ময়লা তুলছেন সোনু। নিজস্ব চিত্র
যে হাতে চক-ডাস্টার ধরার স্বপ্ন ছিল, সে হাতে এখন কোদাল চালিয়ে নর্দমার ময়লা তোলেন, ঝাড়ু দেন রাস্তায়। পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার বাসিন্দা, স্নাতকোত্তর সোনু শর্মা পুরসভার অস্থায়ী সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি, ‘নেট’ পরীক্ষা ও রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্যও তৈরি হচ্ছেন।
গুসকরার পোস্ট অফিস রোডের বাসিন্দা জয়প্রকাশ শর্মা ও মিনা শর্মার পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে সোনু ছোট। দুই দাদার এক জন ভাড়ার গাড়ির চালক, অন্য জন কাঠ-মিস্ত্রি। সোনু গুসকরা কলেজ থেকে ৫৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সাম্মানিক স্নাতক হন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্নাতকোত্তর। বিএড এবং কম্পিউটারে ডিপ্লোমাও করেন।
বছর তিরিশের সোনু জানান, বাবা কাঠমিস্ত্রির কাজ করে খুব কষ্টে পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। কলেজে উঠে টিউশন করে পড়ার খরচ চালিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “দীর্ঘদিন রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। রেল, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, রাজ্য ও কেন্দ্রের ‘গ্রুপ সি’, ‘গ্রুপ ডি’ পদের জন্য পরীক্ষা দিয়েও চাকরি পাইনি। বয়স্ক বাবার আয়ে নির্ভর করতে বিবেক দংশন হচ্ছিল। স্কুলের শিক্ষকদের কাছেই পড়ুয়ারা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের টিউশন নিতে ভিড় করে। শেষে কয়েক সপ্তাহ আগে, পুরসভার অস্থায়ী সাফাই কর্মীর কাজে লেগেছি।’’ তিনি জানান, দৈনিক ১৭৫ টাকা মজুরিতে সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করছেন। ছেলের এই আয়ে খুশি নন জয়প্রকাশ। তিনি বলেন, ‘‘ওকে রাস্তায় ঘুরে আবর্জনা সাফ করতে দেখে খারাপ লাগছে। তবু বলি, শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা যেন না ছাড়ে।’’
সোনু অবশ্য বললেন, “কোনও কাজই ছোট নয়। আমার অনেক বন্ধু জমি, গয়না বন্ধক রেখে বিএড করেও, এখন আনাজ বিক্রি করছে। আমার বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগী হলে আঁধার কেটে যাবে।’’ গুসকরার পুরপ্রধান কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভাল কাজের সুযোগ এলে, ওঁর কথা ভাবব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy