Advertisement
E-Paper

দিন গিয়েছে পাটের দড়ির, ধুঁকছে গ্রাম

কলকাতা, শিলিগুড়ি থেকে রাজধানী দিল্লিতেও বাংলার গ্রামীণ শিল্পকে পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ‘বিশ্ব বাংলা’ বিপণি তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারপরেও গ্রাম-বাংলার লোকশিল্পের হাল কতখানি ফিরেছে, তা নিয়ে সংশয় জাগতে পারে এই গ্রামে এলে।

অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১৯
চলছে দড়ি বোনা। নিজস্ব চিত্র।

চলছে দড়ি বোনা। নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা, শিলিগুড়ি থেকে রাজধানী দিল্লিতেও বাংলার গ্রামীণ শিল্পকে পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ‘বিশ্ব বাংলা’ বিপণি তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারপরেও গ্রাম-বাংলার লোকশিল্পের হাল কতখানি ফিরেছে, তা নিয়ে সংশয় জাগতে পারে এই গ্রামে এলে। সরকারি উদ্যোগের অভাবে পাটের দড়ি তৈরির কাজ কার্যত ধুঁকছে দাঁইহাটের মোকামপাড়ায়। অন্তত তেমনটাই দাবি এলাকার বাসিন্দাদের।

গ্রামবাসীরাই জানান, একটা সময় ছিল, যখন পাড়ায় এলেই দেখা যেত প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলছে দড়ি পাকানোর কাজ। কিন্তু সে সময় গিয়েছে বহুদিন। প্রায় বছর দশেক ধরে পাটের দড়ির জায়গায় এসেছে নাইলনের দড়ি। অপেক্ষাকৃত কম দাম আর বেশি টেকসই হওয়ায় ক্রেতারাও পছন্দ করছেন নাইলনের দড়ি।

ছোট থেকেই পাটের দড়ি বানানোর কাজে হাত পাকিয়েছিলেন দাঁইহাটের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মোকামপাড়ার বাসিন্দা মোরসেদ শেখ, ফুলসেদ শেখরা। তাঁরাই জানান, এক সময় ৫০টি পরিবারের সদস্যরা সকলেই প্রায় দড়ি পাকানোর কাজ করতেন। এখন সংখ্যাটা কমতে কমতে ২০তে ঠেকেছে। অনেকেই রুজির টানে বাপ-ঠাকুর্দার পেশা ছেড়ে অন্য কাজ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। দড়ি শিল্পে এখন দক্ষ শ্রমিকেরও বড় অভাব বলে জানান মোরসেদ। এর জেরে দড়ির মানও কমেছে বলে জানান তিনি।

কী ভাবে তৈরি হয় পাটের দড়ি? আড়তদারদের কাছ থেকে পাটের গাঁট নিয়ে আসা হয়। তারপর সেই পাট পরিষ্কার করে সলতে পাকানোর মতো করে প্রাথমিক ভাবে দড়ি তৈরি হয়। তারপর বাঁশের কলের সাহায্যে দৈর্ঘ্য অনুসারে দ়ড়ি পাকানো হয়। কী রকম খরচ হয় পুরো প্রক্রিয়ায়? মোরসেদ জানান, সাধারণত ৯০ কিলোগ্রাম পাট থেকে ৫৬ কিলোগ্রামের মতো দড়ি তৈরি করা যায়।

সে ভাবে স্থানীয় কোনও বজার না থাকায় দড়ি বিক্রি করা হয় কলকাতার বড়বাজারে। শেষমেশ, লাভ হয় মোটে এক হাজার টাকার মতো। অথচ বছর খানেক আগেও লাভের অঙ্কটা বেশ ভালই ছিল। এখন পাটের দাম বেড়েছে। কোনও সরকারি সাহায্যও মেলে না বলে জানান দড়ির কারিগরেরা। এই অবস্থায় স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার করা ছাড়া আর উপায় থাকে না তাঁদের কাছে। অথচ এখনও পাটের দড়ি চাষের কাজে, খেজুর রস সংগ্রহ করার কাজে পাটের দড়ি ব্যবহার করা হয় বলে জানান স্থানীয় চাষি গোবর্ধন ঘোষ, গুড় ব্যবসায়ী কালীপদ মণ্ডলেরা।

দড়ি কারিগরদের আশঙ্কা, সরকারের উদ্যোগে ব্যাঙ্ক ঋণ ও প্রশিক্ষণ না দেওয়া হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে এই শিল্প। দাঁইহাটের পুরপ্রধান বিদ্যুৎ ভক্তের যদিও দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের নীতির জন্যই মার খাচ্ছে এই শিল্প। এই শিল্পের জন্য কেউ উদ্যোগ নিলে আমরা সাহায্য করবো।’’

specialstory jute rope
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy