শুক্রবার দমদম সেন্ট্রাল জেল ময়দানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা। কিন্তু যে মাঠকে প্রধানমন্ত্রী সভাস্থলের হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে, জলকাদায় এতই বিপর্যস্ত চেহারা তার যে, আর্থমুভার, পেলোডার, রোলার নিয়ে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আসরে নামতে হয়েছে বঙ্গ বিজেপিকে।
আগামী ২২ অগস্ট কলকাতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে দিন এসে তিনটি নতুন মেট্রোপথের উদ্বোধন করবেন তিনি। পাশাপাশি, দমদমের সেন্ট্রাল জেল ময়দানে একটি প্রশাসনিক এবং একটি রাজনৈতিক সভাও করার কথা আছে তাঁর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আগমনের দেড় দিন আগেও মাঠের যা পরিস্থিতি, তাতে উদ্বেগে থাকতেই হচ্ছে আয়োজকদের। যদিও বিজেপি নেতারা মুখে অন্তত উদ্বেগের কথা বলছেন না, ‘আত্মবিশ্বাস’ দেখানোর চেষ্টা করছেন।
বুধবার বিজেপির কলকাতা উত্তর শহরতলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি চণ্ডীচরণ রায় জানান, শুক্রবারের সভার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। তবে টানা বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাঠের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা। চার দিকে কাদা জমে আছে। চণ্ডীচরণ বলেন, “বৃষ্টির কারণে মাঠ জলমগ্ন ছিল। আড়াই দিন লাগে মাঠের জল বার করতে। পাম্পের সাহায্যে সেই জল বার করা হয়। জল থাকার কারণে মাঠে প্রচুর সাপও ছিল। জল বার করায় বেশ কিছু সাপ বেরিয়ে গিয়েছে। তবে মাঠে সভা চলাকালীন যাতে সাপের উপদ্রব না হয়, সেই কথা মাথায় রেখে মাঠের চারদিকে ভাল করে কার্বলিক অ্যাসিড ছড়ানো হয়েছে। ঝোপঝাড়ও কাটা হয়েছে।”
চণ্ডীচরণ আরও জানান, পুরো মাঠ কাদা ভর্তি থাকায় সাদা বালি ফেলা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে সাদা বালি না পাওয়ায়, বাকি জায়গাগুলিতে হলুদ বালি ফেলা হয়েছে। কোথাও কোথাও সুরকিও ফেলা হয়েছে। তার উপরে রোলার চালিয়ে মাঠ সমান করা হয়েছে।
— নিজস্ব চিত্র।
মাঠে দু’টি সভাস্থল তৈরি করা হয়েছে। প্রশাসনিক সভার জন্য মাঠের এক কোনায় ছোট করে একটি মঞ্চ এবং ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। বাকি পুরো মাঠ জুড়ে রাজনৈতিক মঞ্চ এবং দর্শকদের বসার জন্য তিনটি হ্যাঙার। শুক্রবারও বৃষ্টি হতে পারে। তাই আগেভাগে তার মোকাবিলার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। জল যাতে মাঠে না জমে, তার জন্য দুই সভাস্থলের মাঝখানে জল বার করার চ্যানেল তৈরি রাখা হচ্ছে।
সভাস্থল সময়মতো সাজিয়ে তুলতে গত কয়েক দিন ধরে রোজ সারা দিনরাত কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাঁরা আসবেন, তাঁদের বসার জন্য নির্দিষ্ট যে জায়গা, হ্যাঙারে ঢাকা সেই অংশও কাদায় মাখামাখি। তাই সরাসরি চেয়ার বসানো হচ্ছে না। লোহার ফ্রেমের উপর মোটা প্লাইউড লাগিয়ে পাটাতন তৈরি করা হয়েছে। সেই সব পাটাতন গোটা সভাস্থল জুড়ে বসিয়ে মাঠের কাদা ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। তার উপরে চেয়ার রাখা হবে। প্রশাসনিক সভার জন্য একটি হ্যাঙার এবং রাজনৈতিক সভার জন্য তিনটি হ্যাঙার লাগানো হয়েছে। প্রশাসনিক সভা এবং রাজনৈতিক সভা দুই মঞ্চের জায়গাতেই মাটি এবং বালি ফেলে জায়গাগুলিকে প্রথমে সমান করা হয়েছে। এর পর ফ্লাইঅ্যাশের পেভার ব্লক বসানো হয়েছে। তার উপরে মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে।
বিজেপি জেলা সভাপতির অভিযোগ, “দমদমের এ রকম জনবহুল এলাকায় এত বড় একটা মাঠ রয়েছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। ঠিক মতো যত্ন নেওয়া হলে মাঠটি এ ভাবে জলে ডুবে থাকত না। ব্যবহারের অযোগ্য পরিস্থিতি হত না। সারা বছর এখানে খেলাধুলো চালানো যেত। অযত্নে অবহেলায় ফেলে রাখা হয় বলেই আজকে প্রধানমন্ত্রীর সভার আগে এই মাঠটি ঠিকঠাক করতে এত কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে।”
নিরাপত্তার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য দফায় দফায় মাঠে ঘুরে দেখছেন বিভিন্ন উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারাও দফায় দফায় প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যাচ্ছেন।