Advertisement
E-Paper

ডাইন অপবাদ! ছেলেকে দিয়েই বাবার দশ আঙুল কাটানো হল

বাড়ির প্রবীণ সদস্য এমন নির্যাতনের শিকার হওয়ায় ভয়ে সিঁটিয়ে গোটা পরিবার। তাই মঙ্গলবার বিকেলের ওই ঘটনায় এখনও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়নি, পাছে আরও অত্যাচার হয়।

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:২৭
বর্ধমানে মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ফন্দি সর্দার। নিজস্ব চিত্র

বর্ধমানে মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ফন্দি সর্দার। নিজস্ব চিত্র

ডাইন অপবাদে এক আদিবাসী বৃদ্ধের দু’হাতের দশটি আঙুলই কাটার অভিযোগ উঠল বীরভূমের পাড়ুইয়ে। তাঁর ছেলেকে দিয়েই ওই কাজ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ। ফন্দি সর্দার নামে গুরুতর জখম বছর সত্তরের ওই বৃদ্ধ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

বাড়ির প্রবীণ সদস্য এমন নির্যাতনের শিকার হওয়ায় ভয়ে সিঁটিয়ে গোটা পরিবার। তাই মঙ্গলবার বিকেলের ওই ঘটনায় এখনও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়নি, পাছে আরও অত্যাচার হয়। কিন্তু, বাড়ির মহিলারা মৌখিক ভাবে অভিযোগ করছেন, গ্রামবাসীর একাংশের চাপে বাবার দশ আঙুল কাটতে বাধ্য হন ছেলে। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ওই বৃদ্ধও জানিয়েছেন, ডাইন অপবাদ দিয়ে তাঁর আঙুল কাটা হয়েছে। ওই বৃদ্ধের ছেলে-সহ ছ’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েতের যে রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে, সেটি বোলপুর শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে। এখানে বাস ৩০-৩২টি আদিবাসী পরিবারের। ফন্দিবাবুর বাড়িতে কালীর নিত্যপুজো হয়। ওই বৃদ্ধ কালা জাদু করেন বলে গ্রামবাসীর বড় অংশের দাবি। বৃদ্ধের পরিবারের অভিযোগ, গ্রামের কয়েক জনের ‘ভর’ হচ্ছে দাবি করে সেই দায় চাপানো হয় ফন্দিবাবুর উপরে। সেই নিয়ে মোড়লের নির্দেশে সালিশি সভা বসে। তাতে ফন্দিবাবুকে ডাইন অপবাদ দেওয়া হয়। মীমাংসা না হওয়ায়
বোলপুর লাগোয়া রাইপুরে এক গুণিনের কাছে যাওয়া হয়। তিনি নিদান
দেন, ওই বৃদ্ধের উঠোনের নীচে একটি ঘট রয়েছে। সেটি বার করে নষ্ট করে ফেলতে পারলে সমস্যার মুক্তি। ঘট না পেলে বৃদ্ধ যে দুই হাতে কালীপুজো করেন, তার আঙুল কেটে নিতে হবে।

সোমবার সন্ধ্যায় মাটি অনেকটা খুঁড়েও কোনও ঘট মেলেনি। এর পরে ফন্দিবাবুর ছেলেকে চাপ দেওয়া হয় বাবার দু’হাতের সব আঙুল কেটে নেওয়ার জন্য। না হলে বাড়ির মেয়েদের উপরে অত্যাচারের হুমকি দেওয়া হয়। নিরুপায় হয়ে ওই যুবক কাটারি দিয়ে বাড়ির উঠোনেই বাবার আঙুলগুলি কেটে নেন।

গ্রামের মোড়ল অনিল সর্দারের দাবি, সালিশি সভা হয়েছিল দু’পক্ষের বিবাদ মেটাতে। আঙুল কাটার ফরমান দেওয়া হয়নি। কসবা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান প্রতিমা হেমরম বলেন, ‘‘বুধবার পঞ্চায়েত সদস্যেরা গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন।’’ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা শাখার সহ-সম্পাদক দেবাশিস পালের কথায়,
‘‘পিছিয়ে পড়া, শিক্ষার অভাব আছে— এমন এলাকায় এই সব ঘটনা
ঘটে। শীঘ্রই ওই গ্রামে প্রচার চালাব।’’

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘বিডিও-কে বলা হয়েছে ওই এলাকায় জনসচেতনতা তৈরি করতে, যাতে আগামী দিনে এ ভাবে কাউকে অত্যাচারিত না হতে হয়।’’

Witch Witch hunting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy