আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের জন্য আমেরিকার দরজা বন্ধ! মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। অতীতেও অনেক দেশের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ আরোপ করেছে আমেরিকা। কোনও দেশের ক্ষেত্রে আংশিক, আবার কোনও দেশের জন্য পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে।
ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে আগামী বছর পয়লা জানুয়ারি থেকে আমেরিকায় ঢুকতে পারবেন না বুরকিনা ফাসো, নাইজার, মালি, দক্ষিণ সুদান এবং সিরিয়ার বাসিন্দারা। এ ছাড়া, লাওস এবং সিয়েরা লিওনের মতো দেশগুলির জন্য আগে আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন ট্রাম্প। তবে এ বার ওই দুই দেশকে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় জোড়া হল। তবে নতুন ঘোষণাপত্রেও কয়েক ক্ষেত্রে ছাড়ের কথা বলা হয়েছে।
ট্রাম্পের নয়া ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা, ক্রীড়াবিদ, কূটনীতিকদের মতো নির্দিষ্ট ভিসাপ্রাপকদের নিষেধাজ্ঞার তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। নতুন ঘোষণার ফলে আমেরিকায় ঢোকা পুরোপুরি বন্ধ হল ১৯টি দেশের জন্য। গত জুনে ১২টি দেশের উপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। সেই দেশগুলি হল— আফগানিস্তান, মায়ানমার, চাদ, রিপাবলিক অফ কঙ্গো, ইকিউটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন।
আরও পড়ুন:
এ ছাড়া, প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে আংশিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল বুরুন্ডি, কিউবা, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের উপর। তবে নতুন ঘোষণাপত্রে জানানো হয়েছে, তুর্কমেনিস্তানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছেন ট্রাম্প।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম দফায় সাতটি ‘মুসলমানপ্রধান দেশের’ উপর একই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়ার মতো দেশও। তবে বিতর্কের মুখে মুসলমানপ্রধান নয়, এমন দু’টি দেশকে (উত্তর কোরিয়া এবং ভেনেজুয়েলা) ওই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেন ট্রাম্প। ২০১৮ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞাকে বহাল রাখে। পরে অবশ্য জো বাইডেন প্রশাসন ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে আবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটছেন ট্রাম্প।
দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসার পরই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’! অর্থাৎ, আগে আমেরিকা এবং দেশের বাসিন্দাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করা হবে। তার পরে ভাবা হবে অন্য দেশের কথা। সেই কারণে আমেরিকার অভিবাসন নীতি বদল করা হয়। খুঁজে খুঁজে আমেরিকায় থাকা অবৈধ অভিবাসীদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছেন। এ ছাড়াও, কড়া শুল্কনীতিও নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানান, আমেরিকার স্বার্থবিরোধী এমন কিছুর সঙ্গে আপস করা হবে না। সেই কারণে যে দেশ আমেরিকান পণ্যের উপর যত শতাংশ শুল্ক নেয়, সেই দেশের উপর তেমন হারেই পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। কড়াকড়ি করা হয় ভিসানীতিতেও।
আমেরিকার প্রশাসন সূত্রে খবর, সে দেশে প্রবেশের জন্য বেশ কিছু ‘মানদণ্ড’ স্থির করা হয়েছে। যাদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হচ্ছে, তাদের অনেকেই সেই ‘মানদণ্ড’ মানতে ব্যর্থ। এই দেশগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটিতে নাগরিকদের বৈধ পরিচয়পত্র দেওয়ার মতো কোনও নির্বাচিত সরকারই নেই। কিছু দেশে আবার পরিচয়পত্র দেওয়া নিয়ে জালিয়াতি হয়, বলছে ট্রাম্প প্রশাসন। আরও অভিযোগ, ওই দেশগুলির কিছু নাগরিক আমেরিকায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব কেনেন। তার পরে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।