E-Paper

মেসির অনুষ্ঠানে পুলিশের ছাপ মারা স্লিপ, প্রশ্ন

যুবভারতীর ভিতরের গোলমালের সঙ্গে মেসি যে হোটেলে উঠেছিলেন, সেখানকার কোনও পরিস্থিতির যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার ভাবনা রয়েছে তদন্তকারীদের। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ওই দিন মাঠে যে প্রভাবশালীরা ছিলেন, তাঁরা কোনও ভাবে লোক ঢুকিয়েছিলেন কি না, দেখা হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:০৭
যুবভারতীতে লিয়োনেল মেসির অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা।

যুবভারতীতে লিয়োনেল মেসির অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা। — ফাইল চিত্র।

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ঘটনার তদন্তে নেমে সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হল রাজ্য সরকারের তৈরি বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’-এর। বুধবার রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা অধিকর্তা পীযূষ পাণ্ডের নেতৃত্বাধীন সিট-এর চার সদস্য যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন পরিদর্শন করার পরই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সূত্রের খবর। আপাতত বিভিন্ন কমিশনারেটের দক্ষ চার জন অফিসারকে এই দলে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। পরবর্তী কালে সিট-এর সদস্য সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে প্রথম দিন ঠিক কোন কোন বিষয় সিট-এর তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখলেন, তা খোলসা করে জানানো হয়নি। নবান্ন সূত্রে শুধু জানা গিয়েছে, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ও বিধাননগর পুলিশের কমিশনার মুকেশ শো-কজ় নোটিসের জবাব নবান্নে জমা করেছেন।

যদিও এ দিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রবেশের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়া রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, সরকারের তৈরি সিট তাঁরা মানতে নারাজ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যে পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে, সেই পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করবে কী করে?’’

এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে যান সিট-এর সদস্য রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা পীযূষ পাণ্ডে, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম, এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এবং ব্যারাকপুর পুলিশের কমিশনার মুরলীধর শর্মা। প্রায় ৪০ মিনিট তাঁরা মাঠের অবস্থা ঘুরে দেখেন। এর পরে তাঁরা বিধাননগর কমিশনারেটে যান। সেখানে হাজির বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ ও অন্যান্য পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। সূত্রের খবর, স্টেডিয়ামের ঘটনায় বিধাননগর দক্ষিণ থানায় যে দু’টি মামলা রুজু করা হয়েছে, তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেন সিট-এর তদন্তকারীরা। ২০ মিনিট সেখানে কাটানোর পরে বেরিয়ে যান সিট-এর সদস্যেরা। এর পরে দুপুর ৩টে নাগাদ যুবভারতীতে যান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। ঘটনার পাঁচ দিন পরে তাঁরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখলেন। কিছু নমুনাও সংগ্রহ করেন।

সূত্রের খবর, যুবভারতীর ভিতরের গোলমালের সঙ্গে মেসি যে হোটেলে উঠেছিলেন, সেখানকার কোনও পরিস্থিতির যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার ভাবনা রয়েছে তদন্তকারীদের। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ওই দিন মাঠে যে প্রভাবশালীরা ছিলেন, তাঁরা কোনও ভাবে লোক ঢুকিয়েছিলেন কি না, দেখা হচ্ছে। যে প্রভাবশালীরা সরাসরি মাঠের
ভিতরে ছিলেন না, অথচ স্টেডিয়ামে ছিলেন, তাঁদের ভূমিকাও আতশকাচের তলায় নিতে চাইছে বিশেষ
তদন্তকারী দল। এই সূত্রেই ধৃত শতদ্রু দত্তকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। তিনি মেসিকে ঘিরে যে পরিকল্পনা করেছিলেন তাতে কোথায় কোথায় বাধা পেয়েছিলেন, কারা মূলত বাধার কারণ হয়েছিলেন, ইত্যাদি জানতে চাওয়া হবে বলে পুলিশের ওই সূত্রের দাবি।

এর মধ্যেই সামনে এসেছে বিধাননগর পুলিশের ছাপ মারা এক ধরনের কাগজের ‘স্লিপ’। তাতে ‘সোশাল মিডিয়া সেল’ লেখা ছিল। ওই স্লিপ নিয়েই অনেকে মেসির কাছাকাছি মাঠের সবুজ গালিচায় ঢুকে পড়েছিলেন বলে পুলিশ জেনেছে। ওই স্লিপ কারা তৈরি করেছিল, কারা বিলি করেছিলেন, দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ভাঙচুর চালানোর ঘটনায় গ্রেফতারিও জারি রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে, সিট-এর তদন্ত কি শেষ পর্যন্ত কোনও প্রভাবশালীকে ছোঁবে? কারণ মেসির উপস্থিতিতে গোলমালের মূলে প্রভাবশালীদের ঘিরে থাকা অন্যতম বিষয় হিসেবে সামনে এসেছে। এই কারণেই দর্শকদের ক্ষোভের শুরু বলেও প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত
হয়েছে পুলিশ।

রাজ্য পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘সেই কারণেই মেসি যে হোটেলে ছিলেন, সেখানকার পরিস্থিতি যুবভারতীর ঘটনার সঙ্গে এক সূত্রে নিয়ে দেখার ভাবনাচিন্তা হচ্ছে।’’ এই ঘটনায় টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়ার আশ্বাস পুলিশের তরফে দেওয়া হলেও কবে তা বাস্তবায়িত হবে সেই প্রশ্ন ঘুরছে। পুলিশের তরফে যদিও এখনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Salt Lake Stadium Lionel Messi Special Investigation Team

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy