E-Paper

প্রসূতি-মৃত্যুর হারে চিন্তা, স্যালাইন ব্যবহারে নির্দেশিকা জারি রাজ্যে

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এক প্রসূতির মৃত্যু এবং কয়েক জনের অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইনের দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৬
২০২৪-২০২৫ আর্থিক বর্ষে (এপ্রিল ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫) রাজ্যের ছ’টি জেলায় সব থেকে বেশি প্রসূতি-মৃত্যু হয়েছিল।

২০২৪-২০২৫ আর্থিক বর্ষে (এপ্রিল ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫) রাজ্যের ছ’টি জেলায় সব থেকে বেশি প্রসূতি-মৃত্যু হয়েছিল। —প্রতীকী চিত্র।

প্রসূতি-মৃত্যুর হার কমাতে এ বার ‘ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট’ বা স্যালাইন ব্যবহারে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। মেডিক্যাল কলেজ, জেলা, মহকুমা, গ্রামীণ, ব্লক, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র-সহ সর্বত্র এই নির্দেশিকা মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।রাজ্যে ‘মেটারনাল মর্টালিটি রেশিয়ো’ (এমএমআর) এখনও ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি এক লক্ষ জীবিত সন্তান প্রসবের নিরিখে এই আনুপাতিক হিসাব রাখা হয়। ২০২৪-২০২৫ আর্থিক বর্ষে (এপ্রিল ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫) রাজ্যের ছ’টি জেলায় সব থেকে বেশি প্রসূতি-মৃত্যু হয়েছিল। প্রসবের পরে আচমকা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া এবং মৃত্যু কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা দেখতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলায় প্রসূতি-মৃত্যুর অডিটের রিপোর্ট খতিয়ে দেখেন ওই কমিটির সদস্যেরা। তাঁদের সুপারিশ মতো অস্ত্রোপচারের (সিজ়ার) আগে এবং পরে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করল স্বাস্থ্য দফতর।

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এক প্রসূতির মৃত্যু এবং কয়েক জনের অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইনের দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল। ওই ঘটনার তদন্তে গঠিত স্বাস্থ্য দফতরের কমিটিও তাদের রিপোর্টে স্যালাইনের ব্যবহার ঠিক মতো না হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল বলেই সূত্রের খবর। পরবর্তী সময়েও যে সমস্ত প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে, তাতেও ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে সমস্যা রয়েছে বলে উঠে এসেছিল অডিটে। সম্প্রতি জারি করা নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে, স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক, অ্যানাস্থেটিস্ট, নার্স— সকলকেই এই ‘ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট’ নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে।

তবে সরকারি হাসপাতালে যে স্যালাইন ব্যবহার করা হচ্ছে, তার গুণগত মান আদৌ ঠিক থাকছে কিনা, তা খতিয়ে দেখায় জোর দেওয়ার দাবি করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের কথায়, ‘‘শুধু নির্দেশিকা জারি করেই হবে না। স্যালাইনের গুণগত মান ঠিক না থাকলে আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে।’’ যদিও স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, প্রতি মাসেই কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্ট অনুযায়ী গুণগত মানের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ সমস্ত ওষুধের ব্যাচ নম্বর উল্লেখ করে তা ব্যবহার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সিজ়ারের সময়ে প্রসূতির শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী কী ধরনের স্যালাইন ও তরল (ফ্লুইড) ব্যবহার করতে হবে, তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে নির্দেশিকায়। আবার সিজ়ারের পরে কোন স্যালাইন কতটা মাত্রায়, কত ক্ষণ ধরে দিতে হবে, তা-ও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় আক্রান্ত প্রসূতিদের ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ ও সেপসিসের সমস্যা বেশি মাত্রায় দেখা যায় বলেও পর্যবেক্ষণ বিশেষজ্ঞ কমিটির। সে ক্ষেত্রে স্যালাইনের ব্যবহার খুব সতর্কতার সঙ্গে করার কথাও জানানো হয়েছে। প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ হলে অথবা আগে থেকেই কিডনি ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত থাকলে সে ক্ষেত্রেও স্যালাইন এবং অন্যান্য তরল ব্যবহারে সতর্ক হতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সিজ়ারের পরে নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রত্যেক প্রসূতির রক্তচাপ, নাড়ির গতি, রেসপিরেটরি রেট, অক্সিজেনের মাত্রা, প্রস্রাবের পরিমাণ, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, কিডনির কার্যক্ষমতা-সহ বিভিন্ন শারীরিক অবস্থার তালিকাও পূরণ করতে বলা হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Saline Saline Controversy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy