।

নন্দীগ্রামের জেলায় তৃণমূলের ছোট-বড় অনেক নেতাই নাকি অধিকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন, এমনই চর্চা জেলার রাজনৈতিক মহলে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে নন্দীগ্রামের নেতা শেখ সুফিয়ানের সঙ্গে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের বৈঠক নিয়ে আলোড়ন পড়েছিল। শুক্রবার সাংসদ শিশির অধিকারীর পা ছুঁয়ে, তাঁকে গুরুদেব সম্বোধন করে শোরগোল ফেলেছেন কাঁথির তৃণমূল পুরপ্রধান সুবল মান্না। এ বারে চর্চায় আরও একটি নাম— সৌমেন মহাপাত্র।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের সময়েও শুভেন্দু অধিকারী বনাম সৌমেনের টক্কর ছিল জেলা রাজনীতির অন্যতম চর্চার বিষয়। পাল্টা কর্মসূচি তো ছিলই, পরস্পরকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করতেন তাঁরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রথমে মন্ত্রিত্ব, তার পরে জেলা সভাপতির পদ যাওয়ার পরে তমলুকের বিধায়ক সেই সৌমেন গত কয়েক মাস ধরে শুভেন্দুকে নিয়ে কার্যত নীরব। এমনকি, সৌমেন এর মধ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করেছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন, চর্চা শুরু হয়েছে দলেই।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বকেয়া টাকার দাবিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দিল্লির আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন সৌমেন। তখন দিল্লিতে ছিলেন শুভেন্দুও। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, সেই সময়ে রাজধানীতে দু’জনের সাক্ষাৎ হয়ে থাকতে পারে বলে প্রবল চর্চা শুরু হয়েছে দলে।

সৌমেন অবশ্য এমন চর্চা পুরোপুরি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। বলছেন, ‘‘শুভেন্দু তখন দিল্লি যান ঠিকই। তবে আমার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ভিত্তিহীন।’’ একই সঙ্গে সৌমেনের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘যারা আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রচার করছে, তারাই রাতের অন্ধকারে শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে।’’ এত দিন আপনি যে তীব্র ভাবে আক্রমণ করতেন বিরোধী দলনেতাকে, তাতেও কি ভাটা পড়েছে— এই প্রশ্নের জবাবে সৌমেন বলছেন, ‘‘গালাগালি দিলেই কি আগ্রাসী হয়ে যায়! আসলে যাদের ভাষার দৈন্য থাকে, তারা ওই রকম বলে। সৌমেন মহাপাত্র সেইচরিত্রের নয়।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলে থাকাকালীন তাঁর অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম আমিই।’’ একই সঙ্গে কিন্তু তিনি এ-ও বলেন, ‘‘শুভেন্দু এখন প্রধান বিরোধী দল বিজেপিতে। তাই, শুভেন্দুও আমার বিরোধী। কিন্তু এ কি শুধু ব্যক্তি শুভেন্দুর বিরুদ্ধে লড়াই যে, আমাকে গালাগাল করতে হবে?’’

শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ার পরই পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন সৌমেন। জেলা তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে শিশির অধিকারীকে সরিয়ে আনা হয়েছিল সৌমেনকেই। তবে তার পর জল অনেক গড়িয়েছে। ইতিমধ্যে অন্য অনেক পুরনো আমলের নেতার মতোই তৃণমূলে সৌমেনের গুরুত্ব কমেছে। মন্ত্রিত্ব, জেলা সভাপতির পদ গিয়েছে। সঙ্গে বিষ ফোঁড়ার মতো রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভয়। এই সব মিলিয়েই কি তিনি বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের প্রতি ‘আকৃষ্ট’ হয়েছেন? শুভেন্দুর ছোট ভাই তথা বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সৌমেন্দু অধিকারীর এই চর্চার বিষয়টি উড়িয়ে দাবি করেছেন, ‘‘এ সব ভিত্তিহীন কথাবার্তা।’’

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের আবার ব্যাখ্যা, ‘‘উনি (সৌমেন মহাপাত্র) বরাবরই ঠান্ডা মাথার লোক। রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেন। কিন্তু আক্রমণের ঝাঁঝটা হয়তো কম। সেটা হয়তো স্বভাবসিদ্ধ।’’ আর শুভেন্দু-সৌমেন দিল্লিতে সাক্ষাৎ নিয়ে কুণালের বক্তব্য, ‘‘এমন কোনও খবর আমাদের কাছে নেই।’’ সৌমেন নিজে বলছেন, ‘‘সাক্ষাৎ করলে তো তার ছবি থাকবে। যদি প্রমাণ করতে পারে, দল যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP midnapore Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE