—ফাইল চিত্র।
ধরা যাক, একটি ছুরির দু’দিক দিয়ে কাটা যায়। সেই ছুরির এক প্রান্তে রয়েছেন আন্দোলনকারীরা, আর অন্য প্রান্তে রয়েছেন চাকরিপ্রাপকেরা। সেই ভাবে দেখলে আন্দোলনকারীরা যে প্রান্তে রয়েছেন, সে দিকের ধার অনেক বেশি। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার পর্যবেক্ষণে এমনটাই জানাল কলকাতা হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, আন্দোলনকারীরা চাকরিপ্রাপকদের থেকেও বেশি গরিব। তাঁরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। যাঁরা রাস্তায় বসে রয়েছেন, যাঁদের চাকরি নেই, তাঁদের কথাও বিপক্ষের আইনজীবীদের ভাবার পরামর্শ দিলেন বিচারপতিরা।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত মামলার শুনানি ছ’মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ মেনেই শুনানি হচ্ছে উচ্চ আদালতের বিশেষ বেঞ্চে। বুধবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ওই বেঞ্চে গ্রুপ ডি-র পদে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি মামলার শুনানি চলছিল। সেই মামলায় চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্রের বক্তব্য, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সব চেয়ে নীচের স্তরে রয়েছেন গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রাপকেরা। তাঁরা অর্থনৈতিক ভাবে সব চেয়ে দুর্বল। উপরতলার আধিকারিকদের দুর্নীতির দায় তাঁদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। চাকরিপ্রাপকদের আরও দুই আইনজীবী উৎকর্ষ কৌশিক এবং মুকুল লাহিড়ির বক্তব্য, গ্রুপ ডির কর্মীরা দীর্ঘ দিন ধরে দায়িত্ব সহকারে কাজ করে এসেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক উদ্দেশে এই তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় তাঁরা কত দিন মামলা চালিয়ে যেতে পারবেন, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা।
এর প্রেক্ষিতে বিচারপতির পাল্টা বক্তব্য, আন্দোলনকারীরা ছুরির যে প্রান্তে রয়েছেন, তার ধার অনেক বেশি। বিচারপতি বসাকের যুক্তি, গ্রুপ ডি-র কর্মীরা তো তবু চাকরি করছেন। বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু যাঁরা রাস্তায় বসে রয়েছেন, তাঁদের কথাও ভাবা দরকার।
এই মামলায় এসএসসির এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবীরা। অনিন্দ্যের বক্তব্য, নিয়োগপত্র পাওয়ার পর স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) কোনও এক্তিয়ারই নেই তা প্রত্যাহার করার। নিয়োগপত্র পাওয়ার পরেই সুপারিশপত্রের অস্তিত্ব নষ্ট হয়। অনিন্দ্য প্রশ্ন তোলেন, কোন যুক্তিতে সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করে এসএসসি? আর কোন যুক্তিতে তা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয় আদালত?
তার প্রেক্ষিতে বিচারপতি বসাক চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, এসএসসি সুপারিশ করলেই কি রাজ্য নিয়োগপত্র দিতে বাধ্য? জবাবে অনিন্দ্য বলেন, ‘‘না, তা বাধ্যতামূলক নয়। তবে সাধারণত তা-ই হয়ে থাকে। আর যদি নিয়োগ না করা হয়, তা হলে তার কারণ জানিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।’’ তার প্রেক্ষিতে বিচারপতির স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেই নিয়োগপত্র পাওয়ার অধিকার জন্মায় না। কিন্তু যে সিদ্ধান্তই বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলি নিক না কেন, সেটা স্বচ্ছ ভাবে আইন মেনে হতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy