Advertisement
E-Paper

মুকুল রায়ের ফ্লেক্সের পিছনে কি দিল্লির লাড্ডু? জোর জল্পনা

তৃণমূলের অন্দরেই কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, ওই ফ্লেক্স রাতারাতি লাগানোর পিছনে দিল্লি কা লাড্ডুর ভূমিকা রয়েছে।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩৮
পোস্টার: জলপাইগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র

পোস্টার: জলপাইগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র

রাতবিরেতে ফ্লেক্স পড়ে রাস্তার উপরে। কে দিয়েছে জানা যায় না। তেমনই কান পাতলেই শোনা যায় ‘দিল্লির লাড্ডু’র কথা। কে খেয়েছে জানা যায় না।

কিন্তু কে খাইয়েছে, তা পরিষ্কার। যেমন পরিষ্কার ফ্লেক্সের ছবিও। তাতে জ্বলজ্বল করছেন মুকুল রায়।

তৃণমূলের অন্দরেই কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, ওই ফ্লেক্স রাতারাতি লাগানোর পিছনে দিল্লি কা লাড্ডুর ভূমিকা রয়েছে। যাঁরা দিল্লির লাড্ডু খেয়েছেন, তাঁরাই ফ্লেক্স লাগিয়েছেন। তবে তৃণমূলের নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কেউ জড়িত নন। এমনকী, বিজেপির নামও কেউ কেউ তুলছেন।

কিন্তু কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, নজরুল মঞ্চে দলের সভায় যোগ দিতে এক রাজ্য নেতা ফোন করেছিলেন বানারহাটের যুব তৃণমূল নেতাকে। অনুগামীদের নিয়ে ওই যুব নেতা বুধবার নজরুল মঞ্চে অনুপস্থিত থেকেছেন। দলের অন্দরে চর্চা চলছে, ওই যুব নেতা ‘দিল্লির লাড্ডু’ খেয়ে ফেলেছেন।

দিল্লির লাড্ডুটা কী?

লক্ষ্মী পুজোর পর থেকে মুকুলবাবু দিল্লিতে। একাধিক নেতা এমনকী জনপ্রতিনিধিও উত্তরবঙ্গ থেকে দিল্লি গিয়ে দলের প্রাক্তন ওই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে খবর। বেশ কয়েকজন আবার ফোনেও যোগাযোগ রাখছেন। মুকুলবাবু বা তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে সেই যোগাযোগ রাখাকেই তৃণমূলের অন্দরে ‘দিল্লির লাড্ডু’ খাওয়া বলা হচ্ছে।

যেমন কোচবিহারের জেলা পরিষদের তিন সদস্য ‘দিল্লির লাড্ডু’ পেয়েছেন বলে দলে আলোচনা চলছে। আলিপুরদুয়ারের এক আইনজীবী নেতার কাছে লোক মারফত ‘দিল্লির লাড্ডু’ পৌঁছেছে বলে খবর। নাম গোপন রাখার শর্তে দলের জেলা নেতৃত্বের বিরোধ করা সেই নেতা বললেন, ‘‘হুগলির এক পরিচিত নেতা ফোন করেছিলেন। তিনিই হঠাৎ মুকুলদাকে ফোন ধরিয়ে দেন। দীর্ঘ দিনের পরিচয়। স্বাভাবিক কথাবার্তাই হয়েছে। দেওয়ালির শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে।’’

শুধু বিক্ষুব্ধ নেতাই নন, দলের জেলা কমিটিতে বেশ ওজনদার পদে রয়েছেন, এমন কয়েকজনের সঙ্গেও মুকুলবাবুর নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ চলছে বলে খবর। মুকুলবাবুর ফ্লেক্স কোথায় টাঙানো হবে, কারা টাঙাবে এবং তার টাকার ব্যবস্থাও সেই নেতাই করে দিয়েছে বলে খবর।

আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তথা জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী অবশ্য জোর গলায় দাবি করেছেন, ‘‘দুই জেলার কোনও নেতা-কর্মী তৃণমূলের বাইরে অন্য কোন দল বা ব্যক্তির কথা ভাবছেন না, যোগাযোগও রাখছে না।’’

কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিরোধী গোষ্ঠীর বলে পরিচিত এক নেতাও তৃণমূল নেতাদের নজরে রয়েছেন। জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে তিনিই মুকুলবাবুর কথা বলিয়ে দেন বলে দাবি।

শুধু তাই নয়, লক্ষ্মীপুজো থেকে কালীপুজো, আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের এই সময়টা জুড়ে তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকজন নেতা-নেত্রী দিল্লি গিয়ে দেখা করেছেন মুকুল রায়ের সঙ্গে। এমনটাই দাবি মুকুল শিবিরের। কারও ডাক এসেছিল দিল্লি থেকে, কেউ বা নিজেই গিয়েছিলেন। তৃণমূলের অন্তত ৪০ জন নেতা-জনপ্রতিনিধির দিল্লি যাতায়াত করা-থাকা খাওয়ার খরচ জুগিয়েছেন মুকুল অনুগামীরাই। তবে কোচবিহারের সংগঠনে মুকুলবাবু কোনও ‘ফ্যাক্টর’ হবে না বলে দাবি করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি রবিবাবু। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম সারির কোনও নেতা তো দূরের কথা, একজন সক্রিয় কর্মীও মুকুলবাবুর সঙ্গে নেই।’’

আবার জলপাইগুড়ি জেলার এক সময়ের বেশ প্রভাবশালী এক নেতা পুজোর পরে সপরিবারে গিয়েছিলেন উত্তর ভারত ভ্রমণে। দিল্লি হয়ে ফেরার সময়ে পরিবারের সদস্যদেরও জানতে না দিয়ে আধ ঘণ্টার জন্য মুকুলবাবুর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। পরে অবশ্য সেই খবর তৃণমূলের অন্দরে জানাজানি হয়ে যায়। বলাবলি শুরু হয়, ওই নেতা দিল্লির লাড্ডু খেয়েছেন।

তবে জলপাইগুড়ির প্রবীণ তৃণমূল নেতা কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর দাবি, ‘‘তৃণমূল ছেড়ে অন্য কোনও দলে কেন নেতা-কর্মীরা যাবে সেটাই বোধগম্য নয়। কেউ কেউ গুজব রটিয়ে নানা ফায়দা তুলতে চাইছে।’’ অথচ, জলপাইগুড়ির একাধিক নেতার সঙ্গে মুকুলবাবু নিজেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন বলে জানা গিয়েছে। দলের এক প্রাক্তন জেলা সভাপতির সঙ্গেও মুকুলবাবুর কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে বলেও দাবি। তৃণমূলের জেলা কমিটিতে থাকা ডুয়ার্সের এক নেতাকে যেমন বিমানে করে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

এ বার প্রশ্ন, দিল্লির লাড্ডু কি সত্যিই মিষ্টি, না কি তেতো।

Mukul Roy Flex BJP TMC Controversy মুকুল রায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy