ফাইল চিত্র।
বহিরঙ্গের প্রসাধন আড়ালে রাখছে ভিতরের অসুখকে। সেই অসুস্থতা নিয়ে কাজে নামতেই বিপদ-বিপত্তি জানান দিচ্ছে পদে পদে। তার পরেও রোগ না-সারিয়ে চটজলদি ওষুধের ভরসায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ আসছে উপর তলা থেকে। ময়নাগুড়িতে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পরে রেলের ভিতরের অব্যবস্থার এমন ছবিই ক্রমে ক্রমে প্রকট হচ্ছে।
গত নভেম্বরের পরে সারা দেশে ফের অধিকাংশ ট্রেনের পরিষেবা শুরু হলেও রেলের সুরক্ষা-প্রস্তুতির হাঁড়ির হাল এখন টের পাচ্ছেন কর্তারা। ময়নাগুড়ির দুর্ঘটনার পরেও প্রস্তুতির এমনই হাল যে, গত ১৮ জানুয়ারি আবহাওয়া এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আশঙ্কার কারণে ৩৮৫টি ট্রেন বাতিল করতে হয়েছিল। তার পরের দিন ১৯ জানুয়ারি বাতিল ট্রেনের সংখ্যা ছিল ৩৯২। বৃহস্পতিবার সংখ্যাটা আরও বেড়ে হয় ৪৩৭। সমস্যা সামাল দিতে বুধবার রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং অন্য কর্তারা দেশের সব জ়োনের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে জরুরি ভিডিয়ো বৈঠকে বসেন। সেখানে যাত্রী সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিতে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের কর্মীদের বিশেষ ভাবে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সজাগ থাকতে বলা হয়েছে ট্র্যাক, পয়েন্ট, সিগন্যাল, কোচ, লোকো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের। কোথাও কোনও রকম অস্বাভাবিকতা নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে বলা হয়েছে স্টেশন সুপার, ট্রেনচালক থেকে পয়েন্টসম্যান পর্যন্ত প্রত্যেককে। যাতে সামান্যতম দুর্ঘটনার আশঙ্কাও অনেক আগেই নির্মূল করা যায়।
এই তৎপরতাকে মোটের উপরে স্বাগত জানালেও রেল অফিসারদের একাংশের মতে, অতিমারিতে গত দু’বছরে অধিকাংশ ওয়ার্কশপ, লোকো শেড, রক্ষণাবেক্ষণের ইয়ার্ডে সেই অর্থে তেমন কাজই হয়নি। সংক্রমণের আশঙ্কায় প্রায়শই সরকারি নির্দেশ মেনে অর্ধেক বা কিছু ক্ষেত্রে তারও কম কর্মী নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। ওই ব্যবস্থায় অফিসের কাজ কোনও মতে সামাল দেওয়া গেলেও কোচ, রেললাইন, ইঞ্জিন, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ধাক্কা খেয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে পিরিয়ডিক ওভারহলিং বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়, তা সম্পূর্ণ করা যায়নি। ফলে কোথাও কোনও সমস্যা দেখলে ট্রেনের চলাচল বন্ধ রেখে এখন ফের পরীক্ষা করতে হচ্ছে। সেই জন্যই বহু গুরুত্বপূর্ণ রুটে বাতিল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে বলে রেল অফিসারদের একাংশের মত।
রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে আগাম অসুস্থতা বুঝতে ঘটা করে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা (প্রেডিক্টিভ মেন্টেন্যান্স) বললেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়িত করা যায়নি। ফলে রক্ষণাবেক্ষণে মান্ধাতার আমলের পদ্ধতির উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে রেলকে। কিন্তু কর্মীর অভাব এবং অতিমারি আবহে কাজ ঠিকমতো না-হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে রেলে বড়সড় ফাঁক তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। আসন্ন বাজেট এবং পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের আগে ফের কোনও বিপত্তি হলে মুখ পুড়বে রেলের, সেই আশঙ্কাতেই নজরদারির ক্ষেত্রে এই কড়াকড়ি বলে খবর।
ট্রেনচালকদের ইঞ্জিন পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি লোকো ইনস্পেক্টর, ওভারহেড কেব্ল, কোচ, সিগন্যাল-সহ সব বিভাগকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লাইনের পেট্রলিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা ঠিকমতো কাজ করছেন কি না, তা দেখতে তাঁদের উপরে জিপিএস ডিভাইস দিয়ে নজরদারি চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। পূর্ব রেলে শিয়ালদহ ডিভিশনের ওই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে আগেই। শীতের মরসুমে রেললাইনের ফাটল থেকে বিপত্তির আশঙ্কা থাকে। তা এড়াতেই এই কড়াকড়ি। রেল বোর্ডের তরফে সুরক্ষার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান এক রেলকর্তা। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সর্বাঙ্গীণ নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। যাতে সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোথাও কোনও ফাঁকফোকর থেকে না-যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy