সম্ভবত ঠাঁইবদল হচ্ছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার। পশ্চিম মেদিনীপুরেই ওই কারখানা হবে। তবে শালবনির বদলে চন্দ্রকোনা রোডে (গড়বেতা-৩ ব্লক), আলোচনা এমনই। সে ক্ষেত্রে জিন্দলদের জমিতে নয়, সৌরভের কারখানা হয়তো হবে প্রয়াগ ফিল্মসিটির জমিতে।
গত সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় শিল্প গড়তে রাজ্য সরকার ১ টাকা মূল্যে প্রায় ৩৫০ একর জমি লিজ়ে দেবে শিল্পোন্নয়ন নিগমকে। অনুমান, আগামী দিনে সৌরভদের সংস্থাকে ওই জমিই দেওয়া হতে পারে। আর সেই সূত্রেই চর্চায় ফিল্মসিটির জমি। চন্দ্রকোনা রোডে প্রয়াগ ফিল্মসিটির একরের পর একর জমি পড়ে রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, কিছু দিন আগে সেই জমির মাপজোকও হয়েছে। ভূমি দফতর জমি জরিপ করে দেখেছে, কতটা ‘ব্যবহৃত’ হয়েছে, কতটাই বা ‘অব্যবহৃত’।
জেলা প্রশাসন অবশ্য এখনই কিছু বলতে নারাজ। সৌরভদের প্রস্তাবিত কারখানা কি শালবনি থেকে সরে গড়বেতার একটি ব্লকে যেতে পারে— এই প্রশ্নের জবাবে জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘এ নিয়ে অফিসিয়াল কমিউনিকেশন (সরকারি নির্দেশ) কিছু নেই। যত দিন সেটা না হবে তত দিন কিছু বলতে পারব না।’’ সম্প্রতি তো ফিল্মসিটি ও আশপাশের জমির মাপজোক হয়েছে? এ বারও সদুত্তর এড়িয়ে জেলাশাসক বলেন, ‘‘বিভিন্ন সময়, প্রয়োজনে বিভিন্ন জমির মাপজোক হতেই থাকে।’’
শালবনিতে নতুন করে ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠতে চলেছে— মাস আড়াই আগে স্পেনের মাদ্রিদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে এ কথা ঘোষণা করেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কয়েক মাসের মধ্যেই কারখানা গড়ার কাজ শুরু হবে বলেও জানান সৌরভ। পরে কলকাতায় বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনেও (বিজিবিএস) মমতার পাশে দেখা গিয়েছে সৌরভকে। তাঁকে বাংলার নয়া ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ও করা হয়েছে। তবে এখন শোনা যাচ্ছে, শালবনি নয়, সৌরভের কারখানা হয়তো হবে গড়বেতায়। খাতায়কলমে অবশ্য চন্দ্রকোনা রোডের (গড়বেতা-৩ ব্লক) এই এলাকা শালবনি বিধানসভারই অন্তর্গত।
প্রশ্ন উঠেছে, শালবনি থেকে যদি প্রস্তাবিত কারখানাটি সরে যায়, তার পিছনে কারণ কী? কয়েক মাস আগেও তো শালবনিতে এসে মমতা জানিয়েছিলেন, জিন্দল গোষ্ঠী অব্যবহৃত জমি ফেরত দেবে। তবে শিল্পমহলের একটি অংশের অনুমান, এই জমি ফেরতে আইনি জটিলতা দেখা দিলেও দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে তাই বিকল্প জমির খোঁজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। সে সূত্রেই হয়তো নজরে রয়েছে ফিল্মসিটির ‘অব্যবহৃত’ জমি।
বাম আমলে, ২০০৮ সালে এখানে শুরু হয়েছিল জমি অধিগ্রহণ। গড়বেতা-৩ ব্লকের নয়াবসত এবং সাতবাঁকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬টি মৌজায় প্রায় ৪৫০ একরে গড়ে ওঠে প্রয়াগ ফিল্মসিটি। ২০১২ সালে এর উদ্বোধনে এসেছিলেন শাহরুখ খান। জমির সিংহভাগই ছিল পাট্টা আর খাসজমি। তবে খাতায়কলমে ফিল্মসিটির জমি এখনও নাকি প্রয়াগের নামে নথিভুক্ত নয়। ইতিমধ্যে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন প্রয়াগের দুই কর্ণধার বাসুদেব ও তাঁর ছেলে অভীক বাগচী। তার পর থেকেই প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা ফিল্মসিটি জুড়ে শুধুই অন্ধকার।
তবে কি সৌরভের ইস্পাত কারখানার হাত ধরে সেই আঁধার ঘুচবে? আশার আলো দেখছে গোটা জেলাই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)